রমজানে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় থাকবে : প্রধানমন্ত্রী
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধের বিস্তারিত পদক্ষেপের বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারের এসব কার্যক্রম গ্রহণের ফলে বাজারে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে এবং আশা করি আসন্ন পবিত্র রমজান মাসেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে থাকবে।
আজ বুধবার (৩০ মার্চ) জাতীয় সংসদে ফখরুল ইমামের (ময়মনসিংহ-৮) এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
ফখরুল ইসলাম জানতে চান ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনুগ্রহ করিয়া বলিবেন কি, বর্তমানে দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পাইয়া চলিয়াছে; যেই কারণে সাধারণ মানুষ চোখে অন্ধকার দেখিতেছে; তাই বাজার নিয়ন্ত্রণ ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করিবার লক্ষ্যে সরকার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করিয়াছে কিনা; করিলে তাহা কী?’
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীসহ সবধরনের পণ্যসামগ্রীর মূল্যের সাম্প্রতিক ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণপূর্বক তা সহনীয় পর্যায়ে রাখার লক্ষ্যে সরকার কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: আসন্ন পবিত্র রমজান উপলক্ষে দেশের সব সিটি করপোরেশন, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নিম্নআয়ের এক কোটি পরিবারের কাছে রমজান শুরুর আগে ও রমজানের মাঝামাঝি মোট দুইবার টিসিবির পণ্যসামগ্রী ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে নির্ধারিত মানদণ্ডের ভিত্তিতে টিসিবির পণ্যসামগ্রী বিক্রি করা হবে। তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় আগের মতো ট্রাক সেলের মাধ্যমে পণ্যসামগ্রী ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের সভাপতিত্বে নিয়মিত সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদ্যশস্যের বাজার দরের ঊর্ধ্বগতি রোধের লক্ষ্যে চালকল পর্যায়ে ধান মজুতের সর্বোচ্চ পরিমাণ দৈনিক ৮ ঘণ্টা হিসেবে পাক্ষিক ছাঁটাই ক্ষমতা ৫ গুণের স্থলে ৩ গুণে হ্রাস করা হয়েছে। পাইকারি বাজারগুলোতে মজুতদারি এবং বিভিন্ন রাইস মিলে অতিরিক্ত চাল মজুতের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে যাতে খাদ্যশস্যের মূল্যবৃদ্ধি করতে না পারে সে লক্ষ্যে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
সেই সঙ্গে ১০০টি বৃহৎ আকারের চালকলের মিলগেটের মূল্য নিয়মিত সংগ্রহ করে ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অভিযান এবং কেউ অবৈধ মজুতের মাধ্যমে বাজারে যাতে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রশাসনের সহায়তায় মেবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। ১০ টাকা দরে চাল বিক্রির খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে কর্মাভাবকালীন ৫ মাস (সেপ্টেম্বর-নভেম্বর মার্চ-এপ্রিল) সারা দেশে গ্রামাঞ্চলে ৫০ লাখ অতিদরিদ্র পরিবারের মধ্যে মাসে ৩০ কেজি করে চাল বিক্রি কার্যক্রম চালু রয়েছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, ওএমএস কর্মসূচি আওতায় বিক্রয় কেন্দ্রের সংখ্যায় প্রায় ৩ গুণ বৃদ্ধি করে বর্তমানে ২ হাজার ১৩টি কেন্দ্রে ওএমএস খাদ্যশস্য বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ওএমএস কর্মসূচি মহানগর ও জেলা পর্যায়ের পৌরসভাগুলোতে পরিচালনা করা হলেও বর্তমানে তা সম্প্রসারিত করে সব পৌরসভায় পরিচালনা করা হচ্ছে। সরকার এসব কার্যক্রম গ্রহণের ফলে বাজারে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে এবং আশা করি, আসন্ন পবিত্র রমজান মাসেও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং সে অনুযায়ী প্রতিবেদন উপস্থাপনের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে গঠিত দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল কর্তৃক প্রতিদিন বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন, টিসিবি