চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যকর মা-মেয়ে খুন
‘নিশাতকে পাব না বলেই খুন করি’
চট্টগ্রাম অফিস : চট্টগ্রামের সিডিএ আবাসিক এলাকায় মা-মেয়েকে নৃশংসভাবে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার আবু রায়হান সাংবাদিকদের কাছে খুনের ঘটনা অকপটে স্বীকার করেছেন। আবু রায়হান বলেন, ‘নিশাতকে ফিরে পাব না জেনেই তাকে খুন করি। তবে নিশাতের মাকে খুনের কোনো পরিকল্পনাই ছিল না।’
রায়হান ও তার সহযোগী শহীদকে বুধবার গ্রেফতারের পর বৃহস্পতিবার সকালে সিএমপি কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে তাদের সঙ্গে সাংবাদিকদের কথা হয়। এ সময় এক সংবাদ সম্মেলনে সিএমপি কমিশনার মো.শফিকুল ইসলামও দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য সাংবাদিকদের বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) বনজ কুমার মজুমদার, অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক, অর্থ, প্রশাসন) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গোয়েন্দা) বাবুল আক্তার উপস্থিত ছিলেন।
রায়হান জানান, ২০১৩ সালের মার্চে রায়হানদের দূরসম্পকের আত্মীয় ও নিশাতের বান্ধবী আনিকার কাছ থেকে নিশাতের মোবাইল নম্বর পায় সে। রায়হান নিশাতের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং নিজেকে ইউএসটিসি’র বিবিএ’র ছাত্র বলে পরিচয় দেয়। দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
সম্পকের পর হালিশহরের বিভিন্ন এলাকায়, ফয়’স লেক, খুলশী এলাকায় নিশাতকে নিয়ে বেড়াতে যেত রায়হান। সম্পর্র এক পর্যায়ে নিশাতকে একটি মোবাইল এবং গ্রামীণ ফোনের সিম কিনে দেন রায়হান। ১২ মার্চ তাদের মধ্যে শেষ দেখা হয়। ওইদিন বিকেলে নিশাত ও তার দুই বান্ধবী মিলে আগ্রাবাদে আক্তারুজ্জামান সেন্টারে বেড়াতে যায়। জানতে পেরে রায়হান সেখানে গিয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করেন।
রায়হান বলেন, ‘নিশাত আমাকে একটি স্যান্ডউইচ ও একটি পারফিউম গিফট দেয়। এ সময় সে আমাকে বলে, আমার পক্ষ থেকে তোমাকে দেওয়া এটাই শেষ খাবার। আমি ভেবেছিলাম, সে ফান করছে। এরপর তার সঙ্গে আর দেখা হয়নি।
’রায়হান বলেন, ‘১৫ মার্চ থেকে নিশাতের পরিবর্তিত আচরণ আমার কাছে স্পষ্ট হতে শুরু করে। ওইদিন নিশাত আমাকে মোবাইলে একটি এসএমএস দিয়ে গ্রামীণফোনের একটি অফার সম্পর্কে জানতে চায়। আমি তখন বলি, তুমি গ্রামীণফোন ইউজ কর, তুমি কি অফার সম্পর্কে জান না। এ নিয়ে দুইজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে সম্পর্কের প্রসঙ্গ উঠলে নিশাত জানায়, আমার সঙ্গে সে আর সম্পর্ক রাখবে না। নিশাত বলে, তোমার সঙ্গে আমার হবে না।’রায়হান আরও বলেন, ‘এরপর ১৬ মার্চ থেকে নিশাতের সঙ্গে যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ১৭ মার্চ আমি সরাসরি নিশাতের বাসায় যাই। এ সময় নিশাতের বাবা আমাকে অপমান করে। ১৮ মার্চ থেকে নিশাত মোবাইল বন্ধ করে ফেলে। ১৯ মার্চ নিশাতকে দেওয়া সিমটি বন্ধ করে নতুনভাবে সিমটি তুলি আমি। এরপর মোবাইল কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারি নিশাত অন্য একটি গ্রামীণফোনের নম্বরে প্রায়ই কথা বলে। এরপর সিমটি চালু করার সঙ্গে সঙ্গে ওই গ্রামীণ নম্বর থেকে একটি কল আসে। বলে, হ্যালো জান, কেমন আছ? এতক্ষণে কেন ফোন অন করলা?’ রায়হান বলেন, ‘আমি কোনো কথা না বলে চুপ করে থাকি। আমি নিশ্চিত হই নিশু আর আমার নেই। এরপর আমি নিশুকে একটা এসএমএস দিই। সে বুঝতে পারে, আমি তার সিম বন্ধ করে নতুনভাবে সিম তুলেছি। পরে আমাকে একটা মিসকল দেয়। আমি কল করলে সে কেটে দিয়ে মোবাইল বন্ধ করে দেয়।’
তিনি বলেন, ‘এরপরই আমি নিশুকে খুন করব ঠিক করি। আন্টিকে (নিশাতের মা) খুন করার পরিকল্পনা আমার ছিল না। কিন্তু তিনি এসে বাধা দেওয়ায় তাকেও খুন করি।
প্রসঙ্গত, ২৪ মার্চ সকালে নগরীর ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায় এসএসসি পরীক্ষার্থী সায়মা নাজনীন নিশাত (১৬) ও মা রেজিয়া বেগমকে (৫০) পায়ের রগ কেটে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
(দ্য রিপোর্ট/কেএইচ/এনডিএস/এনআই/মার্চ ২৭, ২০১৪)