দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজ থেকে নামানো হলো ৮০০ কোটি টাকার পণ্য
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম বন্দরের মূল জেটির বাইরে এবার প্রথমবারের মতো দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজ থেকে নামানো হলো কনটেইনার।
বৃহস্পতিবার (৫ মে) সকালে বন্দরের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে বুধবার (৪ মে) সন্ধ্যার পর দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজটি থেকে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে অবস্থিত কর্ণফুলী ড্রাইডক জেটিতে কনটেইনার নামানো শুরু হয়। তবে বন্দরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও জাহাজ থেকে বেসরকারি জেটিতে কনটেইনার নামানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়ায় তেলবাহী জাহাজের সঙ্গে সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভিয়েতনামের পতাকাবাহী ওই কনটেইনার জাহাজ। পরে সেটিকে কুতুবদিয়া থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে ফেরত আনা হয়। এমভি হাইয়ান সিটি নামে জাহাজটিতে পানি প্রবেশ করে ৭ ডিগ্রি কাত হয়ে গিয়েছিল। সেই সঙ্গে জাহাজটি ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। জাহাজে ১৫৬ টিইইউস জরুরি পণ্যবাহী কনটেইনার ছিল। এসব পণ্যের মূল্য প্রায় ৮০০ কোটি টাকা।
বন্দর কর্তৃপক্ষের দেওয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকা জাহাজটিকে উদ্ধারকল্পে ঈদের ছুটি ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে বন্দরের কর্মকর্তা, জাহাজ মালিকের প্রতিনিধি, স্থানীয় এজেন্ট, সেলভেজ সংস্থা, পিঅ্যান্ডআই, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ডসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান জরুরি সভা ডাকেন। সভায় বেসরকারি জেটিতে জাহাজ থেকে কনটেইনার নামানোর সিদ্ধান্ত দেন তিনি।
এদিকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জাহাজটি কর্ণফুলী ড্রাইডক জেটিতে ভিড়ানোর পর কনটেইনার খালাসের নিমিত্তে কাস্টমস ল্যান্ডিং পারমিট গ্রহণ করা হয়। কর্ণফুলী ড্রাইডক জেটির ফোরশোরে ১০.৭ মিটার ড্রাফট উপযোগী জাহাজ থেকে কনটেইনার নামানোর জন্য প্রয়োজনীয় ড্রেজিং সম্পন্ন করা হয়। এরপর চট্টগ্রাম বন্দরের নৌ বিভাগের দক্ষ পাইলটিং, স্থানীয় নৌ প্রযুক্তি ও প্রান্তিক বেঙ্গল সার্ভিসের সহযোগিতায় জাহাজটিকে কর্ণফুলী ড্রাইডক জেটিতে আনা হয়। উদ্ধারকাজে বন্দরের টাগবোট, দুটি বিশেষায়িত পলিউশন কন্ট্রোল জাহাজ ছাড়াও প্রান্তিক বেঙ্গল সেলভেজ অ্যান্ড ডাইভিং সার্ভিসের টাগবোট ব্যবহার করা হয়। বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের সঠিক সিদ্ধান্তের কারণে ৮০০ কোটি টাকার মূল্যের রফতানি পণ্য যেমন রক্ষা পেয়েছে তেমনি জাহাজ ডুবলে নৌ চলাচলে যে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতো, তা থেকে রক্ষা পেয়েছে বন্দর।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. উমর ফারুক বলেন, ভিয়েতনামের পতাকাবাহী এমভি হাইয়ান সিটি জাহাজ জরুরি রফতানি পণ্যবাহী কনটেইনার নিয়ে গত ১৪ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দর ত্যাগ করে। কিন্তু কুতুবদিয়ায় গিয়ে এম টি ওরিয়ন এক্সপ্রেস নামে আরেকটি জাহাজের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় এমভি হাইয়ানের। এতে এমভি হাইয়ান জাহাজটির পোর্ট সাইডে কার্গো হোল্ডে ছিদ্র হয়ে পানি প্রবেশ করে এবং ৭ ডিগ্রি কাত হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, জাহাজের কার্গো হোল্ডে পানি প্রবেশের কারণে ড্রাফট বেড়ে ১০.৭ মিটার হয়ে যায়। এজন্য জাহাজটি ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়। সংঘর্ষের পর জাহাজটি কুতুবদিয়ায় নোঙর করে। এমভি হাইয়ান সিটি জাহাজে এক হাজার ১৫৬ টিইইউস জরুরি পণ্যবাহী কনটেইনার ছিল। যার রফতানি মূল্য প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজটিকে মেরামত করার জন্য বোঝাইকৃত কনটেইনার খালাস জরুরি হয়ে পড়ে। পরে জরুরি ভিত্তিতে প্রথমবারের মতো বেসরকারি জেটিতে কনটেইনার নামানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বন্দরের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাসে এটি একটি স্মরণীয় ঘটনা। বন্দরের ১৩৫ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম মূল জেটির বাইরে কোনও বেসরকারি জেটিতে কনটেইনার নামানো হয়েছে।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ ০৫ মে, ২০২২)