কেমন করছে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো?
মাহি হাসান, দ্য রিপোর্ট : দেশের পুঁজিবাজারের মার্চেন্টব্যাংকগুলোর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। নতুন নতুন কোম্পানি বা ইস্যু বাজারে এনে শেয়ার বাজারের গভীরতা বৃদ্ধি করে থাকে। একই সঙ্গে পোর্টফোলিও ম্যানেজ করে দেশের সেকেন্ডারি বাজারে লেনদেন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে । বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে ৬৪টি মার্চেন্ট ব্যাংক কাজ করছে বলে জানা গেছে। মার্চেন্ট ব্যাংককে অনেকেই ইস্যু ম্যানেজার হিসেবেই চেনেন। ইস্যু ম্যানেজারদের প্রধান কাজই হচ্ছে মার্কেটে কোম্পানি বা ইস্যু নিয়ে আসা।
কোন মার্চেন্ট ব্যাংক বাজারে কেমন কোম্পানি আনছে এবং পরবর্তী সময় কোম্পানি বা ইস্যু বিনিয়োগকারীদের কত শতাংশ লভ্যাংশ দিচ্ছে তা বেরিয়ে এসেছে দ্য রিপোর্টের বিশ্লেষণে। এর মাধ্যমে কোম্পানির পারফরমেন্স যেমন বোঝা যায় তেমনি সুনাম তৈরি হয় মার্চেন্ট ব্যাংকের। সম্প্রতি মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর পারফমেন্স অনুযায়ী পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন(বিএসইসি)। সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে এসব মান যাচাইয়ের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরিণ আর্থিক অবস্থা, আইন পরিপালনের যোগ্যতা, মূলধনের কাঠামো ইত্যাদি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। প্রতি দুই বছরে অন্তত একটি কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করা বা ইস্যু ম্যানেজ করার এক ধরনের নিয়ম রয়েছে। বিএসইসির মান যাচাইয়ের ক্ষেত্রে কোম্পানির এই কাজটি পুরোপুরো অগ্রাহ্য করা হয়েছে। দ্য রিপোর্টের পক্ষ থেকে গত ১১ বছরে ৬৪টি মার্চেন্ট ব্যাংকের দক্ষতা যাচাই করা হয়েছে। দেখে নেয়া যাক ২০১০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে মার্কেটে নতুন ইস্যু নিয়ে আসা মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর ১১ বছরের পারফর্মন্যান্স কেমন ছিল? পুঁজিবাজারের সেরা ১০টি মার্চেন্ট ব্যাংকের আনা কোম্পানিগুলোর অবস্থা ছিলো তা নিচের বিশ্লেষণ থেকে অনেকটাই স্পষ্ট হয়েছে।
আলফা ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড : এই মার্চেন্ট ব্যাংকটি ২০২১ সাল পর্যন্ত ৬ টি কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকুভুক্ত করতে ভূমিকা রেখেছে। এই মার্চেন্ট ব্যাংকের পক্ষ থেকে বাজারে তালিকাভুক্ত সব কটি কোম্পানি সেকেন্ডোরি বাজারে আসার পর ভালো পারফরমেন্স করেছে। সেকেন্ডোরি মার্কেটের লেনদেন সব সময়ে ইস্যু মুল্যের ওপর ছিলো। এছাড়া সব কটি কোম্পানির ঘোষিত লভ্যাংশ ছিলো আকর্ষণীয় , যা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বস্তি দিয়েছে। এক্ষেত্রে এই মার্চেন্ট ব্যাংকটির পারফরমেন্স ছিলো একশো শতাংশ। তাই পারফরমেন্স পর্যালোচনায় আলফার ক্যাপিটালকে প্রথম অবস্থানে বিবেচনা করা হয়েছে।
