দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: ইউক্রেনে জাতিগত রুশ অধ্যুষিত ডনবাস অঞ্চলে রুশ সমর্থিত বিদ্রোহী নেতারা সম্ভাব্য যুদ্ধের জন্য তাদের যোদ্ধাদের পূর্ণমাত্রায় প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

ইউক্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া দনিয়েস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে যুদ্ধ করতে সমর্থ এমন সব পুরুষকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নারী, শিশু ও বয়স্কদের নিরাপদে সরানোর পরিকলপনা করা হয়েছ, এবং অনেকেই সীমান্ত পেরিয়ে রাশিয়ার রস্তভ-অন-ডন অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছে।

প্রচুর শরণার্থী ঢুকতে পারে- এ সম্ভাবনায় রাশিয়া সীমান্তবর্তী ঐ অঞ্চলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।

ওদিকে, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বলছে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে আজ (শনিবার) সকালে রুশ সমর্থিত বিদ্রোহীদের চালানো এক হামলায় গোলার আঘাতে তাদের একজন সৈন্য মারা গেছে। অনেকদিন পর গোলাগুলিতে সরকারি সৈন্য নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটলো।

ইউক্রেনের সেনাবাহিনীও তাদের বিবৃতিতে বলেছে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কাছ থেকে এসব হামলা রাশিয়ার নির্দেশে পরিচালিত হচ্ছে। তারা বলছে, রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা তাদের প্ররোচিত করার চেষ্টা করছে যাতে তারা পাল্টা গুলি চালায় এবং এতে বেসামরিক লোকজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

ডনবাস অঞ্চল দিনকে দিন যেভাবে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে তাতে পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যেও তেমন সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

আমেরিকা এবং পশ্চিমা দেশগুলো বেশ কিছুদিন ধরে বলছে জাতিগত রুশ বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত ডনবাসে কোনো ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটলে ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন চালানোর ব্যাপারে রাশিয়া সেটাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।

যুদ্ধ শুরুর ভয়ে ইউক্রেনের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত লুহানস্ক থেকে অনেক নারী, শিশু ও বয়স্ক লোকজন রাশিয়ার ভেতরে ঢুকতে শুরু করেছে। তাদের জন্য শরণার্থী শিবির খোলা হচ্ছে।

যুদ্ধ শুরুর ভয়ে ইউক্রেনের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত লুহানস্ক থেকে অনেক নারী, শিশু ও বয়স্ক লোকজন রাশিয়ার ভেতরে ঢুকতে শুরু করেছে। তাদের জন্য শরণার্থী শিবির খোলা হচ্ছে।

ডনবাসে বিদ্রোহী যোদ্ধা এবং ইউক্রেনের সৈন্যদের মধ্যে হওয়া যুদ্ধবিরতি ভেঙ্গে পড়ার বেশ কিছু লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। গত কদিন ধরে যুদ্ধবিরতি রেখার দুপাশ থেকেই গোলাবর্ষণের খবর আসছে।

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরাও বলছেন, গত কয়েকদিনে ওই এলাকায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনায় নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে।

বিদ্রোহীদের যুদ্ধ প্রস্তুতি

দনিয়েস্ক আর লুহানস্কে বিচ্ছিন্নতাবাদী যোদ্ধাদের নেতারা বলছেন, পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর। তারা সম্পূর্ণ সামরিক প্রস্তুতি নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তারা দাবি করছেন ইউক্রেন তাদের ওপর হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে।

শিশু, নারী এবং বয়স্কদের নিরাপদে, এমনকী রাশিয়ার ভেতর পাঠানোর পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন বিদ্রোহী কম্যান্ডাররা।

তবে অনেক পর্যবেক্ষক বলছেন, ইউক্রেনের সীমান্তে রাশিয়া এত ব্যাপক সংখ্যক সৈন্য জড়ো করেছে যে ডনবাসে হামলা চালানোর কোনো সাহস ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর এখন নেই। সেটা করলে ইউক্রেনের জন্য তা আত্মঘাতী হবে। গত রাতেও রাজধানী কিয়েভে ইউক্রেনের সরকার বলেছে যে তাদের সেরকম কোনো ইচ্ছা নেই।

এরকম পরিস্থিতির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যে ইউক্রেনে হামলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন এবিষয়ে তার কোনো সন্দেহ নেই। তিনি বলেন, আগামী যেকোন দিনে এই আগ্রাসন চালানো হতে পারে। তবে ক্রেমলিন এখনও বলছে ইউক্রেনে হামলা চালানোর কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২)