দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসতে সিলেট সার্কিট হাউজে পৌঁছেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যের পদত্যাগ ছাড়াও বেশকিছু দাবি শিক্ষামন্ত্রীর কাছে তুলে ধরবেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলে থাকা সদস্যরা।

শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর আড়াইটার দিকে শিক্ষার্থীদের ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল গিয়ে পৌঁছায় সিলেট সার্কিট হাউজে। শিক্ষামন্ত্রী সিলেটে পৌঁছানোর পর সেখানেই অবস্থান করছেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আবেদীন বিকেল পৌনে ৩টার দিকে বলেন, কিছুক্ষণ আগে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে সার্কিট হাউজে এসেছি। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরব।

শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কী কী দাবি তুলে ধরা হবে— জানতে চাইলে শাহরিয়ার বলেন, আমাদের প্রধান দাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ। এছাড়া ক্লাস-পরীক্ষা চালু, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার, যাদের মোবাইল অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সেগুলো চালু করা— এসব দাবির কথাও আমরা তুলে ধরব।

শিক্ষার্থীরা বলেন, সজল কুন্ডুকে এককালীন আর্থিক সহযোগিতা প্রদান এবং ৯ম গ্রেডে চাকরি নিশ্চিত করার দাবি রয়েছে তাদের। শাবিপ্রবির সাবেক শিক্ষক ড. জাফর ইকবাল ও ড. ইয়াসমিন হককে ইমেরিটাস অধ্যাপক সম্মাননা প্রদানের দাবিও জানাবেন তারা। পাশাপাশি শাবিপ্রবিসহ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে বাজেট বাড়ানো, পরীক্ষা পদ্ধতিতে কোডিং সিস্টেম কার্যকর করা, শিক্ষক নিয়োগে পিএইচডি ডিগ্রির বাধ্যবাধকতা ও ডেমো ক্লাসের ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া কার্যকরের মতো দাবিগুলোও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে তুলে ধরবেন শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলে রয়েছেন— মুহাইমিনুল বাশার রাজ (ফিজিক্স), ইয়াসির সরকার (ফিজিক্স), নাফিসা আনজুম (লোকপ্রশাসন), সাব্বির আহমেদ (লোকপ্রাশাসন), আশিক হোসাইন মারুফ (ওশেনোগ্রাফি), সাবরিনা শাহরিন রশীদ (ফিজিক্স), সুদীপ্ত ভাস্কর (ফিজিক্স), শাহরিয়ার আবেদীন (ফিজিক্স), আমেনা বেগম (সিভিল), মীর রানা (অর্থনীতি) ও জাহিদুল ইসলাম অপূর্ব।

এর আগে, শাবিপ্রবিতে চলমান সংকট নিরসন করতে শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে সিলেটে পৌঁছান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এরপর সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। রাতেই শিক্ষামন্ত্রীর ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।

জানা গেছে, সার্কিট হাউজে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা করে তাদের সঙ্গে শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে যাবেন শিক্ষামন্ত্রী। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তিনি ক্যাম্পাসে অবস্থান করবেন এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন ক্রিয়াশীল সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। পরে রাত ৮টা ২০ মিনিটের ফ্লাইটে সিলেট থেকে ঢাকার পথে রওনা দেবেন শিক্ষামন্ত্রী।

শাবিপ্রবির চলমান অচলাবস্থার নেপথ্যে রয়েছে বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন। ১৩ জানুয়ারি রাতে ওই হলের নারী শিক্ষার্থীরা প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের কর্মীরা ছাত্রীদের আন্দোলনে হামলা চালান। আগের দাবিসহ হামলার প্রতিবাদে আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। ১৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ।

রাতেই অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস ও হল বন্ধ করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ওই সময় থেকেই উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে গত ১৯ জানুয়ারি বিকেলে অনশন শুরু করেন শাবিপ্রবির ২০ শিক্ষার্থী। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে যোগ দেন আরও আট জন। অনশনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২০ জন গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও অনশন ভাঙেননি।

২৬ জানুয়ারি অনশনের অষ্টম দিনের মাথায় শাবিপ্রবির সাবেক শিক্ষক ড. জাফর ইকবাল ও ড. ইয়াসমিন হক উপস্থিত হন শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে। শিক্ষার্থীদের দাবিপূরণের নিশ্চিত আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা অনশন ভাঙেন। কিন্তু এরপর দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও শিক্ষার্থীদের সে দাবি পূরণ হয়নি। এবারে সংকট নিরসনে শিক্ষামন্ত্রীকে উপস্থিত হতে হলো সিলেটে।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২)