অধিকাংশ ফান্ড অব্যবহৃত
শেয়ারবাজারে ব্যাংকেগুলোর বিনিয়োগ ফান্ডের অগ্রগতি জানতে বিএসইসিতে বৈঠক বুধবার
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে প্রতিটি ব্যাংকের অতিরিক্ত ২০০ কোটি টাকা করে বিনিয়োগ করার যে নীতিমালা রয়েছে তা বাস্তবায়নে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ( বিএসইসি) উদ্যোগ গ্রহণ করেছে । এ বিষয়ের অগ্রগতি জানতে বুধবার ( ৯ মার্চ ) বিএসইসি কার্যালয়ে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। বিএসইসির কমিশনার শেখ মোহাম্মদ শামছুদ্দিন আহমেদ এ বৈঠক আহ্বান করেছেন। গতকাল রাতে দ্য রিপোর্টকে কমিশনার শামছুদ্দিন আহমেদ জানান, বুধবার ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের নিয়ে বৈঠক করবো। প্রতিটি ব্যাংকের অতিরিক্ত ২০০ কোটি টাকা করে বিনিয়োগ করার যে নীতিমালা রয়েছে সেটার কতোটা বাস্তবায়ন হচ্ছে তা জানতে চাইবো। তিনি জানান এর আগে গত ১ মার্চ কেন্দ্রীয় ব্যাংক সকল ব্যাংককে তলব করেছিলো। সেখানে ব্যাংকগুলোকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য তাগাদা দেওয়া হয়েছে।
২০২০ সালের ফ্রেব্রুয়ারি মাসে পুঁজিবাজারে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ নীতিমালা আংশিক শিথিল করেছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে প্রতিটি ব্যাংক প্রচলিত নীতিমালার বাইরে গিয়ে শেয়ারবাজারে আরও অতিরিক্ত ২০০ কোটি টাকা করে বিনিয়োগ করার সুযোগ লাভ করে। এই অতিরিক্ত বিনিয়োগ আগামী ২০২৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রচলিত নীতিমালার আওতায় আসবে না।
কিন্তু গত দুই বছরেও এই নীতিমালা মেনে ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেনি। এ বিষয়ে বিএসইসি কমিশনার শামছুদ্দিনে আহমেদ বলেন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩১টি ব্যাংকের অধিকাংশই এ বিষয়ে ফান্ড গঠনের জন্য বোর্ড গঠন করেনি। আবার বোর্ড গঠন করলেও সেই বোর্ডে ফান্ড গঠনের বিষয়টি পাস হয়নি। আবার পাস হলেও ফান্ডে টাকা দেওয়া হয়নি। আবার ফান্ডের টাকা দেওয়া হলেও সে টাকা ব্রোকারেজ হাউজ বা মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করছে না। সে কারণে সার্বিক বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। ফান্ডকে গতিশীল করার জন্যই এ মিটিং ডাকা হয়েছে।
উল্লেখ্য ৫ বছরের জন্য ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগকে নীতিমালা থেকে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ২০০ কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করতে। ওই তহবিলের অর্থ বিনিয়োগের ব্যাপারে একটি নীতিমালাও ঘোষণা করেছে। এ বিষয়ে ২০২০ সালের ১০ ফ্রেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তিনটি সার্কুলার জারি করা হয়। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য এগুলো পাঠানো হয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে। শেয়ারবাজারকে চাঙ্গা করতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওইসব সার্কুলার জারি করেছিলো ।
সূত্র জানায়, প্রচলিত আইন অনুযায়ী, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের রেগুলেটরি মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে। এর বেশি তারা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে না। ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন, রিজার্ভ তহবিলে থাকা অবণ্টিত মুনাফা, প্রিমিয়াম আয় ও রিটার্ন আয়-এই চারটি উপাদান মিলে হচ্ছে রেগুলেটরি মূলধন।
বেশির ভাগ ব্যাংকই ইতিমধ্যে ওই সীমার চেয়ে বেশি অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছে। যে কারণে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিলো। ব্যাংকগুলো আইনের বাধ্যবাধকতার কারণে পারছিল না। যে কারণে ব্যাংকগুলোকে ওই আইনের আওতা থেকে ২০০ কোটি বিনিয়োগের সীমা অব্যাহতি দেয়া হয়। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী বছর শেষে ব্যাংকগুলোকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সার্বিক অবস্থা, লোকসান হলে এর বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হতো। এছাড়াও আরও কিছু নিয়ম পালন করতে হতো।
