কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠায় সিএসই ও এমসিএক্সের মধ্যে চুক্তি হবে
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বাংলাদেশে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জের (এমসিএক্স) সঙ্গে পরামর্শ চুক্তি করতে চায় চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)।
সিএসইর পক্ষ থেকে পাট, তুলা, স্বর্ণ, আলু, পেঁয়াজ, চা ইত্যাদি পণ্যের মধ্য থেকে এক বা একাধিক পণ্য কমোডিটি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে কেনাবেচা করা যায় কি না সে বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। একটি কেন্দ্রীভূত বাজারের সঙ্গে পণ্য ব্যবসা ও ভোক্তাদের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে সংগঠিত ও স্বচ্ছ বাজার সিন্ডিকেট ও দামের কারসাজি কমাতে এ ধরনের এক্সচেঞ্জ মুখ্য ভূমিকা পালন করবে।
উল্লেখ্য, কমোডিটি এক্সচেঞ্জ হলো এমন একটি লেনদেন ব্যবস্থা, যেখানে বিভিন্ন পণ্য কেনাবেচা করা হয়ে থাকে। কাগুজে বা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে এই কেনাবেচা নিষ্পত্তি হবে। মূল এ লেনদেনকৃত পণ্যটি কোনো গুদামে বা মাঠে থাকে। সেখান থেকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর এটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি বা হস্তান্তর হয়। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ অনুযায়ী, কৃষিপণ্য, মাছ, গবাদিপশু, খনিজ ও জ্বালানি পণ্য, বনজ সম্পদসহ উৎপাদিত যেকোনো পণ্যই কমোডিটি এক্সচেঞ্জের আওতায় কেনাবেচা করা যাবে। এসব পণ্য কেনাবেচা বা লেনদেনের জন্য যে প্রতিষ্ঠান গঠন করা হবে, সেটাই কমোডিটি এক্সচেঞ্জ নামে পরিচিত হবে।
দেশে প্রথমবারের মতো কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করার উদ্যোগ এটি। ইতোমধ্যে এ কাজের জন্য সিএসইকে অনুমোদন দিয়েছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। পাশাপাশি মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জের সঙ্গে পরামর্শ চুক্তি করার জন্য অনুমোদন দিয়েছে বিএসইসি।
কমোডিটি এক্সচেঞ্জ গঠনের বিষয়ে পূর্ব অভিজ্ঞতানেই সিএসইর। তাই এ বিষয়ে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জের (এমসিএক্স) সঙ্গে পরামর্শ চুক্তি করতে চায় সিএসই।
সম্প্রতি বিএসইসির পক্ষ থেকে সিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে এ সংক্রান্ত পাঠানো এক চিঠি থেকে এই অনুমোদনের বিষয়ে জানাগেছে।
বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জের কাছ থেকে চুক্তি অনুযায়ী পরামর্শভিত্তিক পরিষেবাগুলো নিতে পারবে সিএসই। তবে তা বাংলাদেশের আইন মেনে নিতে হবে।
এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ পরিদর্শনের জন্য চারজন প্রতিনিধিকে মনোনয়ন দেয় বিএসইসি। এর মধ্যে ছিলেন- বিএসইসি’র কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, পরিচালক মো. মনসুর রহমান, অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ও সহকারী পরিচালক মো. মেহেদী হাসান রনি। এদিকে এ সফরে সিএসই থেকে পাঁচজন প্রতিনিধিকে মনোনীত করা হয়। তারা হলেন- সিএসই’র চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম, শেয়ারহোল্ডার পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর এমদাদুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গোলাম ফারুক, সহকারী মহাব্যবস্থাপক মাকসুদুর রহমান এবং উপ-ম্যানেজার ও সিএসই’র প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট কমিটির সচিব মো. ফয়সাল হুদা। এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে দুজন প্রতিনিধিকে সফরে অংশগ্রহণের জন্য মনোনয়ন দেয়। ভারত সফরে নেতৃত্ব দেয় বিএসইসি’র কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।
তবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করোনা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার কারণে ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ পরিদর্শন স্থগিত করা হয়। কিন্তু এ পরিস্থিতির মধ্যেও তাদের সঙ্গে সিএসই যোগাযোগ অব্যাহত রাখে। এরই ধারাবাহিকতায় ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জের সঙ্গে সিএসই পরামর্শ চুক্তি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গোলাম ফারুক বলেন, দেশে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার জন্য ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জের সঙ্গে পরামর্শ চুক্তি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর এ বিষয়ে বিএসইসি অনুমোদন দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘দেশে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে। অনেকের মতে এ ধরনের এক্সচেঞ্জ আরো আগেই হওয়া উচিত ছিল। দেশের কমোডিটি পণ্যকে যদি স্ট্যাবল করতে হয়, তাহলে কমোডিটি এক্সেচেঞ্জের বিকল্প নেই। কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করা হলে ব্যবসায়ী ও ক্রেতা উভয়েই আরও বেশি সুবিধা পাবেন।’
সিএসই সূত্রে জানা গেছে, বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, সিএসই ইতোমধ্যে প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী কমোডিটি এক্সচেঞ্জের প্ল্যাটফর্ম পরিচালনার পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশ পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন প্ল্যাটফর্মে সব ধরনের বিনিয়োগকারীকে পণ্য লেনদেনের সুবিধা দিতে কাজ চলছে। তবে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করলে প্রথম পর্যায়ে নন ডেলিভারি ক্যাশ সেটেলমেন্ট পদ্ধতি অনুসরণ করতে চায় সিএসই। ফলে ফিজিক্যাল ডেলিভারি ক্যাশ সেটেলমেন্ট পদ্ধতি না থাকার কারণে সাময়িকভাবে ওয়্যারহাউজ ও গোডাউন লাগছে না। তবে পরবর্তীতে ফিজিক্যাল ডেলিভারি ক্যাশ সেটেলমেন্ট পদ্ধতি চালু করা হবে। এ জন্য সিএসই শিগগিরই কনসালটেন্ট নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে। কনসালটেন্টের পরামর্শে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে, কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করার আগে স্টোরেজ মেকানিজম ও ম্যানেজমেন্ট, ডেলিভারি সিস্টেম, ক্লিয়ারিং ও সেটেলমেন্ট সিস্টেম, হিউম্যান রিসোর্সসহ, বাজার স্থাপনের বিষয়টি বিবেচনা করছে সিএসই। এসব বিষয়ে ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ সিএসইকে পরামর্শ প্রদান করতে সম্মত হয়েছে।
(দ্য রিপোর্ট/ টিআইএম/২৪মার্চ,২০২২)