নিষেধাজ্ঞায় পড়া রুশ ব্যাংকগুলোর সাথে লেনদেনে মানা
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার হামলার পর রাশিয়ার কয়েকটি ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পশ্চিমা কিছু দেশ। এর প্রভাব পরেছে বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে। কেননা রাশিয়ার ব্যাংক ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ফরেন ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্সের (ভিইবি) মাধ্যমেই ওই প্রকল্পে অর্থ লেনদেন করছে বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংক।
আন্তর্জাতিক লেনদেন মাধ্যম সুইফট সম্প্রতি জানিয়েছে, বৈশ্বিক অর্থ লেনদেনের ওই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে ১২ মার্চ থেকে।
এ পরিস্থিতিতে তারা বাংলাদেশকে বলেছে ওইসব ব্যাংকের সঙ্গে আপাতত লেনদেনে বিরত থাকতে। এই পরিস্থিতিতে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা ওই সব রাশিয়ান ব্যাংকগুলোর সঙ্গে সরাসরি লেনদেন করা যাবে না বলে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
শুক্রবার ওই নিষেধাজ্ঞার ফলে বর্তমান অনিশ্চয়তা বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, রাশিয়ার যে ব্যাংকগুলোকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে সেগুলোর সঙ্গে সরাসরি লেনদেন করা যাবে না। কিন্তু আমাদের কাছে এ জাতীয় কোনো নির্দেশনা আসেনি। সোনালী ব্যাংক চেষ্টা করছে তাদের ওই লেনদেন বিষয়ে একটু অপেক্ষা করতে। অগ্রণী ব্যাংক সহ অন্যান্য ব্যাংকের উচিত হবে অপেক্ষা করা। পরবর্তীতে তারা যদি অন্য কোন মেকানিজমে বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেন করতে চায়, সেটা তখন বিবেচনা করা হবে।
সিরাজুল ইসলাম আরো বলেন, এখন বাংলাদেশের যেসব এডি ব্রাঞ্চগুলো আছে সেগুলোর সঙ্গে লেনদেনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক সতর্ক দৃষ্টি রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
সুইফট জানিয়েছে ওই নিষেধাজ্ঞা ১২ মার্চ থেকে কার্যকর হবে । সে ক্ষেত্রে আমাদের রূপপুর বিষয়ে কি ধরনের উদ্যোগ থাকা প্রয়োজন? এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মূখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, পরবর্তী সময়ে তারা পেমেন্ট করতে যদি বিলম্ব করতে চায় আমরা সেটা করব। আরো কিছুদিন ওয়েট করা হবে। তাদের পেমেন্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের পক্ষ থেকে তো কোনো বাঁধা নেই। এর মধ্যে অন্য কোন বিকল্প যদি বের হয়ে আসে তখন সেটা চেষ্টা করা হবে। তবে রাশিয়ার সব ব্যাংকগুলোকে কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়নি। এখন তো এটা জি টু জি বা সরকার টু সরকার। পরবর্তী সময়ে যদি অন্য কোন নির্দেশনা আসে বা অন্য কোন ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করার জন্য আমাদেরকে অনুরোধ করে তখন আমরা সেই ব্যবস্থা নেব।
এদিকে, রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশে প্রভাবের বিষয়ে শুক্রবার পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, এখনও ক্লিয়ার হয়নি সবকিছু। এখনো জাস্ট প্রথম দিনগুলো আর কি, নিষেধাজ্ঞার…আমরা ফুল রেইঞ্জ অব ইমপ্যাক্ট কী হয়, সেটা নিয়ে আমরা নিজেরা আলাপ-আলোচনা করেছি। গতকালও (বৃহস্পতিবার) একটা মিটিং করেছি সব স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে। আশা করছি, হয়ত আরও কিছু মিটিং করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সাথে বিভিন্ন এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট, গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস এবং আমাদের যে প্রজেক্টগুলো আছে… সেখানে রাশিয়ার যে ইনভলভমেন্টগুলো আছে, সেখান পেমেন্টসসহ অন্যান্য বিষয়গুলো আছে, সেগুলো নিয়ে আমরা নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন মহলে কথাবার্তা বলছি, কী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ সেটাও আমরা নির্ধারণ করব আগামীতে।
রূপপুর প্রকল্প নিয়ে এই মুহূর্তে কোনো সমস্যা হবে বলে মনে করেন না মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেন, কিন্তু ডিপেন্ড করছে ভবিষ্যতে যদি আরও ব্যাংকের উপরে নিষেধাজ্ঞা আসে বা সুইফটের উপরে আসে, অথবা বড় বড় যে কোম্পানিগুলো আছে তাদের উপরে যদি নিষেধাজ্ঞা আসে, তাহলে জটিলতা হতে পারে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে বাংলাদেশকে সহায়তা করছে রাশিয়া। রাশিয়ার পরমাণু শক্তি কর্পোরেশন রোসাটমের নেতৃত্বে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করছে এটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট। সেখানে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দেবে প্রায় ২২ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। আর রাশিয়া থেকে ঋণসহায়তা হিসেবে আসছে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা।
ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের ঘোষণা আসার পর থেকেই রাশিয়ার আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ নাগরিকদের ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ। কড়া পদক্ষেপের অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক লেনদেন পরিষেবা সুইফট থেকেও বাদ দেওয়া হয়েছে রাশিয়ার বিভিন্ন ব্যাংককে। রাশিয়াকে চাপের মুখে রাখার জন্য এসব পদক্ষেপে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০৫ মার্চ, ২০২২)