চোখের জলে সুরসম্রাজ্ঞীকে বিদায়
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: সম্পন্ন হলো সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকরের শেষকৃত্য। রবিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) মুম্বাইয়ের শিবাজি পার্কে সন্ধ্যায় পূর্ণ মর্যাদায় তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। গান ও চোখের জলের মধ্য দিয়ে সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকরকে শেষ বিদায় জানানো হলো। ৯২ বছর বয়সী এই তারকার শেষকৃত্যের সময় বাজানো হয়েছিলো লতার গাওয়া ‘মুঝে ভুলা না পাওগে’ গানটি।
শেষকৃত্যে আগে শিবাজি পার্কে ভারতরত্নকে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের মতো বিশিষ্ট রাজনীতিবিদরা। শাহরুখ খান, শচীন তেন্ডুলকর, আমির খান, রণবীর কাপুর, জাভেদ আখতার, শ্রদ্ধা কাপুরদের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রের তারকাদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন গুণমুগ্ধরাও।
জানুয়ারির শুরুতেই করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে লতার। তারপর গত ৯ জানুয়ারি মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। করোনা কাটিয়ে উঠলেও ৯২ বছর বয়সে কোভিড পরবর্তী অসুস্থতার ধাক্কা সামলাতে পারলেন না এই কিংবদন্তি।
১৯২৯ সালে ইন্দোরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন লতা। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে লতা মঙ্গেশকর ছিলেন সবচেয়ে বড়। তাঁর বাবা পণ্ডিত দীনানাথ মঙ্গেশকর মরাঠি ও কোঙ্কিণী সংগীত শিল্পী ছিলেন, পাশাপাশি অভিনয়ও করতেন। ছোটবেলায় বাড়িতে কে এল সায়গল ছাড়া আর কোনও ছবির গান গওয়ার অনুমতি ছিল না। গায়িকা নয় মাত্র ১৩ বছর বয়সে অভিনেত্রী হিসাবে কাজ করেছিলেন লতা মঙ্গেশকর। সেইসময় বাবাকে হারান গায়িকা, পাঁচ ভাই-বোনের কথা ভেবে ওই বয়সেই হাল ধরেন সংসারের।
১৯৪২ সালে একটি মারাঠি ছবির সৌজন্যে প্রথম গান রেকর্ড করেন তিনি। পরের বছর মরাঠি ছবি ‘গাজাভাউ’-এর জন্য ‘মাতা এক সুপুত কি দুনিয়া বদল দে তু’ গানটি রেকর্ড করেন লতা মঙ্গেশকর, এটি ছিল তাঁর প্রথম হিন্দি গান। এরপর লতার মুম্বাইয়ে আসা, এবং ওস্তাদ আমান আলি খানের কাছে ধ্রুপদী গানের তালিম পর্ব শুরু। এরপর ধীরে ধীরে বলিউডে পায়ের নীচের মাটি শক্ত করতে শুরু করেন লতা মঙ্গেশকর। যদিও চ্যালেঞ্জের মুখে পদে পদে পড়েছিলেন লতা। প্রযোজক শশধর মুখোপাধ্যায় ‘শহীদ’ ছবিতে লতাকে দিয়ে গান গাওয়াতে রাজি হননি, সংগীত পরিচালক গুলাম হায়দারকে তিনি বলেছিলেন, ‘মেয়েটার গলাটা বড্ড সুরু’। মিউজিক ডিরেক্টর গুলাম হায়দার পালটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলেছিলেন, আগামী দিনে এই মেয়েকে দিয়ে গান গাওয়াতে পায়ে ধরবে গোটা বলিউড। এরপর তাঁর হাত ধরেই বলিউডে প্রথম বড় ব্রেক পান লতা। মজবুর (১৯৪৮) ছবির ‘দিল মেরা তোড়া, মুঝে কাহিন কা না ছোড়া’ গানটি রেকর্ড করেন লতা। শিল্পীর কথায়, ‘গুলাম হায়দার আমার গডফাদার’। শুরুর দিকে লতার গায়েকিতে নূর জাহানের ছাপ খুঁজে পেয়েছেন অনেকে, তবে দ্রুত তা কাটিয়ে উঠে নিজস্ব স্টাইল তৈরি করেছিলেন সুরসম্রাজ্ঞী।
অনিল বিশ্বাস, এসডি বর্মন, সলিল চৌধুরীর মতো সংগীত পরিচালকদের পছন্দের গায়িকা ছিলেন লতা, অনেকেই হয়ত জানেন না আরডি বর্মনের কেরিয়ারের প্রথম ও শেষ গানটি লতার কন্ঠে রেকর্ড করা।
নতুন শতাব্দীতে গানের জগত থেকে নিজেকে অনেকটাই গুটিয়ে নিয়েছিলেন লতা, তবুও ‘বীর জারা’, ‘রং দে বসান্তি’র মতো ছবির অ্যালবামের শোভা বাড়িয়েছে তাঁর সুমধুর কন্ঠ। ২০১৯ সালে ভারতীয় আর্মিকে শ্রদ্ধার্ঘ্য দেন লতা, রেকর্ড করেন ‘তেরি মিট্টি কি সওগন্ধ’, এটিই লতা মঙ্গেশকরের রেকর্ড করা শেষ গান।
লতা মঙ্গেশকরের বিখ্যাত গানের তালিকা অগুনতি, ‘অ্যায় মেরে বতন কে লোগো’, ‘লাগ জা গলে, ‘চলতে চলতে’, ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’- এই তালিকা শেষ হওয়ার নয়।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২)