করোনায় ক্ষতিগ্রস্তরা পাচ্ছেন ১২৭ কোটি টাকা
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ও পুনরায় দারিদ্র্যে পতিত ২ লাখ ৫৫ হাজার উপকারভোগীকে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা হিসেবে প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে মোট ১২৭ কোটি টাকা নগদ অনুদান বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন’ পরিচালিত রেজিলিয়েন্স, এন্টারপ্রেনারশিপ অ্যান্ড লাইভলিহুড ইমপ্রুভমেন্ট (রিলাই) প্রজেক্টের মাধ্যমে দরিদ্র ও অতিদরিদ্র সুবিধাভোগীদের মধ্যে এ অনুদান বিতরণ করা হবে।
বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) অনুদান প্রদান কার্যক্রম অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে অনুদান কার্যক্রম উদ্বোধন করে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার কোভিড-১৯ মহামারির কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনরায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছে। এ কার্যক্রমের ফলে দরিদ্র মানুষ তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল করতে পারবে।
গেল বছরের ৫ অক্টোবর থেকে ৫ বছর মেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ৭ লাখ ৪৪ হাজার ৬০০ জন উপকারভোগীকে এ প্রকল্পের আওতায় সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ৯৫ শতাংশই নারী।
বাংলাদেশ সরকার এবং বিশ্বব্যাংক কর্তৃক এ প্রকল্পের বরাদ্দ মোট ৩৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বিশ্ব ব্যাংক-৩০০ মিলিয়ন এবং বাংলাদেশ সরকার-৪০ মিলিয়ন)। বাংলাদেশ টাকায় যা পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৯০০ কোটি।
প্রকল্পটি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক প্রণীত দারিদ্র্য মানচিত্র অনুযায়ী সর্বমোট ২০টি জেলার পিছিয়ে পড়া ৬৮টি উপজেলার আওতাধীন ১২৮টি ক্লাস্টারের মাধ্যমে ৩ হাজার ২০০টি গ্রামে বাস্তবায়নের কাজ চলমান রয়েছে।
আর্থিক অনুদান প্রদানের ক্ষেত্রে যেসব বৈশিষ্ট বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে-
(১) উপকারভোগী পরিবারের কোনো সদস্য কোভিড-১৯ এ মৃত্যুবরণ করেছেন বা আক্রান্ত হয়েছিলেন;
(২) কোভিড-১৯ এর কারণে উপকারভোগী পরিবারের আয়বর্ধনমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়েছিল বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল;
(৩) অতিদরিদ্র নারী প্রধান পরিবার বা পরিবারের প্রতিবন্ধী সদস্য রয়েছে এবং আদিবাসী পরিবার; এবং
(৪) কোভিড-১৯ এর কারণে চাকরি হারিয়ে দেশের অভ্যন্তরে বা বিদেশ থেকে নিজ গ্রামে ফিরে আসা যুবা ইত্যাদি।
‘সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন’ ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই অদ্যাবধি গ্রামীণ দরিদ্র ও অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নানাবিধ উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
এসডিএফ দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃজন, আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে অতিদরিদ্র ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আয়বর্ধনমূলক কর্মকান্ডে সম্পৃক্তকরণ, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সহায়তা প্রদান, গ্রামীণ ক্ষুদ্র অবকাঠামো নির্মাণ ও মেরামত, দেশের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে জেলে পরিবারের জীবনমান উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক সহায়তা প্রদান, কোভিড-১৯ মহামারির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের আর্থিক প্রণোদনা প্রদান এবং সর্বোপরি নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ৩৫টি জেলার ১৫৯টি উপজেলার পিছিয়ে পড়া ৯ হাজার ৩৩৩টি গ্রামে উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
এসডিএফ কর্তৃক বাস্তবায়িত এবং বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের সর্বমোট প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উপকারভোগীর সংখ্যা প্রায় ৭৩ লাখ। এ পর্যন্ত প্রকল্পভুক্ত গ্রামের ১৮ লাখ ৫৫ হাজার দরিদ্র ও অতিদরিদ্র পরিবারকে প্রত্যক্ষভাবে প্রকল্প কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে ৯৫ শতাংশই নারী এবং ৯৭ শতাংশ নারী সদস্য বিভিন্ন নির্বাহী কমিটির মূল পদে নিযুক্ত থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং প্রকল্প কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছেন।
এসডিএফ জাতিসংঘ ঘোষিত ‘সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি)’ অর্জনে বিশেষ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি বর্তমানে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি)’ ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে ৯টি লক্ষ্য অর্জনে কাজ করছে যাতে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে ২০৪১ সাল নাগাদ একটি উন্নত সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করা যায়।
এসডিএফ এর চেয়ারপার্সান ও সাবেক সিনিয়র সচিব মো. আব্দুস সামাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম ইল্লাহ। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন এসডিএফএর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ জেড এম সাখাওয়াত হোসেন। সূত্র: বাসস
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২২ এপ্রিল, ২০২২)