‘তামিম খারাপ কাজ করেছে’, চিরকুটে লিখে স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় বখাটের নির্যাতনের শিকার হয়ে আশামণি নামের দশম শ্রেণির এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে নিজের ঘরের আড়া থেকে ওই ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় তার হাতে লেখা দুটি চিরকুট উদ্ধার করেছে পুলিশ। চিরকুটে তামিম আহমেদ স্বপন খান (২৫) নামের এক বখাটের নাম উল্লেখ করে মেয়েটি।
তামিম তাকে একটি কক্ষে আটকে রেখে তার সঙ্গে খারাপ কাজ করেছে বলে চিরকুটে লেখা আছে।
ঘটনার পর থেকে তামিম পলাতক রয়েছেন। তামিম মেলান্দহ উপজেলার সাধুপুর ইউনিয়নের চরবসন্ত গ্রামের মো. খোকার ছেলে। মেয়েটিকে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে তামিমকে আসামি করে গতকাল শুক্রবার মেলান্দহ থানায় মামলা করেছেন মেয়েটির বাবা রাজমিস্ত্রি মো. আবু সাঈদ। মেয়েটির বাড়ি মেলান্দহ পৌর এলাকার শাহজাদপুর গ্রামে। সে স্থানীয় মালঞ্চ এম এ গফুর উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ত।
জানা যায়, মায়ের উদ্দেশে লেখা মেয়েটির একটি চিরকুটে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার দিনে ওয়াহাব চেয়ারম্যানের ভাতিজা তামিম আহমেদ স্বপন তাকে একটি রুমে আটকে রেখে তার সঙ্গে সময় কাটিয়েছে। আরেকটি চিরকুটে বলা হয়েছে, তামিম তার সঙ্গে খারাপ কাজ করেছে।
মেয়েটির পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার স্কুল ছুটির পর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বাড়িতে ফেরে আশামণি। এরপর দুপুরের খাবার খেয়ে ঘুমানোর কথা বলে নিজ ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ে। কিন্তু ঘুম থেকে না ওঠায় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তার মা তাকে ডাকতে গিয়ে দেখেন, ঘরের ভেতরে বিছানার ওপর বাঁশের আড়ার সঙ্গে সে ঝুলছে। মায়ের চিৎকারে লোকজন ছুটে গিয়ে তাকে মেলান্দহ উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতেই মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় মেলান্দহ থানা পুলিশ। গতকাল শুক্রবার জামালপুর সদর হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
মেয়েটির বাবা আবু সাইদ অভিযোগ করেন, ‘আশামণির স্কুলে যাওয়া-আসার পথে তাকে বিভিন্ন সময় তামিম উত্ত্যক্ত করত। আশামণি বৃহস্পতিবার সকালে তার বান্ধবীর সঙ্গে স্কুলে যায়। স্কুল থেকে ফিরে এসে ঘুমানোর কথা বলে সে আত্মহত্যা করেছে। তার হাতের লেখা চিঠি পড়ে জানতে পারলাম, তামিম তাকে আটকে রেখে তার সঙ্গে খারাপ কাজ করেছে। মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করেছে। আমি তামিমের গ্রেপ্তার ও ফাঁসি চাই।’
মেলান্দহ থানার ওসি এম এম ময়নুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ময়নাতদন্ত শেষে মেয়েটির মরদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে তামিম আহমেদ স্বপন খানকে একমাত্র আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। তামিম পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।’
ওসি আরো বলেন, মেয়েটির হাতে লেখা দুটি চিরকুটের সূত্র ধরে পুলিশি তদন্তে হয়তো অনেক কিছুই বেরিয়ে আসবে। তামিম গ্রেপ্তার হলে এবং লাশের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে বিস্তারিত জানা যাবে।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১২ মার্চ, ২০২২)