দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: দুই বছর বন্ধ থাকার পর দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঈদগাহ দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঈদের জামাত। এবার একসঙ্গে প্রায় ৬ লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করেছে বলে দাবি করছেন আয়োজকরা।

কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে বৃহৎ এই জামাতে নামাজ আদায় করতে পেরে খুশি দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত মুসল্লিরা।

দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম ঈদগাহ দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ ময়দান। ২২ একর আয়তন বিশিষ্ট এই ঈদগাহে ১৯৪৭ সাল থেকে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হলেও আধুনিক নির্মাণশৈলীতে এই ঈদগাহে বৃহৎ পরিসরে ঈদের জামাত শুরু হয় ২০১৭ সাল থেকে। কিন্তু মাঝখানে করোনা পরিস্থিতির জন্য গত দুই বছর এই ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হয়নি ঈদের জামাত।

করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় এই ঈদগাহে এবার আগেভাগেই প্রস্তুতি নেওয়া হয় ঈদের জামাতের। চালানো হয় ব্যপক প্রচার-প্রচারণা।

ভোর থেকেই মুসল্লিরা সমবেত হতে শুরু করেন এই ঈদগাহে। ৯টা বাজতে না বাজতে কানায় কানায় ভর্তি হয়ে যায় ঈদগাহ। ঠিক ৯ টায় শুরু হয় নামাজ। ইমামতি করেন মাওলানা শামসুল আলম কাশেমী। নামাজ শেষে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করে করা হয় মোনাজাত।

বৃহৎ এই জামাতে অংশ নেন বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি, দিনাজপুর জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকি, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, দিনাজপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক আজিজুল ইমাম চৌধুরী, দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, বিচার বিভাগের কর্মকর্তা, প্রশাসনের কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের জনতা।

নামাজ শেষে বৃহৎ এই জামাতের প্রধান উদ্যোক্তা জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি জানান, একসঙ্গে প্রায় ৬ লাখ মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে নামাজ আদায় করেছে এই জামাতে। সফলভাবে ঈদের জামাত সম্পন্ন হওয়ায় সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন তিনি।

তিনি জানান, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বৃহৎ এই জামাত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভের জন্য ইতিমধ্যেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

এদিকে দুই বছর পর বৃহৎ এই জামাতে অংশ নিতে পেরে খুশী মুসল্লিরা। তারা জানান, করোনার কারণে গত দুই বছর এই জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারেননি তারা। এবার এখানে নামাজ আদায় করতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেন তারা।

শুধু দিনাজপুর ও আশপাশের জেলা নয়, এই জামাতে নামাজ আদায় করতে আসেন দুরদুরান্ত থেকে আগত মুসল্লিরা।

বরিশাল থেকে আগত প্রকৌশলী শফিকুর রহমান জানান, তিনি এই জামাতের কথা শুনেছেন। এর আগে তিনি শোলাকিয়াতেও নামাজ আদায় করেছেন। দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে এখানে এসে নামাজ আদায় করতে পেরে খুশি তিনি।

একইরকম অনুভুতি প্রকাশ করেন যশোর থেকে আগত সাহেদ আলী, সিরাজগঞ্জ থেকে আগত মুসল্লি আব্দুর রাজ্জাকসহ অন্যান্যরা। তবে তারা জানান, দূরের মুসল্লিদের জন্য বিশেষ ট্রেন এবং বিশেষ কোনো পরিবহন ব্যবস্থা করলে মুসল্লিরা এখানে সহজেই আসতে পারতো।

বৃহৎ এই জামাতে অংশ নেওয়া মুসল্লিদের জন্য স্থাপন করা হয় শৌচারগার, ওজুর ব্যবস্থা। বসানো হয় মেডিক্যাল টিম। পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাবসহ বিভিন্ন আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে নেওয়া হয় চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সুষ্ঠুভাবে নামাজ সম্পন্ন হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন প্রশাসনের কর্মকর্তারাও।

দিনাজপুর জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকি সুষ্ঠু ও শান্তিপুর্ণভাবে ঈদের জামাত সম্পন্ন হওয়ায় মহান আল্লাহপাকের কাছে শুকরিয়া আদায় করেন। পাশাপাশি জামাতে কাঙ্খিত মুসল্লি অংশ নেওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ ০৩ মে, ২০২২)