আলফা ক্যাপিটালের আনা ইস্যু বা কোম্পানি হচ্ছে মোজাফফর হোসেন স্পিনিং মিল লিমিটেড,এইচ ডব্লিই ওয়েল টেক্সটাইল বিডি লিমিটেড, ইফাদ অটোস লিমিটেড,শিপইয়ার্ড ইন্ডাস্ট্রিস লিমিটেড, কুইন সাউথ টেক্সটাইল মিল লিমিটেড,এডভেন্ট ফার্মা লিমিটেড। উল্লেখিত ৬টি কোম্পানিই বিগত কয়েক বছর ধরেই আর্কষণীয় লভ্যাংশ ঘোষণা করছে। এর মধ্যে এইচ ডব্লিউ ওয়েল টেক্সটাইল লিমিটেড ২০২১ সালে ২০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। ২০২০ সালেও কোম্পানিটি ঘোষণা করেছিল ২০ শতাংশ লভ্যাংশ। এর আগে ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে ১৭ % করে লভ্যাংশ ঘোষণা করে। ২০১৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত টানা ৪ বছর ১৫% করে লভ্যাংশ ঘোষণা করে । এইচ ডব্লিউ ওয়েল টেক্সটাইল লিমিটেড। মার্কেটে আনা আলফা ক্যাপিটালের আরেকটি ইস্যু হচ্ছে ইফাদ অটোস লিমিটেড। কোম্পানিটি গত দুই বছর ২০২০ এবং ২০২১ সালে ১১ শতাংশ করে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।২০১৯ সালে করেছিল ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা। আলফা ক্যাপিটালের মার্কেটে আনা কোম্পানিগুলোর মধ্যে বস্ত্রখাতের কোম্পানি কুইন সাউথ টেক্সটাইল মিল লিমিটেড ২০১৮ থেকে ২০২১ যথাক্রমে ১৭%, ১৮%, ১৬% এবং ২০% লভ্যাংশ ঘোষণা করে বিনিয়োগকারিদের জন্য। এছাড়া মোজাফফর স্পিনিং মিল লিমিটেড ২০২১ সালে ঘোষণা করেছিল ৩% লভ্যাংশ। আগের দুই বছর যথাক্রমে ২% এবং ১% লভ্যাংশ ঘোষণা করে। ফার্মাসিউটিক্যালস খাতের কোম্পানি এডভেন্ট ফার্মা লিমিটেড লভ্যাংশের পরিমাণ কমিয়েছে। ২০২১ সালে ৪% লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। যেখানে আগের দুই বছর ২০১৯ এবং ২০২০ সালে ১২% এবং ১০% লভ্যাংশ ঘোষণা করে যথাক্রমে। শিপইয়ার্ড ইন্ডাস্ট্রিস লিমিটেড ২০২১ সালে ঘোষণা করেছে ৫% লভ্যাংশ যা এর আগের বছর(২০২০)সালে ছিলো ১% লভ্যাংশ।
দ্বিতীয় অবস্থানের রয়েছে এলিয়েন্স ফাইন্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেড।এই মার্চেন্ট ব্যাংকটি ২০২১ সাল পর্যন্ত ৬টি কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকুভুক্ত করতে ভূমিকা রেখেছে। এই মার্চেন্ট ব্যাংকের পক্ষ থেকে বাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ৬টি কোম্পানির মাঝে ৫টি কোম্পানিরই সেকেন্ডোরি মার্কেটের লেনদেন সব সময়ে ইস্যুমুল্যের ওপর ছিলো। অর্থাৎ আলোচ্য সময়ে পুঁজিবাজারে আনা ৮৩% কোম্পানির শেয়ারের দামই ইস্যু প্রাইসের উপরে ছিলো । এছাড়া প্রায় সব কটি কোম্পানির ঘোষিত লভ্যাংশের পরিমাণ সন্তোষজনক ছিলো । এই মার্চেন্ট ব্যাংকটির আনা ইস্যুগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র একটি কোম্পানির শেয়ারের মূল্য অফার প্রাইসের থেকে কমে ছিলো আলোচ্য সময় পর্যন্ত । এলিয়েন্স ফাইন্সিয়াল সার্ভিস আলোচ্য সময়ে এনেছে সর্বমোট ৬টি ইস্যু। কোম্পানিগুলো হচ্ছে রংপুর ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্ট, এম আই সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলস,এমারাল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিস, কেডিসি এক্সেসরিস,বাংলাদেশ স্টিল রিরোলিং মিলস। এর মধ্যে বাংলাদেশ স্টিল রিরোলিং মিলস লিমিটেড ২০২১ সালে নগদ ৫০% লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এম আই সিমেন্ট ফ্যাক্টরি এবং প্রিমিয়ার সিমেন্ট ২০২১ সালে আর্থিক বছরে নগদ ২০% করে লভ্যাংশ ঘোষণা করে। রংপুর ডেইরি আন্ড প্রোডাক্ট ২০২১ সালে ৬% লভ্যাংশ ঘোষণা করে। কেডিসি সিমেন্ট ১৫% নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে।
ব্যাংকো ফাইন্যান্স আ্যন্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এই তালিকায় তৃতীয় অবস্থায় আছে বলে বলা যায়। এই মার্চেন্ট ব্যাংকটি ২০২১ সাল পর্যন্ত ৯টি কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকুভুক্ত করতে ভূমিকা রেখেছে। এই মার্চেন্ট ব্যাংকের পক্ষ থেকে বাজারে তালিকাভুক্ত করা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২টি কোম্পানির শেয়ারের প্রাইস ইস্যু প্রাইসের থেকে কম ছিলো।পারফর্মমেন্সের হিসেবে যা ৭৮ শতাংশ। তাদের আনা বেশিরভাগ কোম্পানিই সেকেন্ডোরি বাজারে আসার পর ভালো পারফরমেন্স করেছে। এই মার্চেন্ট ব্যাংকটি আলোচ্য সময়ে সর্বমোট আনা ৯টি ইস্যু পর্যালোচনা করে দেখা যায় এই মার্চেন্ট ব্যাংকের আনা ইস্যুগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় আছে বিবিএস ক্যাবল লিমিটেড। কোম্পানিটি সর্বশেষ আর্থিক বছরে ঘোষণা করেছে ১৫% শতাংশ লভ্যাংশ। এই মার্চেন্ট ব্যাংকটির আনা তিনটি ইস্যু গত বছর লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারেনি। কোম্পানিগুলো হচ্ছে ফ্যামিলি টেক্স বিডি,সানলাইফ ইন্সুইরেন্স কোম্পানি,নিউলাইন ক্লথিং।গোল্ডেন হারভেস্ট ৫% লভ্যাংশ দিয়েছে বিনিয়োগকারীদের। ইফাদ অটোস এবং নাহি আ্যলুমিনিয়াম কম্পোজিট প্যানেল যথাক্রমে ১১% এবং ১০% লভ্যাংশ দিয়েছে। সি পিয়ার্র বিচ রিসোর্ট আ্যন্ড স্পা গত দুই বছর ১% করে লভ্যাংশ দিয়েছে। এই মার্চেন্ট ব্যাংক সর্বশেষ ২০২১ সালে মার্কেটে আনে তওফিকা ফুডস আন্ড লভেলো আইসক্রিম কোম্পানিকে। খাদ্য সেক্টরের কোম্পানিটি প্রথম বছরই ১১% লভ্যাংশ ঘোষণা করে বিনিয়োগকারীদের।
এএএ ফাইন্যান্স আ্যন্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড রয়েছে চতুর্থ অবস্থানে:এই মার্চেন্ট ব্যাংকটি ২০২১ সাল পর্যন্ত ১০ টি কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে ভূমিকা রেখেছে। এর মধ্যে ৭টির সেকেন্ডোরি মার্কেটের লেনদেন সব সময়ে ইস্যুমুল্যের ওপর ছিলো। এক্ষেত্রে এই মার্চেন্ট ব্যাংকটির পারফরমেন্স ছিলো ৭০ শতাংশ। তাই দ্য রিপোর্টের পর্যালোচনায় এএএ ফাইন্যান্স আ্যন্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড চতুর্থ অবস্থানে বিবেচনা করা হয়েছে। আলোচ্য সময়ে ১০ টি ইস্যু এনেছে এই মার্চেন্ট ব্যাংকটি। আলোচ্য সময় পর্যন্ত যার মধ্যে ইস্যু প্রাইসের থেকে কম ছিলো তিনটি কোম্পানির শেয়ারের দাম। এএএ ফাইন্যান্স