হিজাব : কাশ্মিরে মুসকানের উল্টো পরিস্থিতিতে আরুসা
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: হিজাব পরার কারণে ভারতের কর্নাটকে ছাত্রী মুসকান খানকে কট্টর হিন্দুত্ববাদী গেরুয়া বাহিনীর হেনস্থার মুখে পড়তে হয়ে। এসময় মুসকানের ‘আল্লাহু আকবার’ স্লোগানসহ কৌশলী প্রতিবাদের ভিডিও ভাইরাল হয়। এ ঘটনার সূত্রে ভারতে এর পক্ষে বিপক্ষে রাজনৈতিক পরিস্থিতি সরগরম হয়ে ওঠে। এর রেশ এখনও চলছে।
তবে ভারত শাসিত কাশ্মিরে দেখা দিয়েছে যেন মুসকানের ঘটনার প্রায় উল্টো চিত্র।
এ বছর জম্মু কাশ্মির অ্যান্ড বোর্ড অব স্কুল এডুকেশনের দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় শীর্ষস্থান দখল করেন কাশ্মিরের তরুণী আরুসা পারভেজ। কিন্তু কৃতী এই ছাত্রীকেই এখন হেজাবের জন্য সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক ট্রোলের মুখে পড়তে হচ্ছে। তবে হিজাব পরার জন্য না, তাকে ট্রোলের মুখে পড়তে হচ্ছে হিজাব না পরার জন্য। এমনকি প্রাণনাশের হুমকিও নাকি দেওয়া হয়েছে তাকে।
ভারতীয় কাশ্মীরের শ্রীনগরস্থ ইলাহিবাগ সৌরার বাসিন্দা আরুসা গত ৮ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত দেশটির দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার ফলাফলে মোট ৫০০ নম্বরের মধ্যে ৪৯৯ নম্বর পান। তাক লাগানো এমন সাফল্যের পরেই কাশ্মির উপত্যকাসহ ভারত জুড়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। নেটজগতে তার ছবি আর গল্পকথা ছড়িয়ে পড়ে। আরুসার পরিবারে বইতে শুরু করে খুশির বন্যা। অভিনন্দন বার্তা আসতে থাকে সবদিক থেকে।
কিন্তু অভিনন্দন আর আশির্বাদের সঙ্গে সঙ্গে অশালীন মন্তব্যেরও শিকার হতে থাকেন আরুসা। হিজাবহীন ছবির কারণে তাকে এখন সামাজিক মাধ্যমে গালাগাল এমনকি হত্যার হুমকিতেও পড়তে হচ্ছে। ফলত পরীক্ষায় সাফল্যের আনন্দ যেন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। তাকে ‘নির্লজ্জ’ বলে চিহ্নিত করছে এক শ্রেণির কট্টর মনোভাবের মানুষ। তাকে শিরশ্ছেদের হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
অবশ্য বিরাজমান পরিস্থিতিতে মোটেই বিচলিত নন বলে জানিয়েছেন আরুসা। তার কথা হচ্ছে, তাকে নিয়ে খারাপ মন্তব্যে কিছু এসে যায় না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে নিশানা করা হচ্ছে তার অভিভাবকদেরকেও। এটা সহজভাবে নিতে পারছেন না তিনি।
এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে আরুসা বলেছেন, আমি মুসলিম। হিজাব পরি কি না-পরি, তাতে আমার ধর্মীয় বিশ্বাসে কোনও প্রভাব পড়ে না।
এদিকে, নেটনাগরিকদের অনেকের মতে, হিজাব না পরার জন্যই যে শুধুমাত্র আরুসার উদ্দেশ্যে কটূক্তি করা হচ্ছে, আসল ঘটনা তা নয়। নারীবাদী এই নেটনাগরিকদের মতে, ছেলেদের প্রথম হওয়ার রীতি ভেঙে সামনে আসায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একটা অংশের নিশানায় পড়েছেন কাশ্মিরি এই কন্যা। এ ক্ষেত্রে হিজাব না পরাকে ঢাল করা হচ্ছে মাত্র।
বিষয়টি নিয়ে গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক আসাদুল্লা মীর বলেন, আরুসার সঙ্গে যা হচ্ছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এই ঘটনায় ওই মেয়েটি মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে পারে। ইসলাম কখনোই সমাজমাধ্যমে কুকথা কিংবা ফতোয়া জারির অনুমতি দেয় না। কাশ্মীর অবজারভার, রিপাবলিক ওয়ার্ল্ড
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২)