‘ রবির অপারেটিং খরচ অনেক বেশি ’
দুই পরিচালকের আকস্মিক পদত্যাগের ব্যাখা চেয়েছে বিএসইসি
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত টেলিযোগাযোগ খাতের বহুজাতিক কোম্পানি রবি আজিয়াটার মুনাফা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরই ধারাবাহিকতায় গত কয়েক বছর ধরে শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থ প্রবাহ নেতিবাচক অবস্থানের কারণ, নগদ অর্থ প্রবাহ ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে আনা, খরচ কমিয়ে বিক্রি বাড়ানো ও মুনাফায় ফিরিয়ে আনাসহ কোম্পানিটির আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে করণীয় নির্ধারণে কৌশলগত পরিকল্পনা জানতে চেয়েছে কমিশন।
এদিকে দেশের টেলিকম খাতের দ্বিতীয় বৃহত্তম কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের কার্যক্রম স্বতন্ত্র পরিচালক ছাড়াই চলছে। সম্প্রতি রবির দুইজন স্বতন্ত্র পরিচালক হঠাৎ পদত্যাগ করেছেন। এতে বর্তমানে কোম্পানিটির গুরুত্বপূর্ণ কমিটির কার্যক্রম অকার্যকর হয়ে পড়েছে। তাই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলে তা স্পষ্ট করার নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
সম্প্রতি রবি আজিয়াটার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।
বিএসইসি’র পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, রবি আজিয়াটার করপোরেট ম্যানেজমেন্ট কমিশনকে জানিয়েছে, কোম্পানির দুইজন স্বতন্ত্র পরিচালক আকস্মিক পরিচালনা পর্ষদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। তারা হলেন- আক্তার সানজিদা কাসেম ও কামরান বকর। এ অবস্থায় কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদে কোনো স্বাধীন পরিচালক নেই। ফলে কোম্পানিটির গুরুত্বপূর্ণ কমিটিগুলোর কার্যক্রম অকার্যকর রয়েছে। কেন ওই দুইজন স্বাধীন পরিচালক হঠাৎ পর্ষদ থেকে পদত্যাগ করলেন তা স্পষ্ট নয়।
এদিকে রবি আজিয়াটার বিপুল পরিমাণ শেয়ার বিনিয়োগকারীদের হাতে হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে কোম্পানিটি আশানুরূপ নগদ টাকা আয় করতে পারছে না। যেটা কোম্পানিটি ও তার শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ঝুঁকির বিষয়। গত ৫ বছর যাবৎ রবির শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থ প্রবাহ নেতিবাচক অবস্থানে রয়েছে। এ অবস্থায় কিভাবে রবি আজিয়াটা তাদের নগদ অর্থ প্রবাহ ইতিবাচক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারে তার একটি কৌশলগত পরিকল্পনা প্রদান করতে বলেছে বিএসইসি।
বিএসইসি’র চিঠি আরো উল্লেখ রয়েছে, অন্যান্য কোম্পানির তুলনায় রবি আজিয়াটার অপারেটিং খরচ অনেক বেশি। ফলে কোম্পানিটির মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এছাড়া রবি গত কয়েক বছরে প্রপার্টি, প্ল্যান্ট ও ইকুইপমেন্ট (পিপিই) এবং ইনট্যানজিবল অ্যাসেটে বড় ধরনের বিনিয়োগ করেছে। এর পরেও কোম্পানিটির বিক্রি বাড়েনি। এর ফলে রবির বড় ধরনের বিনিয়োগের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ অবস্থায় রবি কিভাবে খরচ কমিয়ে মুনাফা বাড়াবে এবং পাশাপাশি বড় বিনিয়োগ থেকে কিভাবে বিক্রি বাড়াবে তার ব্যাখ্যা প্রদান করবে।
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর ধারা ১১(২) অনুযায়ী উল্লিখিত বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রকাশ এবং ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসি’র একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, রবি আজিয়াটার দুইজন স্বতন্ত্র পরিচালক পদত্যাগ করেছেন। ফলে কোম্পানিটির গুরুত্বপূর্ণ কমিটির কার্যক্রম অকার্যকর রয়েছে। ওই দুইজন স্বতন্ত্র পরিচালক কেন পদত্যাগ করলেন তা কোম্পানিটি স্পষ্ট করেনি। তাই বিষয়টি কোম্পানিটির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া কোম্পানিটি আশানুরূপ নগদ টাকা আয় করতে পারছে না। গত কয়েক বছর ধরে রবির শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থ প্রবাহ নেতিবাচক অবস্থানে রয়েছে। এ অবস্থায় কোম্পানিটি কিভাবে তাদের নগদ অর্থ প্রবাহ ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে আনবে সে বিষয়ে একটি কৌশলগত পরিকল্পনা চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে কোম্পানিটি কিভাবে খরচ কমিয়ে মুনাফা বাড়াবে সে বিষয়েও ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
এদিকে গত ১০ ফেব্রুয়ারি রবি আজিয়াটার পরিচালনা পর্ষদ সভা স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে নতুন পর্ষদ সভার তারিখ ও সময় জানানো হবে বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি। ওই সভায় কোম্পানিটির ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করার কথা ছিল। তবে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশ প্রদান করেনি।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের শেয়ারবাজার তালিকাভুক্ত হয় রবি আজিয়াটা। কোম্পানিটির মোট পরিশোধিত মূলধন ৫ হাজার ২৩৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। ‘এন’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৫২৩ কোটি ৭৯ লাখ ৩২ হাজার ৮৯৫টি। এর মধ্যে চলতি হিসাব বছরের সর্বশেষ ৩১ জুলাই পর্যন্ত উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ৯০.০৫ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১.৬৫ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ০.০২ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৮.৩৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) কোম্পানিটির সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৩৮.৫০ টাকায়।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২)