আ্যন্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের আনা ইস্যুগুলোর মাঝে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ লিমিটেড,জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিস লিমিটেড,শাহীবাজার পাওয়ার,এক্সপ্রেস ইন্সুইরেন্স, এবং সেনা কল্যাণ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড গতবছর ডিভিডেন্ড দিতে পারেনি। ৩০% করে লভ্যাংশ দিয়েছে জিপিএইচ ইস্পাত এবং জেএমআই সিরিঞ্জ আ্যন্ড মেডিক্যাল ডিভাইস। স্যালভো ক্যামিক্যাল এবং বসুন্ধরা পেপার মিলস দিয়েছে যথাক্রম ২% এবং ১২% লভ্যাংশ। এই মার্চেন্ট ব্যাংকের আনা ইস্যুর মধ্যে সর্বোচ্চ ২৫০% ডিভিডেন্ড দিয়েছে ওয়ালটন হাই টেক ইন্ডাস্ট্রিস লিমিটেড।
পঞ্চম স্থানে রয়েছে এএফসি ক্যাপিটাল লিমিটেড। এই মার্চেন্ট ব্যাংকটি ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৩টি কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকুভুক্ত করতে ভূমিকা রেখেছে। এই মার্চেন্ট ব্যাংকের পক্ষ থেকে বাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ৯টি কোম্পানিই সেকেন্ডোরি মার্কেটের লেনদেনে সব সময়ে ইস্যুমুল্যের ওপর ছিলো। বলা যায় ইস্যু আনা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৬৯% কোম্পানিই ভালো ছিলো। তাই দ্য রিপোর্টের পর্যালোচনায় এএফসি ক্যাপিটাল লিমিটেডের অবস্থান পঞ্চম বলে বিবেচনা করা হয়েছে। এএফসি ক্যাপিটালের আনা ইস্যুগুলোর মাঝে উল্লেখযোগ্য কোম্পানি হচ্ছে গ্লোবাল হেভি ক্যামিকাল লিমিটেড,খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিস, তুংহাই ক্নিটিং আ্যন্ড ডাইয়িং লিমিটেড,সি আন্ড এ টেক্সটাইল লিমিটেড, প্যাসিফিক ডেনিম, ইন্দো বাংলা ফার্মাসিটিকালস লিমিটেড,রিং শাইন টেক্সটাইল লিমিটেড,এনআরবি কর্মাশিয়াল ব্যাংক। এই মার্চেন্ট ব্যাংকটি ২০২১ সালে মার্কেটে আনে ইন্ডেক্স এগ্রো লিমিটেডকে। মার্কেটে এসেই প্রথম বছর ২৫% লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি। ২০২১ সালে ১০% করে লভ্যাংশ দিয়েছে শাশা ডেনিম এবং ইন্ট্রাক্টো রিফুয়েলিং স্টেশন। সিমট্যক্স ইন্ডাস্ট্রিস দিয়েছে ৪% এবং মোজাফফর স্পিনিং দিয়েছে ৩% লভ্যাংশ।
প্রাইম ফাইন্যান্স আন্ড ইনভেস্টম্যান্ট লিমিটেড এবং আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের অবস্থান যুগ্মভাবে ৬ষ্ঠ বলা যায়। এই দুটো মার্চেন্ট ব্যাংকই ২০২১ সাল পর্যন্ত ৮টি কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে ভূমিকা রেখেছে। সেকেন্ডারি মার্কেটের লেনদেনে ইস্যু মূল্যের ওপর ছিলো ৫টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। ইস্যুকৃত কোম্পানির মধ্যে ৬২.৫% কোম্পানির শেয়াররের দামই ইস্যু মূল্যের উপর ছিলো। প্রাইম ফাইন্যান্সের আনা কোম্পানিগুলোর মাঝে সামিট পুর্বাচল পাওয়ার কোম্পানি ২০২১ সালে ৩৫% লভ্যাংশ দিয়েছে। এমজেএল বাংলাদেশ দিয়েছে ৫৫% লভ্যাংশ। ১০% করে লভ্যাংশ দিয়েছে বরকতুল্লাহ ইলেক্ট্রো ডাইনামিক লিমিটেড ও মালেক স্পিনিং। ফার্মাসিটিকাল খাতের কোম্পানি সিলভা ফার্মা দিয়েছে ৫% লভ্যাংশ। ইন্সুরেন্স খাতের বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্সুরেন্স কোম্পানি সর্বশেষ বছর কোন লভ্যাংশ দিতে পারেনি। গেলো বছর ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড বাংলাদেশ ও দেশ জেনারেল ইন্সুরেন্স কোন লভ্যাংশ দিতে পারেনি।
আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের আনা কোম্পানিগুলোর মাঝে মতিন স্পিনিং গেলো বছর সর্বোচ্চ ৪০% লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। ২৫% লভ্যাংশ দিয়েছে প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল। আইডি এলসির মার্কেটে আনা ২টি কোম্পানি দিতে পারেনি লভ্যাংশ। আইডিএলসি সর্বশেষ মার্কেটে এনেছে মীর আকতার হোসেন লিমিটেড কোম্পানিকে । যারা প্রথম বছরেই ঘোষণা করেছে ১২.৫০% লভ্যাংশ।
লংকা বাংলা ইনভেস্টম্যান্ট লিমিটেড এবং ইম্পেরিয়াল ক্যাপিটাল লিমিটেড দুটো মার্চেন্ট ব্যাংকই ২০২১ সাল পর্যন্ত ১২ টি কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকুভুক্ত করতে ভূমিকা রেখেছে। এই মার্চেন্ট ব্যাংকের পক্ষ থেকে বাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ৭ টি কোম্পানির সেকেন্ডোরি মার্কেটের লেনদেন সব সময়ে ইস্যুমুল্যের ওপর ছিলো। এক্ষেত্রে এই মার্চেন্ট ব্যাংকটির পারফরমেন্স ছিলো শতকরা ৫৮ শতাংশ।
২০১০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ১২টি কোম্পানি এনেছে লংকা বাংলা ফাইন্যান্। ৫টি কোম্পানির শেয়ার ভ্যালু ছিলো ইস্যুকৃত প্রাইজের নিচে। এর মধ্যে ২০১৫ সালে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আসা ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন আ্যন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ২০২১ সালে ১৭০% ডিভিডেন্ড ডিক্লেয়ার করেছে। লংকা বাংলার মার্কেটে আনা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৫টি কোম্পানি ঘোষণা করেছে ১০% করে লভ্যাংশ। দুইটি কোম্পানি ডিভিডেন্ড দিতে পারেনি। বস্ত্র খাতের দুইটি কোম্পানি এনভয় টেক্সটাইল করেছে এবং এনভিন্স টেক্সটাইল করেছে যথাক্রমে ৫% এবং ২% লভ্যাংশ।
অন্যদিকে, ইম্পেরিয়াল ক্যাপিটাল লিমিটেডের আনা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৪টি কোম্পানি ২০২১ সালে কোন ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারেনি।ইম্পেরিয়াল ক্যাপিটালের আনা ইস্যুগুলোর মাঝে সর্বশেষ বছর ২০% লভ্যাংশ দিয়েছে জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেড। জেনেক্স মার্কেটে আসে ২০১৯ সালে। এছাড়া ফরচুন সুস দিয়েছে ১৫% লভ্যাংশ। সিমট্যাক্স ইন্ডাস্ট্রিস ও এডভেন্ট ফার্মা দিয়েছে ৪% করে লভ্যাংশ। ৫% করে লভ্যাংশ দিয়েছে সিলভা ফার্মা এবং এসকেট্রিমস আ্যন্ড ইন্ডাস্ট্রিস লিমিটেড।
