দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: ‌জীবনে এমন কিছু মুহূর্ত আসে, এমন অর্জন ধরা দেয়- যা খুশিতে চারপাশ যেমন মাতিয়ে রাখে, তেমনি খালি কান্না পায়। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২০’র শ্রেষ্ঠ সঙ্গীতশিল্পীর নাম ঘোষণার পর থেকেই আমার শুধুই কান্না পাচ্ছে।

২০২০ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে তথ্য মন্ত্রণালয়। ‘বীর’ সিনেমায় ‘ভালোবাসার মানুষ তুমি’ গানের জন্য শ্রেষ্ঠ গায়িকা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়ে এভাবেই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন দর্শকপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী সোমনুর মনির কোনাল।

পাঠকদের জন্য তার স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো-

‘আমার বার বার মনে পড়ছিল কুয়েতে গানের তালিম নেয়ার দিনগুলোর কথা। আমাকে গুরুমার কাছে পৌঁছে দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মরুভূমির তপ্ত রোদে গাড়িতে বসে থাকতেন আব্বু। বছরের পর বছর তিনি এমনটা করেছেন। একটা সময় কুয়েত থেকে দেশে বেড়াতে এসে নাম লেখাই চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠে। ২০০৯ সালে চ্যাম্পিয়ান হওয়ার মধ্য দিয়ে আমার পেশাদার সঙ্গীতজীবনের যাত্রা শুরু।

আমার সেরা হওয়ার এই যাত্রাপথে বিচার কাজ করেছেন বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশীয় সঙ্গীতের চার দিকপাল শ্রদ্ধেয় ম্যাডাম রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমীন ম্যাডাম, আলাউদ্দিন আলী স্যার ও সুবীর নন্দী স্যার। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরদিন আমার সিনেমার গানে যাত্রা শুরু। আর ২০২০ সালে এসে রাষ্ট্রীয়ভাবে শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি।

এই দীর্ঘ পথচলায় প্রযোজক, পরিচালক, সঙ্গীত পরিচালক, গীতিকার ও সুরকারেরা আমাকে তাদের অসাধারণ সব সৃষ্টির সঙ্গে যুক্ত করেছেন। যার মধ্য দিয়ে আমি প্রতিনিয়ত নতুন অনেক কিছু শিখেছি, শিখছি। আমিও চেষ্টা করেছি, আমার প্রতি তাদের সবার আস্থার প্রতিদান রাখতে। আমৃত্যু তাই করে যাওয়ার চেষ্টা করব।

পুরস্কারে নাম ঘোষণার পর একটা বিষয় আমার ভীষণ ভালো লেগেছে, আমার এই অর্জনকে বিনোদন অঙ্গনের সকল শিল্পী ও কলাকুশলী, প্রযোজক-পরিচালক তাদের নিজেদেরই অর্জন মনে করেছেন। তারা আমাকে ফোন করে, এসএমএস করে শুভেচ্ছা এমনভাবে জানিয়েছেন, তা আমার সঙ্গীতের মহাসমুদ্রে পথচলার সাহসটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

পুরস্কার ঘোষণার পর রুনা লায়লা ম্যাডাম লন্ডন থেকে ফোন করে শুভকামনা জানিয়েছেন। অনেক পরামর্শ দিয়েছেন— যা আমাকে ভীষণ ভীষণ অনুপ্রেরণা দিয়েছে। শাকিব খান ভাইয়া আমার এই পুরস্কার অর্জনের খবরে অনেক খুশি। নিউ ইয়র্ক থেকে তিনি বলেছেন, অনেক কাজ করতে হবে তোমার, এখনো অনেক কিছুই করার বাকি। আমার প্রিয় বোনটা, মাত্র শুরুটা হলো তোমার।

আমিও তাই মনে করছি, রাষ্ট্র আমাকে সম্মান দিচ্ছে, আমি আমার দেশের প্রতি, দেশ-বিদেশে আমার ভক্ত-শ্রোতাদের প্রতি, সবার প্রতি আরও অনেক বেশি দায়বদ্ধ থাকব বলে প্রতিজ্ঞা করলাম। এমনিতে আমি দেশবরেণ্য শিল্পীদের চুলচেরা বিশ্লেষণ ও দেশ-বিদেশের লাখো বাংলাদেশির ভোট দিয়ে নির্বাচিত শিল্পী, যে কারণে কুয়েত থেকে স্থায়ীভাবে বাংলাদেশে চলে এসেছিলাম, আমার শ্রোতা-ভক্তদের প্রতি আমি সবসময় কমিটেড ছিলাম। সামনেও তার ব্যতিক্রম হবে না। আমাকে আপনাদের দোয়া ও ভালোবাসায় রাখবেন। আপনাদের সকলকে অনেক ভালোবাসি। এই অর্জন আমার বাবাকে উৎসর্গ করলাম।’

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২)