দেউলিয়া লেবাননের নাগরিকরা ছুটছেন ইরাকে
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: ইরাকে দুই দশক ধরে চলা সংঘাতের পর দেশটি নতুন করে সবকিছু শুরু করতে চাইছে। বিশেষ করে ২০১৭ সালে আইএসের সঙ্গে যুদ্ধে বিজয়ের পর তেলসমৃদ্ধ দেশটি ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতা অর্জন করছে।
এই তো কিছুদিন আগেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশ লেবানন ছিল চিকিৎসা ও পর্যটনের জন্য বিখ্যাত। ইরাকসহ বিভিন্ন দেশ থেকে চিকিৎসা ও অন্যান্য কারণে লোকজন লেবাননে আসত। পরিস্থিতি এখন বদলে গেছে। লেবানিজরাই তাদের দেশ ছেড়ে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিচ্ছেন।
ফ্রান্স টোয়েন্টি ফোরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিকট অতীতে মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে ইরাক ছিল সংঘাত ও গণ্ডগোলের এক দেশ। এখন সেই দেশই হয়ে গেছে অর্থনৈতিক সংকটে থাকা লেবাননের চাকরিপ্রত্যাশীদের জন্য অবারিত সুযোগ।
আকরাম জোহারি, ৪২ বছর বয়সী একজন লেবানিজ আরব। অর্থনৈতিক সংকট ও ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য বাড়ার ফলে তিনি লেবানন ছেড়ে বের হয়ে এসেছেন।
গত বছর আকরাম তার ব্যাগপত্র গুছিয়ে বৈরুত থেকে বাগদাদে চলে আসেন। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাজের সন্ধান করতে থাকেন। যদিও তার হাতে চাকরি খোঁজার মতো পর্যাপ্ত সময় ছিল না। তার পরও তার কাছে মনে হয়েছিল, লেবানন থেকে ইরাকে তার জন্য সুযোগ বেশি।
লেবানিজদের জন্য ইরাকে ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার থাকায় সহজেই তিনি বাগদাদে আসতে পেরেছেন। ফলে বাগদাদকে তার জন্য চাকরি খোঁজার ক্ষেত্রে ভালো বিকল্প মনে হয়েছিল।
ফ্রান্স টোয়েন্টি ফোরকে তিনি বলেন, ‘আমাকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হয়েছিল এবং বাগদাদে এসেই আমি ইনস্টাগ্রামে কাজের সন্ধান করতে থাকি।’ পরে একটি রেস্তোরাঁয় তিনি এক মাস কাজ করেন।
লেবানন একটি বড় ধরনের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পড়েছে। বিশ্বব্যাংক বলছে এ ধরনের বিপর্যয় একমাত্র যুদ্ধের সময় দেখা যায়। এর মধ্যে দেশটির মুদ্রার মান ৯০ শতাংশ হারিয়েছে। জাতিসংঘের মতে, লেবাননের জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশ এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে।
আকরাম জানিয়েছেন, এখন বাগদাদে কাজ করে তিনি প্রতি সপ্তাহে ১০০ ডলার রোজগার করছেন। তিনি আশা করেন, লেবাননে ফিরে গিয়ে তিনি তার পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্য করার মতো যথেষ্ট উপার্জন করতে পারবেন।
এদিকে ইরাকি কর্তৃপক্ষ বলছে, শিয়াদের পবিত্র শহর নাজাফ ও কারবালা পরিদর্শনকারী তীর্থযাত্রীদের বাদ দিয়ে ২০ হাজারেরও বেশি লেবানিজ নাগরিক ২০২১-এর জুন থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ইরাকে এসেছেন।
বাগদাদে লেবাননের রাষ্ট্রদূত আলি হাবহাব জানিয়েছেন, লেবানন থেকে ইরাকে আসার সংখ্যা বহুগুণ বেড়েছে।
ইরাকে দুই দশক ধরে চলা সংঘাতের পর দেশটি নতুন করে সবকিছু শুরু করতে চাইছে। বিশেষ করে ২০১৭ সালে আইএসের সঙ্গে যুদ্ধে বিজয়ের পর তেলসমৃদ্ধ দেশটি ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতা অর্জন করছে।
যে বাগদাদের রাস্তাগুলো একসময় নৃশংসতার সাক্ষী ছিল, তার দুপাশে এখন ব্যস্ত রেস্তোরাঁ, ক্যাফে। প্রায় ৯০০ লেবানিজ প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে ইরাকে কাজ করছে।
ইরাকের আয়ের ৯০ শতাংশ তেল থেকে এলেও বিশ্বব্যাংকের মতে দেশটির এক-তৃতীয়াংশ মানুষ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। তবে দেশটির বর্তমান স্থিতিশীলতা ভবিষ্যতের বিষয়ে আশাবাদী করে।
ইরাকি অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ আলি আল-রাউইর মতে, অনেক লেবানিজ কোম্পানি ইরাকে এসেছে, কারণ তারা বিনিয়োগের পরিবেশ ভালোভাবে জানে, অন্যদিকে অন্যান্য দেশের অনেক বিদেশি কোম্পানি তার সহিংস অতীতের কারণে বিনিয়োগ করতে ভয় পায়।
তিনি বলেন, ‘ইরাকি অর্থনীতিতে লেবাননের জন্য অনেক জায়গা রয়েছে।’
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০৬ এপ্রিল, ২০২২)