দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস মঙ্গলবার মস্কোয় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে পুতিনের কাছে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা এবং শান্তি বৈঠকের প্রস্তাব দেন গুতেরেস। জবাবে পুতিন জানান, কয়েকটি শর্ত মেনে নিলে শান্তি বৈঠকে বসতে তিনি রাজি।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ক্রাইমিয়া সমস্যার সমাধান এবং পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চলগুলো নিয়ে স্পষ্ট বক্তব্য জানাতে হবে ইউক্রেনকে। পুতিনের ইঙ্গিত, পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চলগুলোকে ইউক্রেনকে ছেড়ে দিতে হবে। তারা স্বাধীনতা পেলেই ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি বৈঠক সম্ভব বলে জানিয়েছেন পুতিন। তবে একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, আলোচনা এখনো চলছে। কিন্তু ইউক্রেনকে রাশিয়ার ওই শর্তগুলো মেনে নিতে হবে।

পুতিন বলেন, ইস্তাম্বুলে সাম্প্রতিক আলোচনা ‘যুগান্তকারী’ পর্যায়ে পৌঁছেছিল। কিন্তু, ইউক্রেনের বুচা শহরে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নৃশংসতার খবর প্রকাশের পর তা আর এগোয়নি। এ ধরনের খবরকে ‘উসকানিমূলক’ দাবি করে পুতিন বলেন, এর সঙ্গে রুশ সেনাবাহিনীর কোনো সম্পর্ক নেই। মারিউপোলের বর্তমান পরিস্থিতিকে তিনি ‘জটিল এবং দুঃখজনক’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, এই অবরুদ্ধ শহরে রুশ বাহিনী আর কোনো হামলা করছে না।

উল্লেখ্য, রাশিয়া ২০১৪ সালে ক্রাইমিয়া দখল করে নিলেও ইউক্রেন-সহ একাধিক রাষ্ট্র ক্রাইমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে মেনে নেয়নি। এবার যুদ্ধ শুরু হওয়ার অব্যবহিত আগে দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চল দুইটি নিজেদের স্বাধীন বলে ঘোষণা করে। দুইটি অঞ্চলেই রাশিয়ার মদতপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদীরা শক্তিশালী। রাশিয়ার প্রস্তাব ওই অঞ্চলগুলিকে রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দিতে হবে ইউক্রেনকে।

পুতিন একথা ঘোষণা করার আগেই জেলেনস্কি তার প্রাত্যহিক ভিডিওবার্তায় বলেছেন, পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চলগুলি কী করবে, তা স্থির হবে অবাধ গণভোটের মাধ্যমে। যুদ্ধের আবহে তা সম্ভব নয়। মানুষ যা সিদ্ধান্ত নেবে, তিনি তা মেনে নেবেন। রাশিয়াও দোনেৎস্ক, লুহানস্কের মতো অঞ্চলগুলিতে গণভোটে রাজি হয়। কিন্তু তারপের ডিগবাজি খেয়ে ইউক্রেন জানিয়েছিল, বন্দুকের নলের সামনে গণভোট হতে পারে না। এখন ওই অঞ্চলগুলোতে গণভোটের পরিস্থিতিই নেই।

পুতিনের কাছে গুতেরেস বলেছেন, মারিউপলে অবরুদ্ধ হয়ে থাকা মানুষকে উদ্ধারের সুযোগ করে দিতে। স্টিল প্লান্টে বহু বেসামরিক মানুষ আটকে পড়েছেন, তাদের উদ্ধারে সাহায্য করতে। পুতিন জানিয়েছেন, রেডক্রস এবং জাতিসংঘের উপস্থিতিতে উদ্ধারকাজ চালানো সম্ভব। কিন্তু একইসঙ্গে তা বক্তব্য, ইউক্রেনের সেনা ওই বেসামরিক মানুষদের যেতে দিতে চায় না। তারা তাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। বেসামরিক মানুষদের সামনে রেখে তারা রাশিয়ার সেনার সঙ্গে লড়াইয়ের চেষ্টা করছে। উল্লেখ্য, প্রায় এক লাখ মানুষ আটকে আছেন মারিউপলের ওই স্টিল প্লান্ট অঞ্চলে। তার মধ্যে বহু নারী এবং শিশুও আছে বলে ইউক্রেনের প্রশাসন জানিয়েছে।

সূত্র: ডয়চে ভেলে, এক্সিওস

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২৮ এপ্রিল, ২০২২)