সৌদিতে বাংলাদেশি যুবকের মরদেহ উদ্ধার, পরিবারের দাবি হত্যা
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: সোদি আরবে কর্মস্থল থেকে বাংলাদেশের যুবক আবদুর রহমানের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
শুক্রবার (৬ মে) দুপুরে আবদুর রহমানের বাবা মো. হানিফ ও ভাই আবুল কাশেম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে তাদের অভিযোগ, এটি স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। আবদুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে।
এদিকে, পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ছেলেকে হারিয়ে চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছে বাবা-মা। ছেলের মরদেহটি দেশে আনতে আকুতি জানিয়েছে অসহায় পরিবারটি।
আবদুর রহমান লক্ষ্মীপুরের কমলগর উপজেলার চরলরেন্স ইউনিয়নের উত্তর চরলরেন্স গ্রামের বাসিন্দা।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত ১ মে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের নিকটস্থ আল হারমোলিয়াহ এলাকায় আবদুর রহমানের কর্মস্থল এক ছাগলের খামার থেকে তার রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় পুলিশ৷
সৌদিতে কর্মরত আবদুর রহমানের দুলাভাই মো. ইউছুফের বরাত দিয়ে পরিবারের জানায়, আবদুর রহমানের সঙ্গে সুদানি এক সহকর্মীর ঝগড়া হয়েছিল। ঝগড়ার একদিন পর তার (আবদুর রহমান) রক্তাক্ত মরদেহ পাওয়া যায়। স্থানীয়রা ইউছুফকে জানিয়েছে-আবদুর রহমানকে খুন করা হয়েছে। কিন্তু মরদেহ রাস্তার পাশে ফেলে রেখে গাড়িচাপায় মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করে সেখানকার মালিকপক্ষ। তবে এ ঘটনায় পুলিশ এক সৌদি নাগরিক ও একজন সুদানি নাগরিককে আটক করে৷
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের ছেড়ে দিয়েছে বলেও জানায় নিহতের পরিবার।
নিহতের মা লাকী বেগম জানান, সৌদিতে ঈদের আগের দিন বিকেলে ছেলের সঙ্গে তিনি মোবাইলফোনে কথা বলেছিলেন। এরমধ্যে হঠাৎ করে আবদুর রহমান চিৎকার দিয়ে বলে উঠে মা 'আজরাইল' আসে। তাৎক্ষণিকভাবে ফোনকল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে বারবার ফোন দিলেও কল রিসিভ করা হয়নি। বাড়ি থেকে চেষ্টা চালিয়েও তার সঙ্গে টানা দুই দিন যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এতে মেয়ে জামাই ইউছুফকে আবদুর রহমানে কর্মস্থলে পাঠানো হয়। সেখানে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে হাসপাতালের মর্গে গিয়ে তার মরদেহ দেখতে পায় ইউছুফ।
পারিবারিক সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে স্থানীয় এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ভালো চাকরির আশায় আবদুর রহমান সৌদিতে পাড়ি জমায়। কিন্ত সেখানে গিয়ে জানতে পারেন মরুভূমিতে উট চড়ানো হচ্ছে তার চাকরি। এ কাজ তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তবুও বহু কষ্টে তিনি দুই বছর এ কাজ করেছেন। করোনার সময়ও তার কোনো ছুটি ছিল না। এর মাঝে কারণে-অকারণে মালিকপক্ষ তাকে মারধর করত। পরে অতি নির্যাতনে সেখান থেকে তিনি পালিয়ে অন্যত্র চলে যান। যুক্ত হন নতুন আরেকটি কাজে।
নতুন কর্মস্থলের কাজটি হচ্ছে মরুভূমিতে। ছাগলের খামারের শ্রমিক হিসেবে তিনি কাজ শুরু করেন। নতুন কর্মস্থলে সুদানি সহকর্মীদের সঙ্গে তার প্রায়ই ঝগড়া হতো।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, আবদুর রহমানের মরদেহের মাথার পেছনে জখম রয়েছে। শরীরের বাকি অংশগুলো অক্ষত।
কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত ঘটনা জেনেছি। তাদেরকে প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা দেওয়া হবে। তাদেরকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বলা হয়েছে। প্রয়োজনে আমরাও যোগাযোগ করব।
এ ব্যাপারে কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। মরদেহ দেশে আনতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে পরিবার থেকে এখনও কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।
ইউএনও আরও বলেন, যেহেতু পরিবারের দাবি- আবদুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে। সে বিষয়ে তারা সৌদিতে বাংলাদেশি দূতাবাসে অভিযোগ করতে পারে।
অন্যথায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন এ কর্মকর্তা
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ ০৬ মে, ২০২২)