দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: ভারতীয় বাংলা গানের কালজয়ী গায়িকা গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় মারা গেছেন। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে তার মৃত্যুর খবর পাওয়া যায় কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা সূত্রে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। গেলো কয়েকদিন ধরে অসুস্থ হয়ে আইসিইউতে ছিলেন এই কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী।

মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টা ১৩ মিনিটে টুইট করে মৃত্যুর খবরটি জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সংসদ সদস্য শান্তনু সেন। এর আগে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছিল। দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন এই গীতশ্রী।

মঙ্গলবার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়েছিল তাকে। এদিন সকালে মেডিক‍্যাল বুলেটিনে জানানো হয়, সন্ধ‍্যা মুখোপাধ‍্যায়ের শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তার রক্তচাপ অনেকটাই কমে গিয়েছে।

ভারতের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, বাংলা সংগীত বিশেষজ্ঞও তিনি। গানে গানে মানুষের মন কেড়েছেন। অসাধারণ সুরের জাদুতে মুগ্ধ করেছেন দর্শককের। হেমন্ত মুখার্জী-সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় গানের জুটি হিসেবে দারুণ জনপ্রিয় ছিল।

১৯৭১ সালে ‘জয় জয়ন্তী’ ও ‘নিশিপদ্ম’ ছবিতে গান গেয়ে শ্রেষ্ঠ গায়িকা হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। গান দুটি হলো—আমাদের ছুটি ছুটি এবং ওরে সকল সোনা মলিন হলো।

এ ছাড়া ২০১১ সালে ভারত সরকার তাকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ উপাধিতে সম্মানিত করে। ভারতে প্রতিভাবান ব্যক্তিত্বদের একাধিক সম্মান দেওয়া হয়ে থাকে। যার মধ্যে পদ্মশ্রী অন্যতম, এই সম্মান পাওয়া এক গর্বের বিষয়। কিন্তু এই সম্মানকে প্রত্যাখ্যান করলেন ৯০ বছর বয়সী কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।

তার কণ্ঠের জাদুতে মজেছে কয়েক প্রজন্ম। ৫০ বছরেরও বেশি সময় নানা ভাষার ছবিতে প্লেব্যাক করেছেন তিনি। ছবির গানের পাশাপাশি বাংলা আধুনিক গান ও ধ্রুপদী সঙ্গীতেও তিনি ছিলেন সমান পারদর্শী।

উস্তাদ বড়ে গুলাম আলি খাঁর শিষ্য ছিলেন তিনি। ১৯৩১ সালের ৪ অক্টোবর দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন সন্ধ্যা। তার সঙ্গীত শিক্ষার মূল কাণ্ডারি ছিলেন তার দাদা রবীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়।

১৯৪৫ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে প্রথম গান রেকর্ড করেন তিনি। কলম্বিয়া থেকে তার প্রথম রেকর্ড করা গান গিরীন চক্রবর্তীর কথায় ও সুরে ‘তুমি ফিরায়ে দিয়াছ’ ও ‘তোমার আকাশে ঝিলমিল করে’।

১৯৪৮ সালে প্রথমবার রাইচাঁদ বড়ালের সঙ্গীত পরিচালনায় প্লেব্যাক করেন, ছবির নাম ‘অঞ্জনগড়’। ওই একই বছরে আরও তিনটি আধুনিক গান রেকর্ড করে সঙ্গীতজগতে নিজের জায়গা পাকা করে ফেলেন ভবিষ্যতের কিংবদন্তি।

১৯৫০ সালে মুম্বাই পাড়ি জমান বাংলা মৌলিক আধুনিক গানের সম্রাজ্ঞী সন্ধ্যা। ১৭টি হিন্দি ছবিতে প্লেব্যাক করেন তিনি। শচীন দেব বর্মনের হাত ধরেই শুরু হয়েছিল তার বম্বে সফর। শচীন দেববর্মন নিয়ে গেলেও মুম্বাইয়ে প্রথম প্লেব্যাকের সুযোগ হল অনিল বিশ্বাসের সুরে ‘তারানা’ ছবিতে।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২)