২০২০ সালের ওই সার্কুলারে এগুলোর আওতা থেকে ব্যাংকগুলোকে আগামী ৫ বছরের জন্য অব্যাহতি দেওয়া হয়। অর্থাৎ ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে লোকসান দিলেও এর বিপরীতে কোনো প্রভিশন রাখতে হবে না। ফলে তাদের তহবিল ব্যবস্থাপনার ওপর বাড়তি চাপ কমবে। একইসঙ্গে ব্যাংকগুলোর পুঁজি বাজারে বিনিয়োগ সীমা বাড়বে।
দেশে বর্তমানে ৫৭টি ব্যাংক ব্যবসা করছে। এরা প্রত্যেকে ২০০ কোটি টাকা করে বিনিয়োগ করলে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগ করতে পারবে। তবে পুজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩১ ব্যাংকের হিসেবটাকে গুরুত্ব দিচ্ছে বিএসইসি। এই ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ করার সক্ষমতা হবে ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
এ সম্পর্কে শেয়ারবাজার বিশ্লেষকরা বলেছেন, বাজারে তহবিল বাড়ানোর জন্য এ সিদ্ধান্ত ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তবে তহবিল ব্যবহারের কঠোর নীতিমালা বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করবে। সার্কুলারে বলা হয়, প্রতিটি ব্যাংককে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য ২০০ কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করতে হবে। তিনভাবে ব্যাংকগুলো এই তহবিল গঠন করতে পারবে। এর মধ্যে রয়েছে, নিজস্ব উৎস থেকে, ট্রেজারি বিল বা ট্রেজারি বন্ড বাংলাদেশ ব্যাংকে বন্ধক রেখে তার বিপরীতে অর্থ নিয়ে।
ব্যাংকগুলো ২০২৫ সালের ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত যে কোনো কার্যদিবসে ২০০ কোটি টাকার সীমার যে কোনো পরিমাণ অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তুলতে পারবে। এর সুদের হার হবে ৫ শতাংশ। সাধারণত ট্রেজারি বিল বা ট্রেজারি বন্ড রেপোর মাধ্যমে নিলাম করে টাকা তুলতে হয়। এক্ষেত্রে কোনো নিলামের প্রয়োজন হবে না। ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত তারল্য হতে এ সুবিধা নিতে পারবে।
বিনিয়োগে ঝুঁকি কমানোর জন্য এ তহবিলের মধ্যে ১০ শতাংশ অর্থ মেয়াদি বা বে-মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে হবে। একইসঙ্গে বন্ড মার্কেট উন্নয়নে এ তহবিলের ১০ শতাংশ অর্থ বিশেষ পারপাস ফান্ডে বিনিয়োগ করতে হবে।
২০০ কোটি টাকার মধ্যে ব্যাংকের নিজস্ব পোর্টফোলিও উন্নয়নে ৪০ শতাংশ অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কোম্পানির পোর্টফোলিওর উন্নয়নের ২০ শতাংশ অর্থ ব্যবহার করা যাবে। অন্য প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কেনার জন্য ৩০ শতাংশ বিনিয়োগ করা যাবে। অন্যান্য মার্চেন্ট ব্যাংক বা ব্রোকার হাউসের উন্নয়নে ১০ শতাংশ অর্থ বিনিয়োগ করা যাবে। ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের পোর্টফোলিও বাড়ানোর জন্য সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ সুদে বিনিয়োগ করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট গ্যারান্টিতে এই ঋণ দেওয়া যাবে।
এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো নিজ ব্যাংকের শেয়ার কিনতে পারবে না। অন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ২ শতাংশের বেশি শেয়ার কিনতে পারবে না। অন্য কোম্পানির শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে তাদের মোট শেয়ারের ১০ শতাংশের বেশি কেনা যাবে না। মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে মেয়াদি ১০ শতাংশ ও মেয়াদবিহীন ফান্ডে ১৫ শতাংশ বিনিয়োগ করা যাবে।
যেসব কোম্পানি গত ৩ বছরে ১০ শতাংশ করে বোনাস বা নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে কেবল ওইসব কোম্পানির শেয়ার কেনা যাবে। যেসব মিউচুয়াল ফান্ড বিগত ৩ বছর ধরে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে ওইসব শেয়ার কেনা যাবে। উল্লেখ্য, শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতনের ফলে বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভের মুখে সেসময় প্রধানমন্ত্রী শেয়ারবাজারে টাকার প্রবাহ বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর আওতায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিলো। দুই বছর পর আবারো দরপতনের বৃত্তে আটকে রয়েছে শেয়ারবাজার। সেখান থেকে বেরোনো উদ্দেশ্যে আজ বুধবার ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ ফান্ডের অগ্রগতি জানতে বৈঠকের আয়োজন করেছে বিএসইসি।
(দ্য রিপোর্ট/ টিআইএম/৮ মার্চ,২০২২)