দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: প্রাণনাশের হুমকি পাওয়ার পর ১৬ দিনের মাথায় চাকরি গেল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনের। গত ৩০ জানুয়ারি হুমকি পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে চট্টগ্রামের খুলশী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন দুদকের এই কর্মকর্তা। এরপরই বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) তাকে চাকরিচ্যুতির আদেশ দেয় দুদক।

আদেশের দিন থেকেই শরীফ উদ্দিনের চাকরিচ্যুতি কার্যকর হবে বলে দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ স্বাক্ষরিত আদেশে উল্লেখ করা হয়।

শরীফ উদ্দিন দাবি করেছেন, তাকে অপসারণের ক্ষেত্রে দেশের সংবিধান লঙ্ঘন করা হয়েছে। সংবিধানের ১৩৫ ধারায় আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয়েছে। শরীফ দাবি করেন, দুদক তাকে সেই সুযোগ দেয়নি। এখন তিনি ন্যায়বিচার প্রার্থনা করে আদালতের দ্বারস্থ হবেন। গতকাল শুক্রবার শরীফ উদ্দিন সাংবাদিকদের এই কথা জানান।

শরীফ উদ্দিন বলেন, প্রথমে আমি আমার বিরুদ্ধে করা শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কমিশনের কাছে আদেশ রিভিউ আবেদনের চেষ্টা করব। দ্বিতীয়ত, আমাকে অসাংবিধানিকভাবে চাকরি থেকে অপসারণ করায় আমি হাইকোর্টে আপিল করব। যা সংবিধানের ১৩৫ আর্টিকেলকে কাভার করে না। আমাকে সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আমার অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আপিল করব।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তিনি চট্টগ্রামে দুর্নীতিবিরোধী যেসব অভিযান চালিয়েছেন তাতে দুদকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার কথা নয়। তিনি সেখানে কী কী কাজ করেছেন আর রাষ্ট্রীয় কোষাগারে কত টাকা জমা দিয়েছেন সবই দুদকের সংশ্লিষ্ট টিম ও সহকর্মীরা জানেন।

শরীফ উদ্দিন বলেন, আমি যখন কাজ করি আমার কার্যালয় সেই বিষয়ে অবগত থাকে। আমার সাথে থাকে দুদকের টিম, আমার অন্যান্য সহকর্মী। আমি চট্টগ্রামে বেদখল হওয়া ৫০ কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ করেছি, যা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা রয়েছে।

গত বুধবার দুদক কর্মচারী চাকরি বিধিমালা ২০০৮-এর ৫৪(২) বিধি অনুযায়ী দুদক চেয়ারম্যান মো: মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ উপসহকারী পরিচালক মো: শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করেন। তিনি সবশেষ দুদকের পটুয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন।

এদিকে দুদক সূত্রে জানা যায়, শরীফ উদ্দিন চট্টগ্রামে কর্মরত অবস্থায় কক্সবাজারে ৭২টি প্রকল্পে সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি, রোহিঙ্গা নাগরিকদের ২০টি এনআইডি ও পাসপোর্ট জালিয়াতি, কর্ণফুলী গ্যাসে অনিয়মসহ বেশ কিছু দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি মামলা করেন। এতে তিনি অনেকের ‘চক্ষুশূল’ হয়ে উঠেছিলেন।

দুদকের চেয়ারম্যানের ওই আদেশে বলা হয়, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) বিধিমালা, ২০০৮-এর বিধি ৫৪ (২)-তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মো. শরীফ উদ্দিন (উপসহকারী পরিচালক) দুদক, সমন্বিত জেলা কার্যক্রম, পটুয়াখালীকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হলো। তিনি বিধি মোতাবেক ৯০ দিনের বেতন এবং প্রযোজ্য সুযোগ-সুবিধা পাবেন।’

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২)