এবং কৃষি বিপণন অধিদপ্তর হতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি ও সরবরাহ অবস্থা পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের এলসির তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড হতেও আমদানি তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এইসব তথ্য বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পর্যালোচনা করে পণ্যভিত্তিক প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণের নেতৃত্বে সকল জেলা ও উপজেলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার জন্য প্রতি মাসে জেলা টাস্কফোর্স কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত টাস্কফোর্স কমিটি জেলা ও উপজেলা বাজারসমূহে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। এ সকল মোবাইল কোর্ট পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী কর্তৃক ভোক্তাদের ওজনে কম না দেওয়া, অধিক মুনাফার মানসিকতা পরিহার, দোকানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের তালিকা টাঙ্গানো, খাদ্যদ্রব্যে রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার রোধ ও বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধির প্রবণতা রোধে জরিমানা আরোপ করে থাকে।
শেখ হাসিনা বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ সকল পণ্যের মূল্য নিয়ে কেউ যেন মনোপলি বা অলিগোপলি অবস্থার সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন সৃষ্টি করা হয়েছে । এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনও কাজ করে যাচ্ছে। দেশীয় শিল্প কারখানার উৎপাদন স্বাভাবিক রাখাসহ উৎপাদিত পণ্যের সরবরাহ ও বিপণন স্বাভাবিক রাখতে স্টেকহোল্ডারদের সাথে নিরবছিন্ন যোগাযোগের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। খাদ্যশস্যের বাজার দর নিয়ন্ত্রণ ও ঊর্ধ্বগতি রোধের লক্ষ্যে চালকল পর্যায়ে ধান মজুদের সর্বোচ্চ পরিমাণ দৈনিক ৮ ঘণ্টা হিসেবে পাক্ষিক ছাঁটাই ক্ষমতার ৫ গুণের স্থলে ৩ গুণে হ্রাস করা হয়েছে।
পাইকারি বাজারগুলোতে মজুদদারী বন্ধে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, খাদ্যশস্যের বাজার দর নিয়ন্ত্রণ ও ঊর্ধ্বগতি রোধের লক্ষ্যে চালকল পর্যায়ে ধান মজুদের সর্বোচ্চ পরিমাণ দৈনিক ৮ ঘণ্টা হিসেবে পাক্ষিক ছাঁটাই ক্ষমতার ৫ গুণের স্থলে ৩ গুণে হ্রাস করা হয়েছে। পাইকারি বাজারগুলোতে মজুদদারী এবং বিভিন্ন রাইস মিলে অতিরিক্ত চাল মজুদের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে যাতে খাদ্যশস্যের মূল্য বৃদ্ধি করতে না পারে লক্ষ্যে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সেইসাথে ১০০টি বৃহৎ আকারের চালকলের মিলগেটের মূলা নিয়মিত সংগ্রহ করে ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অভিযান এবং কেউ অবৈধ মজুদের মাধ্যমে বাজারে যাতে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে, সে লক্ষ্যে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা।
জাতীয় সংসদে ১৭তম অধিবেশনে প্রশ্ন উত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নিয়ে নিজের আনন্দ অনুভূতি প্রকাশ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী জানান, আশ্রয়হীন মানুষ ঘর পাওয়ায় শত দুঃখের বোঝা হালকা হয়েছে।
১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্টে পরিবারের সব সদস্যকে হারিয়ে প্রবাসের অসহনীয় জীবন ও পরবর্তীতে দেশে ফিরে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকারের অতীত কষ্টের কথা সংসদে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘরবাড়িহীন দুঃস্থ মানুষ নিজস্ব ঠিকানা পেয়েছেন। ঘর পাওয়ার পর এ ঠিকানাহীন মানুষদের আনন্দঅশ্রু আমাকে ছুঁয়ে যায়। নিঃস্ব দরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারাই আমার বড় আনন্দ। তাদের আনন্দঅশ্রু দেখে নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি বলে জানান সংসদে।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/৩০ মার্চ, ২০২২)