দেশের উন্নয়ন তাদের ভালো লাগছে না: প্রধানমন্ত্রী
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: দেশের উন্নয়ন, এগিয়ে যাওয়া যাদের ভালো লাগছে না; তারা একজোট হয়ে এখন সরকার হটাতে আন্দোলনের কথা বলছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (২০ এপ্রিল) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে কৃষক লীগের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার দুঃসময়ে মানুষের পাশে না দাঁড়ালেও আন্দোলনে যাওয়ার জন্য আমাদের দেশের কিছু নেতা ব্যস্ত। বিএনপি-জামায়াত জোটের সঙ্গে এক হয়ে ড. কামাল হোসেন, মান্না, কমিউনিস্ট পার্টি, বাম দল তারা নাকি আন্দোলন করে আওয়ামী লীগ সরকারকে হটাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের দোষ কোথায়? দেশকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছি, এটি কি তাদের ভালো লাগেনি। এজন্য এই সরকারকে হটাতে চায়? মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে, শতভাগ বিদ্যুৎ হয়েছে, ভূমিহীন ও গৃহহীনদের বাড়ি-জমি দিচ্ছি বিনামূল্যে। এটি কি আওয়ামী লীগের অপরাধ। এজন্য এই সরকার হটাতে হবে?
তিনি বলেন, নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী জাতীয় লক্ষ্য বাস্তবায়ন করেছে আওয়ামী লীগ। দেশের উন্নয়ন তাদের ভালো লাগেনি বলেই কি তারা আমাদের বিরুদ্ধে নেমেছে। মানুষ এখন একটু সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বাঁচতে পারছে, এটাই আমাদের অপরাধ।
এসময় কৃষকের উন্নয়নে তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৯৬’তে ক্ষমতায় এসে আমরা হাতে নিয়েছিলাম কীভাবে ফসল বাড়ানো যায়। আমরা কারো কাছে ভিক্ষা করে চলবো না। বাংলাদেশকে আমরা আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে গড়তে চেয়েছিলাম।
তিনি বলেন, আমাদের উন্নয়নের প্রতিটি পদক্ষেপ হচ্ছে একবারে তৃণমূলের মানুষের জন্য। যার সুফল প্রতিটি মানুষ পাচ্ছে। বর্গাচাষিরা ব্যাংকে ঋণ পায় না। কারণ তারা জামানত দিতে পারেন না। আমি চেয়েছি ব্যাংক কৃষকের কাছে যাবে, কৃষক ব্যাংকের কাছে যাবে না। আজ বর্গাচাষিরা স্বল্প সুদে ঋণ পাচ্ছেন। বাংলাদেশ যাতে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয় সেজন্য সবজি-ফসল বাড়ানোর তাগিদে গবেষণায় জোর দিই, এর সুফল আমরা পাচ্ছি।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সারের দাম ব্যাপকভাবে কমানোর বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, কৃষকের ঘরে সার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। সার ব্যবস্থাপনা সংস্কারে ‘সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা ২০০৯’ প্রণয়ন করা হয়েছে। কৃষকের দোরগোড়ায় সার প্রাপ্তি নিশ্চিত এবং ভোগান্তির অবসান হয়েছে। সারের মূল্য ৪ দফায় কমিয়ে বর্তমানে প্রতি কেজি ইউরিয়া ১৬ টাকা, টিএসপি ২২ টাকা, ডিএপি ১৬ টাকা এবং এমওপি ১৫ টাকায় ধার্য করেছি। প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ কৃষককে কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড পাচ্ছে। এ পর্যন্ত ১ কোটি ২ লাখ ৭০ হাজার ১৪৩ জন ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার মাধ্যমে সুবিধা পাচ্ছেন।
তিনি বলেন, কৃষকের যান্ত্রিকীকরণের জন্য আমরা ৫০-৭০ ভাগ পর্যন্ত ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। গবেষণার মাধ্যমে আমরা এই সাফল্য অর্জন করতে পারছি।
খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশের অভাবনীয় অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ মাছ, মাংস ও ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ইলিশ উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম। আজ বিশ্বে বাংলাদেশ ধান উৎপাদনে ৩য়, সবজি উৎপাদনে ৩য়, পেঁয়াজ উৎপাদনে ৩য়, পাট উৎপাদনে ২য়, চা উৎপাদনে ৪র্থ এবং আলু ও আম উৎপাদনে ৭ম স্থান অর্জন। স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনে ২য়।
সরকার কৃষির সঙ্গে পুষ্টির নিশ্চয়তা নিয়ে এখন বিশেষভাবে দৃষ্টি দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আমরা শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় এনেছি। প্রতিটি ঘরে এখন বিদ্যুৎ। কৃষক এর উপকার পাচ্ছে। ২০১৮ সালে কৃষি নীতিমালা যুগোপযোগী করেছি। কৃষক যাতে তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায়, সেই পদক্ষেপও নিয়েছি। কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করছি। কোথাও কোনো দুর্যোগ দেখা দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছি।
করোনাভাইরাসে সংক্রমণের সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোয় কৃষকলীগকে ধন্যবাদ জানিয়ে কৃষকের জন্য কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২০ এপ্রিল, ২০২২)