দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: অনাস্থা ভোটে হেরে গত ১০ এপ্রিল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন ইমরান খান। তিনি ছিলেন দেশটির ২২তম প্রধানমন্ত্রী। বলা হয়ে থাকে, পাকিস্তানের রাজনীতিতে বেনজির ভুট্টোর পরে সবচেয়ে আকর্ষণীয় নেতা তিনি।

২০১৮ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন ইমরান। সে সময় জনসমাবেশে তিনি যখন বলতেন, ‘পাকিস্তানকে কে বাঁচাবে?’ উচ্ছ্বসিত জনতা তখন চিৎকার করে বলত, ‘ইমরান খান! ইমরান খান!’

সে বছর ১৮ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন ইমরান। এরপর ক্ষমতায় ছিলেন ৩ বছর ৭ মাস ২৩ দিন। ক্ষমতা হারানোর পরেও আছেন জনপ্রিয়তার টপ চার্টেই। তিনি প্রধানমন্ত্রিত্ব হারানোর পর পাকিস্তানের সড়কে সড়কে তাই জনতার ঢল নামে। পিটিআই নেতাকর্মী ও ইমরানপ্রেমীরা মধ্যরাতে বিক্ষোভে উত্তাল করে তোলে রাজপথ। দেশের বাইরেও তার ভক্ত-অনুরাগী কম নয়। ইমরান খানের এই তুমুল জনপ্রিয়তার কারণ আসলে কী?

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইমরান খানের জনপ্রিয়তার কারণ ৪টি।

১. দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিহাদ’: পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্তানে প্রায় ২০ কোটি লোকের বসবাস।দারিদ্রের শিকার এই দেশটি ডুবে আছে দুর্নীতির মরুসিন্ধুতে। একমাত্র ইমরান খান বাদে দেশটির সকল প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধেই আছে সুনির্দিষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ। ইমরান ক্ষমতায় আসার আগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে এক প্রকার ‘জিহাদ’ ঘোষণা করেছিলেন। দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের কারণে তিনি হয়ে ওঠেন তুমুল জনপ্রিয়।

২. অর্থনৈতিক মুক্তির আশ্বাস: দুর্নীতির পাশাপাশি পাকিস্তানের বড় সমস্যা বেকারত্ব। প্রতিবছর লাখ লাখ তরুণ কাজের সন্ধানে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। এশিয়ায় উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি পাকিস্তানেই। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ২০১৯ সালের এক প্রতিবেদন বলছে, পাকিস্তানে উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। অভাব ও বেকারত্বের পাশাপাশি দেশটির স্বাস্থ্যখাতের অবস্থাও বেহাল। এশিয়াতে সবচেয়ে বেশি শিশুমৃত্যু হয় পাকিস্তানে। এই সব সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি অর্থনৈতিক মুক্তির আশ্বাস দিয়েছিলেন ইমরান খান। তাতেই জনপ্রিয়তার শিখরে উঠেছিলেন তিনি।

৩. ইসলামে ভক্তি: রাজনীতিতে আসার আগে বিশ্ব ক্রিকেটের দাপুটে খেলোয়াড় ছিলেন ইমরান। তখন তার জীবনও ছিল উদ্দাম। একাধিক গার্লফ্রেন্ড, একের পর এক বিয়ে থেকে লন্ডনের নাইটক্লাব- কোথায় ছিলেন না ইমরান? বিতর্ক আর ইমরান ছিলেন একে অপরের পরিপূরক। কিন্তু ক্যান্সারে তার মায়ের মৃত্যুর পর হঠাৎ আমূল পাল্টে যান। একটি ক্যান্সার হাসপাতাল গড়ার জন্য শুরু করেন তহবিল সংগ্রহ। সেই সঙ্গে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ইসলামে ভক্তি। এখন বেশ ধার্মিক জীবনযাপন করেন অক্সফোর্ডের সাবেক এই শিক্ষার্থী।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, ৯৭ শতাংশ মুসলিমের দেশে জনপ্রিয় নেতা হওয়ার পেছনে ইমরানের ইসলামমনা ইমেজ বড় ভূমিকা রেখেছে। ইমরানের অতীতকে ভুলে অনেক কট্টরপন্থী মুসলিমও তার সমর্থক হয়ে ওঠেন। মুসলিম বিশ্বের সাধারণ মানুষের কাছে উজ্জ্বল তারকা হয়ে ওঠেন পারমানবিক শক্তিধর দেশটির এই নেতা।

৪. সুপারস্টার ক্রিকেটার: রাজনীতিতে আসার আগে ইমরান খান ছিলেন ক্রিকেট বিশ্বের স্টাইলিশ সুপারস্টার। তার নেতৃত্বেই ১৯৯২ সালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জেতে পাকিস্তান। ইংল্যান্ড একসময় ভারতীয় উপমহাদেশ তথা পাকিস্তানকে শাসন করে গেছে। তাই ক্রিকেট স্টার থেকে জাতীয় হিরো বনে যান ইমরান।

সূত্র: জিও নিউজ, দ্য ডন, দ্য গার্ডিয়ান ও এনডিটিভি

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২০ এপ্রিল, ২০২২)