প্রণোদনার গরু নেতার খামারে!
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মানুষদের স্বাবলম্বী করতে সরকারিভাবে দেওয়া প্রণোদনার দুটি গরু স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার খামার থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, প্রণোদনার তালিকা অনুসারে গরু দুটির মালিকানা রাধাবাড়ি বস্তাপাড়া গ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর দরিদ্র বিজয় কুমার ও মহীপুর সাওতালপাড়ার রাবন হলেও পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোসাইদ আল আমিন সাদ তা নিজের খামারে নিয়ে গেছেন।
অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার বিকেলে গরু দুটি ওই নেতার খামার থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
পাঁচবিবি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও প্রণোদনা বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব ডা. মো. নিয়ায কাযমীর জানান, কাগজে-কলমে যাদের নামে গরু দুটির মালিকানা রয়েছে তাদের বাড়িতে গরু ছিল না। গরু পাওয়া গেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার খামারে। প্রণোদনার শর্ত ভঙ্গ করায় ওই দুই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে আর এই গরু দেওয়া হবে না। পরবর্তীতে কমিটিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অন্য দু’জনকে গরু দুটি দেওয়া হবে।
জেলা প্রাণী সম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারি প্রণোদনা হিসেবে গত বছরের নভেম্বর মাসের ৩ তারিখে পাঁচবিবি উপজেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের দরিদ্র পরিবারের মাঝে ৬৩টি গরু বিতরণ করা হয়। পরিবারগুলোকে স্বাবলম্বী করার লক্ষে সরকারিভাবে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। যেখানে শর্ত রয়েছে, প্রণোদনার গরু কখনও কেনাবেচা করা যাবে না। শর্ত ভঙ্গ করলে উভয়পক্ষ অপরাধী হবেন। নির্ধারিত কমিটির মাধ্যমে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে প্রণোদনার তালিকা অনুসারে নাম ডেকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষদের মাঝে গরুগুলো বিতরণ করা হয়।
কিন্তু তালিকায় থাকা গরুর মালিক রাধাবাড়ি বস্তাপাড়া গ্রামের বিজয় কুমার এবং মহীপুর সাওতাল পাড়ার রাবনের গরু দু’টি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মোসাইদ আল আমিন সাদ তার খামারে নিয়ে গেছেন এমন অভিযোগ উঠে।
অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ শনিবার বিকেলে ওই নেতার খামার থেকে প্রণোদনার গরু দু’টি উদ্ধার করে।
পাঁচবিবির রাধাবাড়ি বস্তাপাড়ার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বিজয় কুমার বলেন, প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে প্রণোদনা হিসেবে গরুটি আমাকে দেওয়া হলেও পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোসাইদ আল আমিন সাদ বাড়ি ফেরার পথে তার লোকজন দিয়ে আমার কাছ থেকে গরু ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। এসময় তিনি বলেন, ‘তালিকায় তোর নাম আমি দিয়েছি। এর পেছনে আমার অনেক টাকা খরচ হয়েছে। তাই তোর গরু নিয়ে গেলাম।’ বিষয়টি আমি প্রাণিসম্পদ অফিসেও জানিয়েছি।
রাবনের গরুর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ওই নেতার গরুর খামারে কাজ করি। তাই গরুর বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারবো না।
ছিনতাইয়ের অভিযোগ অস্বীকার করে মোসাইদ আল আমিন সাদ বলেন, ‘তারা আমার নিকট গরুগুলো বিক্রি করেছে। এর বাহিরে কিছুই না। তবে আমার জানা ছিল না যে, অনুমতি ছাড়া প্রণোদনার গরু কেনাবেচা করা যায় না। জানলে কিনতাম না’। তিনি বিষয়টি তদন্তেরও দাবি জানান।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাহফুজার রহমান বলেন, পাঁচবিবি উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে প্রণোদনার তালিকা করে গত বছরের ৩ নভেম্বর গরুগুলো ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর দরিদ্র মানুষদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে শনিবার বিকেলে পাঁচবিবির স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার খামার থেকে গরু দু’টি উদ্ধার করা হয়েছে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১৪ মার্চ, ২০২২)