দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ফু-ওয়াং ফুডসের পরিচালনা পর্ষদ ফের পুনর্গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কোম্পানিটির আগের পরিচালনা পর্ষদকে বাতিল করে নতুন একজন শেয়ারহোল্ডার পরিচালক ও দুইজন স্বতন্ত্র পরিচালককে নিযুক্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে কোম্পানিটির নতুন পর্ষদকে সিকিউরিটিজ ও কোম্পানি আইন যথাযতভাবে পরিপালন করাসহ ৫টি শর্ত মেনে চলতে নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।

সম্প্রতি ফু-ওয়াং ফুডসের পুরোনো পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদের কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।
একইসঙ্গে বিষয়টি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের অবহিত করা হয়েছে।
বিএসইসি’র নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ফু-ওয়াং ফুডসের নতুন পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা হলেন- শেয়ারহোল্ডার পরিচালক মাইনরি বাংলাদেশ এক বা তার অধিক পরিচালক (৭.৬১ শতাংশ শেয়ারধারণে বিপরীতে মনোনীত হতে পারেন), স্বতন্ত্র পরিচালক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেনেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস (এমআইএস) বিভাগের অধ্যাপক মো. আবুল কাশেম এবং স্বতন্ত্র পরিচালক একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস (এআইএস) বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইশতার মহল।
বিএসইসি’র চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ফু-ওয়াং ফুডসের উদ্যোক্তা বা পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে শেয়ারধারণ পরিশোধিত মূলধনের মাত্র ৭.৮৫ শতাংশ, যা বিএসইসি’র ২০১৯ সালের ২১ মে জারি করা নির্দেশনা ক্রমাগত লঙ্ঘন হচ্ছিল। এর ফলে গত বছরের ১৪ জুলাই বিএসইসি কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে। এ পরিস্থিতি বিনিয়োগকারী এবং পুঁজিবাজারের বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষার্থে বিএসইসি ফু-ওয়াং ফুডসের পরিচালনা পর্ষদকে আবারও পুনর্গঠিত করেছে। যার মধ্যে দুইজন স্বতন্ত্র পরিচালক এবং শেয়ারহোল্ডার পরিচালক বিশিষ্ট ব্যক্তি দ্বরা গঠিত। যাদের ২০১৯ সালের ২১ মে জারি করা বিএসইসি’র নির্দেশনা অনুযায়ী পরিশোধিত মূলধনের নূন্যতম ২ শতাংশ শেয়ারধারণ রয়েছে। একইসঙ্গে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএসইসি’র জারি করা নির্দেশনাও পরিপাল করা হয়েছে। আর সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর ধারা ২সিসি এর অধীনে এসব নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
এদিকে চিঠিতে ফু-ওয়াং ফুডসের পুনর্গঠিত নতুন পর্ষদকে দেওয়া শর্তের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়, কোম্পানিটির পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদে শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদের অন্তর্ভুক্তি গত বছরের ২০ জানুয়ারি বিএসইসির জারি করা নির্দেশনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে। সেই সঙ্গে আসন্ন সাধারণ সভায় ওই শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদের অনুমোদনের জন্য পোষ্ট-ফ্যাক্টো হিসেবে বিষয়টি উপস্থাপন করতে হবে। ফু-ওয়াং ফুডসের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারি বিএসইসির জারি করা নির্দেশনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে। এক্ষেত্রে কোম্পানিটির প্রত্যেক পরিচালক পৃথকভাবে নূন্যতম ২ শতাংশ শেয়ারধারণ করবে। আর কোম্পানির পরিচালকদের দ্বারা সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ারধারণ বজায় রাখতে হবে।
শর্তে আরো উল্লেখ রয়েছে, কোম্পানিটির উদ্যোক্তা এবং পরিচালকদের হাতে থাকা সকল শেয়ার ব্লক-মডিউলের অধীনে লক-ইন অবস্থায় থাকবে। নতুন এই নির্দেশনা জারি করার ফলে ২০২১ সালের ১৪ জুলাই ফু-ওয়াং ফুডসের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন সাপেক্ষে জারি করা নির্দেশনা বাতিল বলে গণ্য হবে। ফু-ওয়াং ফুডসের স্বতন্ত্র পরিচালকসহ সকল পরিচালক কমিশন কর্তৃক সময়ে সময়ে জারি করা নির্দেশাবলী, বিজ্ঞপ্তি, নির্দেশাবলী, প্রাসঙ্গিক সিকিউরিটিজ আইন এবং কোম্পানি আইন মেনে চলতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসি’র কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, সার্বিক দিক বিবেচনা করে ফু-ওয়াং ফুডসের পরিচালনা পর্ষদ ফের পুনর্গঠন করেছে কমিশন। যেহেতু ফু-ওয়াং ফুডসের মালিকানা কিনে নিয়েছে মিনোরি বাংলাদেশ, সেহেতু কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডার পরিচালক পেয়েছে। তাই কমিশন শেয়ারহোল্ডার পরিচালকসহ আরো দুইজন স্বতন্ত্র পরিচালক অন্তর্ভুক্ত করে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ফের পুনর্গঠন করেছে।
তথ্য মতে, বিএসইসির নির্দেশনা মোতাবেক সম্মিলিতভাবে ফু-ওয়াং ফুডসের পুরোনো উদ্যোক্তা বা পরিচালকরা পৃথকভাবে নূন্যতম ২ শতাংশ এবং সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। একইসঙ্গে কোম্পানিটিতে দুই জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার জন্য বিএসইসি’র জারি করা নির্দেশনাও পরিপালন করতে ব্যর্থ হয়েছে কোম্পানিটির পুরোনো পরিচালনা পর্ষদ। ফলে সার্বিক দিক বিবেচনা করে গত বছরের ১৪ জুলাই ফু-ওয়াং ফুডসের পুরোনো পর্ষদের সঙ্গে আরো নতুন ৫ জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয় কমিশন। তবে সম্প্রতি ফু-ওয়াং ফুডসের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে তাদের মালিকানা কিনে নেওয়ার জন্য বিএসইসি’র কাছে আবেদন জানায় মিনোরি বাংলাদেশ। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি ফু-ওয়াং ফুডসের মালিকানা মিনোরি বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরের বিষয়টি অনুমোদন দেয় বিএসইসি। এর আগে মিনোরি বাংলাদেশ এমারেল্ড অয়েলের মালিকানা কিনে নিয়েছে। পাশাপাশি দীর্ঘ চার বছর ধরে বন্ধ থাকা ওই কোম্পানিটিকে উৎপাদনে ফিরিয়ে এনেছে। ফলে সার্বিক দিক বিবেচনা করে ফু-ওয়াং ফুডসের মালিকানায় আসতে মিনোরি বাংলাদেশকে সম্মতি দিয়েছে বিএসইসি।
(দ্য রিপোর্ট/ টিআইএম/১৬ ফেব্রুয়ারি,২০২২)