আধুনিক ফার্নিচার শিল্পের ফ্রন্ট লাইনার নইমুল হোসেন খান
টুটুল রহমান: দেশ-বিদেশে বর্ণাঢ্য শিক্ষাজীবন শেষে লোভনীয় চাকরি ও স্কলারশিপের সুযোগ ছেড়ে ফার্নিচার মেশিনারি শিল্পের ব্যবসা শুরু করেন তরুণ উদ্যোক্তা মোঃ নইমুল হোসেন খান। তিনি একাধারে বিশ্বমানের ফার্নিচার মেশিন ব্র্যান্ড উড টেক সলিউশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং একজন শিল্প উদ্যোক্তা। এমএসসি ও এমবিএ করা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যবসায়ী জনাব খান নিজেকে আসবাবপত্র/দরজা উৎপাদন, কাচ ও পাথর প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তি, উৎপাদন ব্যবস্থাপনা, বিক্রয় ও বিক্রয় ব্যবস্থাপনায় নিজেকে যুক্ত করেছেন।
নইমুল হোসেন খান দুই দশক ধরে এই শিল্পের উন্নয়নে অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছেন। ২০০৫ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশ, হংকং ও সুইডেনে উড টেক সলিউশন, কনফিক্স টেক পিএলসি, মেটাল টেক সলিউশন, এনএইচকে টেকড্রাইভে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও শিল্প পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন।
জনাব খান ২০০৩-২০০৮ অবধি ৫ বছর ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, আইইউবি, আইআইইউসি’তে অ্যাডজাংক্ট ফ্যাকাল্টিতে এমবিএ প্রোগামে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেন। তার আগে তিনি ১৯৯৯-২০০৫ সাল অবধি ঢাকায় অবস্থিত জার্মান কম্পানী রবার্ট বোশ জিএমবিএইচ-এর ম্যানেজার হিসেবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
নইমুল হোসেন খান ২০০৬-২০০৭ সালে কানাডার রোজেনহেম ইউনিভার্সিটি অফ অ্যাপ্লাইড সায়েন্সেস নামক প্রতিষ্ঠানে উড টেকনোলজি ও কাঠ ভিত্তিক পণ্যের উৎপাদন ও উন্নয়ন বিষয়ে এমএসসি করেন। সেখানেই অটোমেশন, উৎপাদন ব্যবস্থাপনা, পণ্য উন্নয়ন, উপাদান বিজ্ঞান, উৎপাদন ও লজিস্টিক বিষয়ে উচ্চতর বিদ্যা অর্জন করেন।
২০০০-২০০২ সালে জনাব খান কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটি- টেপার স্কুল অফ বিজনেসে ব্যবসায় প্রশাসনে মাস্টার (মার্কেটিং)ডিগ্রী অর্জন করেন। তার আগে ১৯৯৪-১৯৯৯ সালে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় এমএসসি ডিগ্রি করেন।
নইমুল হোসেন খান এর হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান উড টেক সলিউশন কাঠের তৈরি আসবাবপত্র প্রস্তুতকারকদের কারিগরি সমস্যার সমাধান প্রদান করছে। কোন প্রতিষ্ঠানের ফ্যাক্টরী ডিজাইন, প্রোডাকশন লেআউট প্ল্যান, মেশিন সিলেকশন ও সরবরাহ, প্রশিক্ষন, বিক্রয়ত্তোর সেবা, দক্ষ জনবল তৈরী করে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো সহ নানা বিষয় নিয়ে কাজ করছে ফার্নিচার শিল্পের এই ফ্রন্ট লাইনার।
তাঁর হাত ধরেই বাংলাদেশের অনেক নামীদামী ব্র্যান্ডের ফার্নিচার কারখানার আধুনিকায়ন হয়েছে। কেরানিগঞ্জে তিনি গড়ে তুলেছেন বাংলাদেশের প্রথম উড ওয়ার্কিং টেকনোলোজী সেন্টার। যেখানে বিনামূল্যে ফার্নিচার শিল্প সংশ্লিষ্টরা টেকনোলজি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন।
নইমুল হোসেন খান বাংলাদেশে বসে তাঁর জ্ঞান ও সেবার পরিধি পুরো পৃথিবীতে বিস্তার করছেন। তিনি ফ্যাক্টরী সেটআপের জন্য সারা পৃথিবীব্যাপী প্রয়োজনীয় সব পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বর্তমানে তাকে পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় উড টেকনোলেজী এক্সপার্ট হিসেবে গন্য করা হয়।
উড টেক সলিউশন বিশ্বের ৪৩টি দেশে ফার্নিচার মেশিনারিজ রপ্তানী করার পাশাপাশি মালিক ও কারিগরদের বিনামূল্যে ফার্নিচারের ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান ও নতুন ডিভাইস উদ্ভাবন করছে। এ পর্যন্ত সারাদেশে উড টেক সলিউশন কয়েকশ ওয়ার্কশপের আয়োজন করেছে যার মাধ্যমে কয়েক হাজার কারিগড় এ মালিক উন্নত প্রযুক্তি বিদ্যা ও আধুনিক ফার্নিচার মেশিনারিজ ব্যবহার করে নিজেদের ভাগ্য বদল করছে।
দেশের দ্বিতীয় ও তৃতীয় আধুনিক ফার্নিচার কারখানা নাভানা ও পারটেক্স প্রতিষ্ঠায় টেকনোলোজী সাপোর্টসহ পরবর্তীতে সব ব্র্যান্ডেড ফার্নিচার কারখানার আধুনিকায়নে সহায়তা করেছে উড টেক সলিউশন।
২০০৮ সালে সুইস কনটাক্ট ক্যাটালিস্টের মাধ্যমে বার্জারের সাথে যৌথ অর্থায়নে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো কাঠের কাজের ওপর ১০ হাজার হ্যান্ডবুক ও মেশিন অপারেশন ভিডিও সিডি তৈরি করে বিতরণ করে।
২০২০ সালে এই প্রতিষ্ঠান সিএনসি মেশিনের জন্য বিশ্বে প্রথম একটি ডিভাইস উদ্ভাবন করে। যেটি ব্যবহারে মেশিন চালু থাকা অবস্থায় বিদ্যুৎ চলে গিয়ে আবার ফিরে আসলে, যেখানে কাজ বন্ধ হয়েছিল সেখান থেকেই সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় ভাবে শুরু হবে। এই ডিভাইসটির পেটেন্টের জন্য আবেদন করা হয়েছে।
ঢাকার কেরানীগন্জে উড টেক সলিউশনের প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম উড টেকনোলোজী সেন্টারে যে কোনো কারখানার মালিক ও কারিগররা আধুনিক দরজা ও আসবাবপত্র তৈরির প্রশিক্ষণ নিতে পারবে। ব্যবহারিক ধারণার পাশাপাশি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ ও খাবার সরবরাহ করা হয় এখানে।
দেশের আসবাব পত্র ও দরজা শিল্পকে আধুনিকায়নে নিরব বিপ্লব ঘটিয়েছে এই সেন্টার। বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্পের পরেই দ্বিতীয় বৃহত্তম সমভাবনাময় শিল্পখাত হচ্ছে ফার্নিচার শিল্প। এর মাধ্যমে কোটি কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বিবেচনায় এই খাতের দিকে সংশ্লিষ্টদের সুনজর দেয়ার আহবান জানান দেশের প্রথম উড ওয়ার্কিং টেকনোলিজ সলিউশন সেন্টারের এই পরিশ্রমী উদ্যোক্তা।
(দ্য রিপোর্ট/ টিআইএম/২৬ মার্চ)