অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলার রায় আজ
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বহুমাত্রিক লেখক, ভাষাবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে ১৮ বছর আগে একুশে গ্রন্থমেলা থেকে ফেরার পথে চাপাতি ও কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় রমনা থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন তাঁর ভাই মঞ্জুর কবির। বিদেশে উন্নত চিকিত্সা শেষে কিছুটা সুস্থ হলেও ওই বছরেরই ১২ আগস্ট জার্মানিতে মারা যান তিনি। পরে ওই মামলা হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া শেষে আজ বুধবার এই মামলার রায় হবে।
এই মামলার রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করেছেন। তবে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে খালাস পাবেন বলে দাবি করছেন আসামিপক্ষ।
জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে এই মামলায় আসামি না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন মামলার বাদী মঞ্জুর কবির। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘এ রায় নিয়ে আমাদের কোনো আনন্দ, দুঃখ নেই। কারণ, মামলায় হুমায়ুন আজাদ হত্যার মূল হোতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আসামি করা হয়নি। যা ইচ্ছা রায় দিক। হুমায়ুন আজাদ নিজেই বলে গেছেন, সাঈদী এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু তাঁকে তো আসামি করা হয়নি। ’
সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান চৌধুরী বলেন, এই মামলার বিচার চলাকালে ৪১ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। মামলার আলামত ও আসামিদের জবানবন্দির ভিত্তিতে তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি, আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড হবে। ’
আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ দাবি করেন, ‘আসামিরা হুমায়ুন আজাদ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। সুতরাং আসামিরা নির্দোষ হিসেবে বেকসুর খালাস পাবেন বলে আশা করছি। ’
মামলার সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে সন্ত্রাসীরা হুমায়ুন আজাদকে চাপাতি ও কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। তিনি ২২ দিন সিএমএইচে এবং ৪৮ দিন ব্যাংককে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে একই বছরের ১২ আগস্ট জার্মানির মিউনিখে তিনি মারা যান।
ওই ঘটনার পর দিন ২৮ ফেব্রুয়ারি রমনা থানায় একটি হত্যাচেষ্টার মামলা হয়। তাঁর মৃত্যুর পর সেই মামলা হত্যা মামলায় রূপান্তর হয়। এ ছাড়া একই ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনেও আরেকটি মামলা হয়। ২০০৯ সালের ৬ অক্টোবর এই মামলার বাদী মো. মঞ্জুর কবির মামলাটির বর্ধিত তদন্তের আবেদন করলে ওই বছরের ২০ অক্টোবর আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন। ২০১০ সালের ১৮ অক্টোবর আসামি আনোয়ার আলম ওরফে ভাগ্নে শহিদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এ মামলায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে পাঁচ দফায় বিভিন্ন মেয়াদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তবে ওই ঘটনায় তাঁর সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল তদন্ত শেষে সিআইডির পরিদর্শক লুত্ফর রহমান পাঁচ আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন। একই বছরের ১০ সেপ্টেম্বর ওই পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এর মধ্য দিয়ে মামলার বিচার শুরু হয়। সর্বশেষ গত ২৭ মার্চ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের জন্য ১৩ এপ্রিল দিন ধার্য করেন।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১৩ এপ্রিল, ২০২২)