দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেছেন, বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোকে সরকার দলীয় অপপ্রচারের কাজে ব্যবহার করেছে।

ওয়াশিংটন-ব্রাসেলসসহ কয়েকটি দূতাবাসের সাম্প্রতিক অপেশাদার কর্মকাণ্ড নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এই অভিযোগ করেন। বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

গত ৩১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেশনাল কমিটির চেয়ারম্যান গ্রেগোরি ডব্লিউ মিকসের নিউইয়র্কের কুইন্স এলাকায় তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্য ‘বিকৃত’ ব্যাখ্যা দিয়ে ওয়াশিংটন দূতাবাসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘তার (গ্রেগরি মিকস) বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে ধূমজাল সৃষ্টি করে শুধু সচেতন মানুষের সঙ্গেই প্রতারণা করেনি, ওয়াশিংটন দূতাবাস বাংলাদেশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে চরমভাবে হেয় প্রতিপন্ন করেছে। কারণ আপনারা সবাই জানেন, এরইমধ্যে কংগ্রেসম্যান মিকস নিজেই গত ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ দূতাবাসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিকে নাকচ করে, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, তার নিজস্ব ওয়েবসাইট এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির ওয়েবসাইটে বক্তব্য তুলে ধরেছেন।’

‘মার্কিন হাউজ অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে তিনি সুস্পষ্টভাবে র‌্যাব ও তার বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তাদের ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য বাইডেন প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে আমি দৃঢ়ভাবে সমর্থন করি। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক দৃঢ় করা আমি সবসময় সমর্থন করব। আগামী নির্বাচন অবাধ ও তার সুষ্ঠু নিশ্চিতকরণসহ বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সাহায্য করার জন্য কাজ করব।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পৃথিবীর দেশে দেশে বাংলাদেশের স্বার্থ সুরক্ষা দেওয়াই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সকল দূতাবাসের দায়িত্ব। অথচ কি নির্লজ্জ ও অপেশাদার উপায়ে সেই প্রতিষ্ঠানকেও দলীয়করণ করে জনগণের স্বার্থ বিরোধী কাজে লাগানো হচ্ছে, মিথ্যাচার ও প্রতারণা কাজে লাগানো হচ্ছে।’

বেলজিয়াম দূতাবাসের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত একটি বেসরকারি সংবাদ সম্মেলনের সূত্র ধরে সেখানে অবস্থিত দূতাবাসের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। দূতাবাসের ওয়েবসাইটে সেই প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি এখনো আছে। যেখানে সুস্পষ্টভাবে আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় কর্মীর মতো বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, যা দূতাবাসকে রাষ্ট্রের বদলে আওয়ামী লীগের প্রচার প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার প্রমাণ।’

‘বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশি একাডেমিশিয়ান, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মীরা যখন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি, নির্বাচনের অনিয়ম, জনগণের ভোটাধিকার ইত্যাদি বিষয়ে সামগ্রিক হতাশাজনক পরিস্থিতি জনগণের সামনে অথবা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে বই অথবা প্রচারপত্র বা আলোচনার উদ্যোগ নেন তখনই এই সরকার তার বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বাহিনীর শক্তিকে ব্যবহার করে, তার নিজস্ব বাহিনীকে ব্যবহার করে এসব অপকর্মকে ঢাকার প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে ওয়াশিংটন ও ব্রাসেলসসহ বিভিন্ন দূতাবাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ডে আবারো এটাই প্রমাণিত হলো।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় ওয়াশিংটনস্থ দূতাবাসের ওয়েবসাইট ভিজিট করে দেখা গেছে যে, ৩১ জানুয়ারি কংগ্রেসম্যান মিকসের সংশ্লিষ্ট প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি তুলে নেওয়া হলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে সেই প্রেস রিলিজটি এখনো আছে। এটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দলীয়করণের নির্লজ্জ প্রমাণের ডিজিটাল ডকুমেন্ট।’

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২)