দ্য রিপোট প্রতিবেদক:পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন। বৃহস্পতিবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন তিনি। এ সময় বিএসইসির চেয়ারম্যান পুঁজিবাজারের সমস্যা ও নানা সম্ভাবনার দিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তুলে ধরেন। বৈঠক সুত্রে এ তথ্য জানাগেছে ।

বিএসইসির চেয়ার‌্ম্যান গতকাল দুপুরে দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোরডটকমকে বলেন, বন্ড ছেড়ে পুজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করে কিভাবে দেশের রেলওয়ে খাত সহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মান করা যায় সেসব বিষয় প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছি। এছাড়া পুজিবাজারের উন্নয়নে আগামী পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেছি। একান্ত এই সাক্ষাতে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের বিষয়ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন বিএসইসির চেয়ারম্যান।

উল্লেখ্য শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিদ্যমান বিনিয়োগসীমা নিয়ে ব্যাংলাদেশ ব্যাংক ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে গত ডিসেম্বর মাসে বৈঠক হওয়ার কথা ছিলো। সেটা না হয়ে বৃহস্পতিবারের (১০ ফেব্রুয়ারি)দুপুর ১২টার দিকেবিএসইসির চেয়ারম্যানএ সাক্ষাতের সুযোগ পান। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

শেয়ারবাজারের বিনিয়োগসীমা বা এক্সপোজার লিমিট নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অস্থিরতা চলে আসছে। এনিয়ে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে রয়েছে মতপার্থক্য । ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রনালয়ের এক আদেশের মাধ্যমে এ্মত পার্থ্ক্য কাটিয়ে আইন সংশোধনের উদ্যেগ নেওয়া হয়েছে বলে দ্য রিপোর্টকে জানিয়েছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান।

তিনি জানান সেক্ষেত্রে ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ ( ২০১৩ সালে সংশোধিত)-এর ২৬ এর (ক) ধারার সংশোধন হতে পারে। এই ধারায় শেয়ারবাজারে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগসীমা বাজার দর ধরে নির্ধারণ করা রয়েছে। কিন্তু এর ফলে বাজার অস্থির হয়ে উঠছে বলে বিএসইসির পক্ষ থেকে তা সংশোধনের দাবি করে আসছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। বিএসইসি শেয়ারের ক্রয়মূল্য ধরে বিনিয়োগসীমা নির্ধারণ করার দাবি করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। একই সঙ্গে বিনিয়োগসীমা থেকে বন্ডের হিসাব বাদ দেওয়ারও দাবি করে আসছে বিএসইসি।

এই আইনের আওতায় ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ইকুইটির ওপর ভিত্তি ধরে বিনিয়োগসীমা ধার্য করা হয়েছে। ইকু্ইটি হলো কোনো কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন, মুনাফা বা ফ্রি রিজার্ভের যোগফল। এই ইকুইটির ২৫ শতাংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করার সুযোগ পাবে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। সেক্ষেত্রে প্রতিদিনের শেয়ারের বাজার দরকে বিবেচনায় নিতে হয়। শেয়ারের এই দর ধরে বিনিয়োগসীমা নির্ধারণ পদ্ধতির কারণেই বাজার অস্থির হয়ে পড়েছে বলে মনে করছে বিএসইসি।

বিদ্যমান আইন অনুসরণ করার ফলে হরহামেশা ব্যাংকগুলো বিনিয়োগসীমা লঙ্ঘন করছে। আর সেকারণে প্রায়ই জরিমানা গুণতে হচ্ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে শেয়ার বিক্রির চাপ। তাতে বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এই নিয়ম বদলানোর জন্য সুপারিশ করে আসছিলো বিএসইসি।

বিএসইসি বারবার বলে আসছে শেয়ারবাজারকে অস্থিরতা হতে থেকে বাঁচাতে শেয়ারের প্রতিদিনকার বাজার মূল্য নয় বরং ক্রয়মূল্য ধরে বিনিয়োগসীমা নির্ধারণ করা হোক। সারা পৃথিবীতে এখন বিনিয়োগসীমার স্ট্যান্ডার্ড হচ্ছে শেয়ারের ক্রয়মূল্য। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগসীমা নিয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বন্দ্বটা মূলত এখানেই।

বিএসইসির চেয়ারম্যান দ্য রিপোর্টকে জানান শেয়ারবাজারের গতিশীলতা ধরে রাখতে সব কটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার সহযোগিতামূলক আচরণ দরকার। শেয়ারের ক্রয়মূল্য ধরে বিনিয়োগসীমা নির্ধারণের বিষয়ে প্রয়োজন আইনের সংশোধন । বিষয়টি সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের কারণেই অর্থ মন্ত্রনালয় আইন সংশোধনের এই উদ্যোগ নিয়েছে।

দ্য রিপোর্ট/ টিআইএম/১৩ ফেব্রুয়ারি,২০২২