অধিকাংশ শেয়ারের দর কমলেও বেড়েছে সূচক ও লেনদেন
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বড় বিনিয়োগ আসছে এমন ঘোষণার পরদিন ১ হাজার কোটি টাকার লেনদেন দেখলো শেয়ারবাজার। এ দিন লেনদেনের প্রায় পুরোটা সময় সূচক কমতে থাকলেও বেলা ২টার পর থেকে দর ফিরে পেতে থাকে কোম্পানিগুলো । তাতে বৃদ্ধি পায় সূচকও। বেলা শেষে ৪ পয়েন্ট বেড়ে ৬৭৫৭ পয়েন্টে শেষ হয় সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবারের লেনদেন। দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১১৬ কোটি ৯৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, যা গত ১৬ ফেব্রুয়ারির পর সর্বোচ্চ।
সপ্তাহের শেষদিন সূচক বেড়েছে তবুও কমেছে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম। এদিনদাম কমেছে ১৮৩ টি কোম্পানির শেয়ারের। বিপরীতে বেড়েছে ১৩৪ টি কোম্পানির দর। অপরিবর্তিত থেকে গেছে ৬২ টি কোম্পানির শেয়ারদর। ডিএসই শরীয়া সূচকও ৪ পয়েন্ট বেড়ে ১৪৬৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ডিএসই ৩০ সূচক ৮ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ২৪৭৪ পয়েন্টে।
ঢাকা স্টক একচেঞ্জ(ডিএসই) ওয়েবসাইট সুত্রে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার লেনদেনের শুরুতে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর হারাতে থাকে। কমতে থাকে লেনদেনের পরিমাণও । ধারণা করা হচ্ছিল রোজার আগে শেষ কার্যদিবসে পতন দেখবে বাজার।লেনদেন শুরুর ৩৮ মিনিটের মাথায় ১০:৩৮ টায় ৫ পয়েন্ট হারায় ডিএসই প্রধান সূচক ডিএসই এক্স। দুপুর ১২:১৬ মিনিটে দিনের সূচক আগের দিনের চেয়ে কমে যায় ২৩ পয়েন্ট। ডিএসইএক্স দাঁড়ায় ৬৭৩০ পয়েন্টে। বেলা ১:৩০ মিনিটেও ৬৭৩৮ পয়েন্ট ছিল প্রধান সূচক যা আগের দিনের চেয়ে ১৫ পয়েন্ট কম। তবে শেষ পৌনে ১ ঘণ্টার উত্থানে আগের দিনের চেয়ে ৪ পয়েন্ট বেড়ে শেষ হয় সপ্তাহের শেষ দিনের লেনদেন।
এদিন লেনদেনের শীর্ষের ১০টি প্রতিষ্ঠান হলো ফরচুন,সোনালী পেপার,জেনেক্স,বেক্সিমকো, আইপিডিসি,ফুয়াংফুড,ইয়াকিন পলিমার,বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস,কাটাল্লি টেক্সটাইল,বিডিকম।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের শুরুতে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিলেও যেন আগের সেই অবস্থায় ফিরে আসতে পারছিল না। পরবর্তী সময়ে ২৪ ফেব্রুয়ারী ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরু হলে দেখা দেয় আতঙ্ক। আবার এক বিশাল দরপতনে পড়ে দেশের পুঁজিবাজার। দরপতন ঠেকাতে দাম কমার সার্কিট ব্রেকার ২ শতাংশে নামিয়ে আনে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন(বিএসইসি)। একই সঙ্গে মার্কেটে বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যাংক, সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির সঙ্গে বৈঠকে বসে বিএসইসি। অ-তালিকাভুক্ত ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে চিঠি দেয় বিএসইসি। এসব পদক্ষেপেরপরও লেনদেনের পরিমাণ কমছিল বাজারে। আস্থা ফিরে পাচ্ছিলেন না বিনিয়োগকারীরা। এই পরিস্থিতিতে বাজার মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে বুধবার বৈঠকে বসে বিএসইসি। বৈঠকের খবরেও বিনিয়োগকারীরা যেন হারানো সাহস ফিরে পান। গতকালের (বুধবার) বৈঠক শেষে রমজান মাসে বিনিয়োগ বাড়ানোর সুস্পষ্ট ঘোষণা আসে। পাশাপাশি শেয়ার বাজারের জন্য জন্য বিএমবিএ যে ১০ হাজার কোটি টাকা তহবিল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিল, সে বিষয়েও গতকাল ইতিবাচক আশ্বাস দেন বিএসইসি কমিশনার শামসুদ্দিন আহমেদ । এ বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানানো বলে জানান তিনি।
পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন মধ্যস্থতাকারীদের সাথে বিএসইসির বৈঠকে আসা সিদ্ধান্তগুলো ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে বিনিয়োগকারীরা। যার প্রভাব পড়েছে লেনদেনে।
শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,শেয়ারবাজারে টাকা আসছে শুনে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে সুচকের সামান্য এই বৃদ্ধি আহামরি কিছু নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক এই শিক্ষক আরো বলেন ,যে কোম্পানির বেশি মুনাফা দিচ্ছে সে সবের দর কমে যাচ্ছে। এটা বাজারের জন্য শুভ সংকেত নয়। বিনিয়োগকারীরা গুজবে কান দিয়ে শেয়ার লেনদেন করেন বলেই সহজে প্রতারিত হন।
নিম্নগামী সার্কিট ব্রেকার ২ শতাংশ বেঁধে দেওয়ায় বিএসইসির সমালোচনা করে তিনি বলেন এভাবে কৃত্রিমভাবে বাজারে গতি আনা যাবে না। বাজারকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে।
(দ্য রিপোর্ট /মাহা/ টিআইএম/৩১ মার্চ,২০২২)