১০ বছরের আর্থিক প্রতিবেদন ধরে টান
ন্যাশনাল টি'র অনিয়ম খুঁজতে বিশেষ অডিট
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: তালিকাভুক্ত কোম্পানি ন্যাশনাল টির গত ১০ বছরের আর্থিক প্রতিবেদন বিশেষ অডিট বা নিরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সে জন্য একটি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে (চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফার্ম) নিয়োগ দিবে কমিশন।
কোম্পানিটির ২০১১ সালের ৩০ জুন থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১১টি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে আগ্রহপত্রসহ মূল্য তালিকা ১০ কার্যদিবসের মধ্যে জমা দিতে বলেছে কমিশন। বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিশেষ নিরীক্ষায় আর্থিক প্রতিবেদনের সত্যতা নিশ্চিতকরণ, আর্থিক সক্ষমতা যাচাই, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অডিটরদের ভূমিকা, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী ব্যাংক ঋণের সত্যতা যাচাই করা হবে। এছাড়া কোম্পানির পূর্বের লভ্যাংশ ঘোষণার প্রবণতা এবং নীতির সাথে ব্যাংক ঋণের বাইরে লভ্যাংশ ঘোষণার প্রাসঙ্গিকতাসহ আরো বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করবে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান।
বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে ১১টি নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানকে বিএসইসি যে চিঠি দিয়েছে তাতে উল্লেখ করা হয়- ন্যাশনাল টি কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে উল্লিখিত ব্যালেন্স শিট এবং আর্থিক বিবৃতির সম্পদ, দায় (ব্যালেন্স শিট দায়বদ্ধতা সহ), ইক্যুইটি এবং উপার্জনের সঠিত তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে কি-না তা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ডস (আইএফআরএস) এবং ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড অন অডিটিং (আইএসএ) অনুযায়ী যথাযথভাবে আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে কি-না তা দেখতে হবে। বিশেষ নিরীক্ষক প্রাসঙ্গিক সমর্থনসহ বিলম্বিত কর (ডেফার্ড ট্যাক্স) নির্ধারণের সম্ভাব্য উপায়গুলি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করবে। কোম্পানির নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন এবং নিরীক্ষকের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে। বিশেষ নিরীক্ষক ২০১৬ সালের ৩০ জুন হওয়া হিসাব বছর পর্যন্ত এবং পরবর্তী হিসাব বছরের তুলনামূলক আর্থিক কর্মক্ষমতা নির্ণয় করতে হবে। কোম্পানিটির প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন প্রতিষ্ঠায় স্ট্যাটুটরি অডিটর এবং কমপ্লায়েন্স অডিটরের ভূমিকা পর্যালোচনা করতে হবে। বিশেষ নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান কোম্পানিটির স্থায়ী সম্পদের মূল্য নির্ধারণের জন্য কোম্পানির নীতি পরীক্ষা করবে এবং সম্পদের সম্ভাব্য অবচয় ও তার স্থায়ীত্বকাল পর্যালোচনা করবে। কোম্পানির ব্যবহারিক ক্ষমতা এবং গত কয়েক বছরের জন্য অপারেটিং নগদ প্রবাহের প্রবণতা পর্যালোচনা করবে। বৃক্ষরোপণসহ সকল সম্পদের তথ্য সঠিকভাবে আর্থিক প্রতিবেদনে উপস্থাপন করা হয়েছে কি-না তা যাচাই করে প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে। বিশেষ নিরীক্ষক স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী উভয় ব্যাংক ঋণের তথ্য তদন্ত করবে।
এছাড়া চিঠি আরো উল্লেখ করা হয়, শ্রমিকদের প্রদান করা অর্থসহ সামগ্রিক বেতন ব্যবস্থার সঙ্গে কোম্পানি পরিচালনার ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যপূর্ণতা রয়েছে কি-না তা পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে। কাঁচামাল সংগ্রহ, বিক্রয় পণ্যের মূল্য এবং আমদানির সংগ্রহ করে তদন্ত করবে বিশেষ নিরীক্ষক। একইসঙ্গে সম্ভাব্য সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে লেনদেনের নথির প্রমাণ শনাক্ত করবে। বিশেষ নিরীক্ষক কোম্পানির পূর্বের লভ্যাংশ ঘোষণার প্রবণতা এবং কোম্পানির নীতির সঙ্গে ব্যাংক ঋণের বাইরে লভ্যাংশ ঘোষণার প্রাসঙ্গিকতা পর্যালোচনা করবে। কোম্পানির সামগ্রিক পরিচালনায় পরিচালনা পর্ষদ, অডিট কমিটি, মনোনয়ন ও পারিশ্রমিক কমিটি, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও), কোম্পানি সচিব, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) এবং অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রধানসহ শীর্ষ ব্যবস্থাপনার ভূমিকা যাচাই করবেন। সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে লেনদেনের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম পেলে তা প্রমাণসহ জমা দিতে হবে। বিশেষ নিরীক্ষক সহায়ক নথিসহ রাজস্ব স্বীকৃতি এবং পরিমাপের মানদণ্ড যাচাই করবে। বিশেষ নিরীক্ষক জৈবিক সম্পদ, ভবন ও অন্যান্য নির্মাণ এবং অন্যান্য স্থায়ী সম্পদ সম্পর্কে অনুসন্ধান কবে। কোম্পানিটির ইনভেন্টরি মূল্যায়ন, হিসাব গ্রহণযোগ্য, অগ্রিম, আমানত ও প্রিপেমেন্ট এবং অন্যান্য বর্তমান সম্পদের সঠিক তথ্য অনুসন্ধান করবে। আর বিশেষ নিরীক্ষক অপারেটিং খরচ (বিশেষ করে বেতন ও মজুরি, পারিশ্রমিক), কর্মচারি, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, নির্বাহী এবং বোর্ডের অন্যান্য সদস্যদের দেওয়া সুবিধাগুলি তদন্ত করে দেখবে৷
(দ্য রিপোর্ট / টিআইএম/২৭ মার্চ,২০২২)