দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: আজ (মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল) পাহাড়ে প্রাণের উৎসব ‘বৈসাবি’ শুরু হয়েছে। বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ উপলক্ষে পাহাড়ি মানুষের প্রধান সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসব এটি।

পুরনো বছরের গ্লানি ভুলে, নতুন বছরকে রাঙিয়ে নিতে পাহাড়ের পাড়া-মহল্লায় তাই বাজছে মিলনের গান। ‘তুরু তুরু তুরু রু বাজি বাজত্তে, পাড়ায় পাড়ায় বেরেবং বেক্কুন মিলিনে, এচ্যে বিজু, বিজু, বিজু...’ এই পাহাড়ি গানে মুখরিত এখন খাগড়াছড়ি।

করোনা মহামারির কারণে গেল ২ বছর উৎসবটি সীমিতভাবে উদযাপিত হলেও এবার বর্ণিলভাবে বর্ষবরণের প্রস্তুতি নিয়েছে পাহাড়িরা।

ত্রিপুরাদের ‘বৈসু’র ‘বৈ’, মারমাদের ‘সাংগ্রাই’-এর ‘সা’ ও চাকমাদের ‘বিজু’র ‘বি’ নিয়ে বৈসাবি। খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে আজ চাকমাদের ‘ফুল বিজু’র মধ্য দিয়ে বৈসাবি উৎসবের সূচনা। ভোরে চাকমারা ফুল সংগ্রহ করে, সেই ফুল দিয়ে নদীতে উপগুপ্ত বুদ্ধের উদ্দেশে পূজা করবে। বাংলা বছরের শেষ ২ দিন ও নতুন বছরের প্রথম দিন মূলত ‘বিজু’ উদযাপন করা হয়। নদীতে ফুল দিয়ে পূজা করাই বিজুর প্রধান আকর্ষণ। এ ছাড়া চৈত্রসংক্রান্তির দিন থেকে ত্রিপুরাদের ‘বৈসু’ উৎসব। ‘গরয়া নৃত্য’ হলো বৈসুর মূল আকর্ষণ। মারমাদের সাংগ্রাই উৎসব শুরু হয় বাংলা নববর্ষের দিন থেকে। মারমাদের জলকেলি (পানি) উৎসব সাংগ্রাইয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক।

বৈসাবিতে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরারা ফুল দিয়ে ঘর সাজাবে। এটি পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব হলেও আছে নানা ধর্মীয় আচারও। তাই ঘরে ঘরে পূজা-পার্বণ পালনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

শরণার্থীবিষয়ক টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইগ্রু চৌধুরী পৃথক বাণীতে খাগড়াছড়িবাসীর প্রতি বৈসাবির শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

বৈসাবি উৎসব উপলক্ষে আজ খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হবে। এটি জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ থেকে বের হয়ে টাউন হল প্রাঙ্গণে এসে শেষ হবে।

রাঙামাটি শহরের রাজবন বিহারের পাশে সম্ভুঘাটে আজ ‘ফুল ভাসানো অনুষ্ঠান’-এর আয়োজন করেছে ‘বিজু সাংগ্রাই বৈসুক, বিষু, বিহু, সাংক্রান-২০২২ উদযাপন কমিটি। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি সাবেক অতিরিক্ত সচিব প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা এর উদ্বোধন করবেন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। বিশেষ অতিথি থাকবেন আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য সৌখিন চাকমা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য বিপুল ত্রিপুরা, ঝর্ণা চাকমা এবং এম এন লারমা ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিজয় কেতন চাকমা।

‘জুম্ম সংস্কৃতি ঐতিহ্য সংরক্ষণ বিকাশ এবং অধিকার নিশ্চিতকরণে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসুন’—এই স্লোগানে এবার আয়োজিত হচ্ছে ফুল ভাসানো অনুষ্ঠান।

এর আগে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে ও রাঙামাটির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপনায় শোভাযাত্রা ও ৫ দিনব্যাপী মেলা হয়। এরপর রবিবার অনুষ্ঠিত হয় আরেকটি শোভাযাত্রা। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে নানা কর্মসূচি। ১৬ এপ্রিল রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়ায় সাংগ্রাই জলোৎসবের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বৈসাবি।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১২ এপ্রিল, ২০২২)