সেরা ১০টি মার্চেন্ট ব্যাংকের মাঝে আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড আলোচ্য সময়ে সর্বোচ্চ ২১টি ইস্যু আনলেও কোম্পানিগুলোর মাঝে ১১টি কোম্পানির সেকেন্ডোরি মার্কেটের লেনদেন সব সময়ে ইস্যুমুল্যের ওপর ছিলো। যদিও বেশিরভাগ কোম্পানির ঘোষিত লভ্যাংশ ছিলো আকর্ষণীয় ,যা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বস্তি দিয়েছে। এই মার্চেন্ট ব্যাংকটির আনা ব্যাংকগুলোর মাঝে ইস্যুমূল্যের উপর ছিল ৫২ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম। আইসিবির ক্যাপিটালের মার্কেটে আনা কোম্পানিগুলোর মাঝে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড দিয়েছে ৩৭% লভ্যাংশ। ৭টি কোম্পানি গেলো বছর ডিভিড্যান্ড দিতে পারেনি। ডোরিন পাওয়ার জেনারেশন আ্যন্ড সিস্টেম এবং দ্য আকমি ল্যাবরেটরিস দিয়েছে ২৫% করে লভ্যাংশ। বিবিএস ক্যাবল এবং বিকন ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেড দিয়েছে ১৫% করে লভ্যাংশ।
দেশ সেরা ১০ টি মার্চেন্ট ব্যাংকেরই এই অবস্থা । এছাড়া অনেক মার্চেন্ট ব্যাংকই ইস্যুই আনতে পারছেনা অনেক বছর । অথচ বিএসইসি মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর প্রতি নির্দেশনা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মার্চেন্ট ব্যাঙ্কার এবং পোর্টফোলিও ম্যানেজার) নিয়ম, 1996 অনুযায়ী, প্রতিটি মার্চেন্ট ব্যাংককে অবশ্যই প্রতি দুই ক্যালেন্ডার বছরে নিয়ন্ত্রকের কাছে কমপক্ষে একটি আইপিও(প্রাথমিক পাবলিক অফার)ইস্যু প্রস্তাব জমা দিতে হবে তা পূরন করতে পারছেনা অধিকাংশ ব্যাংক।
এ ব্যাপারে কথা হয় বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংক এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ছায়েদুর রহমানের সাথে । এ ব্যাপারে তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন নতুন ইস্যু আনার কাজ যেমন মার্চেন্ট ব্যাংকের তেমনি নতুন কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনার জন্য আকৃষ্ট করার দায়িত্ব নিয়ন্ত্রক সংস্থার। শেয়ার মার্কেটে কেন কোম্পানিগুলো আসবে,আসলে কি ধরনের সুবিধা পাবে এই ব্যাপারে কোম্পানিগুলোকে জানাতে হবে। পাশাপাশি এই খাতে অন্য যেকোন খাতের তুলনায় সরকারি প্রণোদনা অনেক কম অনেকটা আক্ষেপের সুরেই বলেন বিএমবিএ প্রেসিডেন্ট।
পাশাপাশি তিনি আরো বলেন মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে যথাযথ উদ্যেগ নিতে হবে। অন্যান্য খাতের মতো এই খাতেও সরকারি সুযোগ সুবিধা প্রয়োজন বলে মনে করেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংক এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট। বর্তমানে লিস্টেড ব্যাংক বা অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ট্যাক্স দিতে হয় ২২.৫ %। এটিকে কমিয়ে ১৫% আনা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
সরকার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার পদক্ষেপে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো যথাযথ কাজ করতে পারবে এবং দেশের পুঁজিবাজারে সুদিন ফিরে আসবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংক এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ছায়েদুর রহমান।
(দ্য রিপোর্ট/টিআইএম/৬ এপ্রিল,২০২২)