দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে যোগ্য ব্যক্তি খুঁজে নিতে সার্চ কমিটির সঙ্গে বৈঠক শেষে কোনো রাজনৈতিক দলের সুবিধাভোগী ব্যক্তিকে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন  বিশিষ্টজনেরা।

আজ শনিবার বেলা ১১টায় সুপ্রিম কোর্ট ভবনের জাজেজ লাউঞ্জে ১ম দফা বৈঠকে বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে বসেন সার্চ কমিটির সদস্যরা।

বৈঠকে যোগ দেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ এফ এম হাসান আরিফ, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ফিদা এম কামাল, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, প্রবীণ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রোকনউদ্দিন মাহমুদ, সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহদীন মালিক, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ কামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান ও অধ্যাপক আসিফ নজরুল, এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক মাহফুজা খানম, বেসরকারি সংস্থা ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুর্শিদ ও ফেয়ার ইলেকশন মনটরিং অ্যালায়েন্স (ফেমা) সভাপতি মুনিরা খান।

আর সার্চ কমিটির সভাপতি বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ সদস্য বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহাহিসাব নিয়ন্ত্রক ও নিরীক্ষক (সিএজি) মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক বৈঠকে অংশ নেন।

বৈঠকে নির্বাচন কমিশনাররা সৎ, যোগ্য ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যাতে বিশ্বাসী হন সে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে অংশগ্রহণমূলক এবং নির্দিষ্ট কোনও একটি পেশার প্রতি বেশি গুরত্ব না দেওয়ার কথাও বলেন তারা।

এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক মাহফুজা খানম বলেন, মতামত দেয়া হয়েছে যে, যারা আসবেন দায়িত্বে, তারা যেন সৎ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হন।

অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, যারা আসবেন দায়িত্বে, তারা যেন বিশেষ সুবিধাভোগী না হন। সুবিধাভোগী বলতে, যারা কর্মক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধাভোগী না হন। এবং কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষপাতী ও কারও পক্ষে কাজ করেছেন, এমন না হন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য মাকসুদ কামাল জানান, যাদের নাম দেওয়া হবে তারা যেন সৎ ও যোগাযোগে দক্ষ সেই সঙ্গে ফিল্ডে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তাদের নিতে হবে। সরাসরি কেনো রাজনৈতিক দলের সমর্থন করে এমন কাউকে দেয়া যাবে না। তারা যেন দায়িত্ব নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দায়িত্ব পালন করেন। পুরো প্রক্রিয়া যেন বিতর্কিত না হয়। সার্চ কমিটির ওপর আস্থা রয়েছে।

সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান বলেন, সৎ, যোগ্য, বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকা ব্যক্তিরা যেন দায়িত্ব পান। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের কাউকে নেওয়া যাবে না।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার জানানম যারা কর্মক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধাভোগী ছিলেন এবং বিশেষ সুবিধা প্রদান করেছেন, সেসব বিতর্কিত লোকজন যেন দায়িত্ব না পান।

দুপুরে আরও ২০ বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে বৈঠক করবে সার্চ কমিটি। আগামীকাল ১৩ ফেব্রুয়ারিতে আরও ২০ জনের সঙ্গে বসবেন কমিটির সদস্যরা। পরবর্তী সময় তাদের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে সার্চ কমিটি।

মোট ৩০টি রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠন নির্বাচন কমিশন গঠনে যোগ্য ব্যক্তিদের নামের তালিকা জমা দিয়েছে। তবে চিঠি পেলেও সার্চ কমিটিকে নাম না দেয়ার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে বিএনপি। আর সিপিবি, বাসদ ও জেএসডি কোন নাম পাঠাবে না বলে আগেই জানিয়েছিল।

আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার বাছাইয়ের অংশ হিসেবে রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠন করেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে যোগ্য ব্যক্তি খুঁজে নিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৬০ জন বিশিষ্টজনের মতামত নেবে সার্চ কমিটি। এ জন্য বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, বিএমএ, জাতীয় প্রেসক্লাব, কেআইবি, আই ই বি, এফবিসিসিআইসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন ও নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলকে চিঠি দেয়া হয়েছে। সিইসি ও অন্যান্য ইসি পদে দুইজন করে মোট দশজনের নাম রাষ্ট্রপ্রতির কাছে সুপারিশ করবে সার্চ কমিটি। সেখান থেকে পাঁচজনকে নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি। এই কমিশনের নেতৃত্বেই হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২)