দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় গত ২ মার্চ লিজা আক্তার নামের এক গৃহকর্মীকে চোর অপবাদ দিয়ে অমানবিক নির্যাতন করে গৃহকর্তা এজাজ সাকলায়েন এবং তার স্ত্রী তানজিমা হাসেম। এরপর তারা তাকে বাথরুমে আটকে রেখে বাসা থেকে চলে যায়। তিন দিন বাথরুমের পানি খেয়ে বেঁচে ছিল লিজা। পরে খবর পেয়ে পুলিশ লিজাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে।

রোববার (৬ মার্চ) লিজাকে নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা মামলার দুই আসামিকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ভাটারা থানার উপ-পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মোহাম্মদ আলী সৈকত। রিমান্ড আবেদনে এসব কথা উল্লেখ করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

এদিকে, ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ইয়াসমিন আরা শুনানি শেষে আসামিদের এক দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন, যা আগামী তিন দিনে কার্যকর করতে বলা হয়েছে।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, লিজা গত বছরের ৭ নভেম্বর আসামিদের বাসায় মাসিক ৪ হাজার টাকা বেতনে কাজ নেয়। বাসায় কাজ করা অবস্থায় আসামিরা বিভিন্ন সময় তুচ্ছ বিষয় নিয়ে তাকে মারধর করত। তানজিমা হাসেম লোহার খুন্তি আগুনে গরম করে লিজার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাঁকা দিতো ও মাথার চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলত। গত ২ মার্চ আসামিরা লিজাকে চোর অপবাদ দিয়ে মারধর করে। তানজিমা গ্যাসের চুলায় খুন্তি গরম করে লিজার হাত, পা, মুখ, পিট, বুকসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাঁকা দিয়ে দগ্ধ করে এবং চুল টেনে তুলে ফেলে। এজাজ সাকলায়েন লোহার রড দিয়ে ভিকটিমকে মারধর করে। এতে লিজা অসুস্থ হয়ে পড়ে। বিকেলে তারা তাকে বাথরুমের ভিতর আটকে বাসার দরজা বন্ধ করে চলে যায়। তিন দিন বাথরুমের পানি খেয়ে বেঁচে ছিল ভিকটিম। লিজার দুই হাত, দুই পা, পিঠ, পেট, মুখমণ্ডল, ঘাড়সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আগুনে পোড়ার চিহ্ন আছে। এছাড়া, লিজার মাথার বাম পাশের চুল ওঠানো হয়েছে।

মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে এবং ভিকটিমকে নির্যাতনের কাজে ব্যবহৃত আলামত উদ্ধারের লক্ষ্যে আসামিদের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

আসামিদের পক্ষে অ্যাডভোকেট সাজেদুল ইসলাম ভূঁঞা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন,‘তানজিমা মানসিক রোগী। এছাড়া, তিনি ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা এবং তার ৫ বছরের একটি বাচ্চা আছে। এজাজ সাকলায়েনও অসুস্থ। ভুল বোঝাবুঝির কারণে মামলা হয়েছে। তারা সেদিন মিরপুরে বেড়াতে যান। আসামিরা লিজাকে কোনো ধরনের অত্যাচার করেনি। পুলিশ তাদের থানায় ডাকে। সেখানে গেলে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাদের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হলো। রিমান্ড নামঞ্জুর করে প্রয়োজনে তাদের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক।

রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জামিন আবেদনের বিরোধিতা করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তানজিমা ও এজাজের রিমান্ডের আদেশ দেন।

এজাজ সাকলাইনের বাসায় গৃহকর্মী হিসবে কাজ করত লিজা আক্তার। এজাজ ও তার স্ত্রী লিজাকে মারপিট করতেন। গত বুধবার (২ মার্চ) তারা লোহার খুন্তি গরম করে লিজার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছ্যাঁকা দেন। এতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে লিজা। শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে প্রতিবেশীরা জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ৪ নম্বর রোডের ডি-ব্লকের ১৯৩ নম্বর বাসায় যায়। সেখানে লিজাকে বাথরুমে আটকে রাখা হয়েছিল। পুলিশ লিজাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে পাঠায়। সেখানে তার চিকিৎসা চলছে।

এ ঘটনায় ভাটারা থানার উপ-পরিদর্শক হাসান মাসুদ মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় এজাজ সাকলাইন ও তানজিমা হাসেমকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০৬ মার্চ, ২০২২)