ইমরান খানের ভাগ্যে কী আছে, জানা যাবে আজ
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাবের আনুষ্ঠানিক ফায়সালা হয়ে যেতে পারে আজ রবিবার। স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১১টায় দেশটির জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসছে। ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিক হওয়া ইমরান খানের সরকারের পরিণতি এই অধিবেশনেই ঠিক হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে বিরোধী শিবিরের একজোট হওয়া থেকে ভোটের সম্ভাব্য ফলাফল এরই মধ্যে স্পষ্ট হয়ে গেছে।
যদিও খেলার মাঠের মতোই শেষ বলটির ওপর ভরসা করে ইমরান খান বলেছেন, তিনি হার মানবেন না। লড়বেন শেষ পর্যন্ত।
ক্ষমতায় থাকতে হলে তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা ইমরান খানকে মোট ৩৪২ আসনের (একটি আসন ফাঁকা) জাতীয় পরিষদের অন্তত ১৭১ জন সদস্যের সমর্থন নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু তাঁর বিরোধীরা এরই মধ্যে ১৯৯ জন সদস্যকে পক্ষে টেনে ফেলেছে বলে দাবি করা হচ্ছে। ইমরানের জোট সরকারের অন্যতম শরিক দল এমকিউএম গত বুধবার বিরোধী শিবিরে যোগ দেয়। সেদিনই পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য ভোটের সীমানা ফিতে ছুঁয়ে ফেলে বিরোধীরা। পরে আরো কয়েকজন যোগ দেওয়ায় দল আরো ভারী হয়েছে বিরোধীদের। গণিতের অমোঘ হিসাব উল্টে দিতে বড় ধরনের চমক ছাড়া কোনো উপায় দৃশ্যমান নয়। তবে ইমরান সে রকম ইঙ্গিতই দিয়েছেন গতকাল শনিবার।
বিরোধী দল পিএমএলের (এন) নেতা শাহবাজ শরিফ গত ২৮ মার্চ পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। তিন দিন বিরতির পর বৃহস্পতিবার সেই প্রস্তাবের ওপর বিতর্ক শুরু হয়। তবে বিরোধীরা তখনই ভোট চেয়ে হট্টগোল শুরু করে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই অধিবেশন রবিবার সকাল পর্যন্ত মুলতবি করেন স্পিকার। সেদিনই সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন ইমরান খান। এতে বিরোধীদের তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। প্রত্যয়ের সঙ্গে ঘোষণা করেন, ‘আস্থা ভোটের ফল যাই হোক, আমি আরো শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসব। ’
বিরোধী দলের পরিকল্পনা
বিরোধী দলগুলোর জোট আজ অনুষ্ঠেয় অনাস্থা প্রস্তাবে ভোট দেওয়ার একটি কৌশল তৈরি করেছে। হাতে পর্যাপ্ত সমর্থন থাকায় ইমরানের দলের ভিন্নমতাবলম্বী আইন প্রণেতাদের সরকারের বিপক্ষে ভোট দিতে নিষেধ করা হবে। বিরোধীদের একটি সূত্র জানায়, ভোটপ্রক্রিয়া যাতে বিতর্কিত না হয় তা নিশ্চিত করতে এবং এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত এড়াতে এই কৌশল নেওয়া হয়েছে। সরকারের তরফ থেকে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হয়েছিল, যাতে পিটিআইয়ের বিদ্রোহী সদস্যরা পার্লামেন্টে ভোট দিতে না পারেন। দলের বিপক্ষে ভোট দিলে তাঁদের যেন পার্লামেন্টের সদস্য পদের জন্য আজীবন অযোগ্য ঘোষণা করা হয়, সে আর্জিও ছিল তাতে।
ইমরানের ইউ টার্ন
ইমরান খান গতকাল আরেক দফা সিদ্ধান্ত পাল্টে তাঁর দলের আইনপ্রণেতাদের গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশনে যোগ দিয়ে ভোটপ্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। গত ৩০ মার্চ পিটিআই আইন প্রণেতাদের ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকা বা অনাস্থা প্রস্তাবে ভোট হওয়ার সময় অধিবেশনে যোগ না দিতে ‘কঠোর’ নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। পাশাপাশি ইমরান গতকাল দেশের যুবসমাজকে ‘বিদেশি ষড়যন্ত্রের’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার আহবান জানান। তিনি বারবার অভিযোগ করছেন, তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে। দেশবাসীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি টেলিফোন কলের সময় তিনি ওই আহবান জানান। সময় তিনবার পরিবর্তন করায় ওই প্রশ্নোত্তর পর্ব কয়েক ঘণ্টা বিলম্বে শুরু হয়।
জনগণকে রাস্তায় নামার আহবান : ইমরান খান অনাস্থা ভোটের আগের রাতে দেওয়া বক্তব্যে দেশবাসীকে রাস্তায় নামার আহবান জানিয়েছেন। তিনি আবারও জোর দিয়ে বলেছেন, ‘বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা’ ইসলামাবাদের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে চাইছে। গতকাল পাকিস্তানের এআরওয়াই নিউজে সরাসরি প্রশ্নোত্তর অধিবেশনে দেশের মানুষকে সম্বোধন করে কথা বলেন ইমরান খান।
ইমরান বলেন, ‘কিভাবে তাদের মোকাবেলা করা যায়, আমি তা নিয়ে পরিকল্পনা করছি। ইনশাআল্লাহ, আমি কিভাবে তাদের মোকাবেলা করব তা আপনারা দেখতে পাবেন। আমি চাই আমার জনগণ সজাগ থাকুক, প্রাণবন্ত থাকুক। অন্য কোনো দেশে এমন ঘটনা ঘটলে মানুষ রাস্তায় নেমে যেত। ’
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, ‘আমি আপনাদের সবাইকে আজ এবং আগামীকাল (আজ) রাজপথে নামার জন্য আহবান জানাচ্ছি। আপনাদের বিবেকের জন্য, এই জাতির স্বার্থে তা করা উচিত। কোনো রাজনৈতিক দল যেন আপনাদের তা করতে বাধ্য না করে। সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য আপনাদের রাজপথে নামা উচিত। সবাইকে ঘর থেকে বাইরে গিয়ে দেখাতে হবে যে আপনারা সতর্ক আছেন। ’
সেনাবাহিনীর আশীর্বাদ কি শেষ
ইমরান খান যে সেনাবাহিনীর সমর্থন পাওয়ার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন তা কোনো গোপন বা বিরোধপূর্ণ তথ্য নয়। অনেক বিশ্লেষক বলছেন, সেই সেনাবাহিনী সমর্থন উঠিয়ে নেওয়াই তাঁর খাদের কিনারে উপস্থিত হওয়ার বড় কারণ। কেউ কেউ বলেছেন, গত বছরের অক্টোবরে ইমরান প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের নতুন প্রধানের নিয়োগপত্রে সই করতে অস্বীকৃতি জানিয়েই নিজের পতন ত্বরান্বিত করেছেন। সর্বশেষ ইউক্রেনে হামলা শুরুর সময়েই রাশিয়া সফরে যাওয়ার বিষয়টি সেনাপ্রধানসহ প্রভাবশালী মহলের পছন্দ হয়নি বলে ইঙ্গিত মিলেছে। গতকাল সেনাপ্রধান কামার বাজওয়া ইসলামাবাদ নিরাপত্তা সংলাপে রুশ হামলার তীব্র নিন্দা করেন। স্পষ্টতই দীর্ঘদিনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের বিরাগভাজন হওয়ার ঝুঁকি নেওয়া পছন্দ হয়নি তাঁর।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০৩ এপ্রিল, ২০২২)