তিনজনের একজন মন্ত্রীর ভাগ্নে, বাকি দুজন শ্যালক
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ট্রেনে বিনা টিকিটে ভ্রমণকালে চেকারের প্রশ্নের জবাবে নিজেদের রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের আত্মীয় পরিচয় দেওয়া সেই তিন যাত্রীর পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা তিনজনই রেলমন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মি আক্তার মনির নিকটাত্মীয়।
তারা হলেন- ঈশ্বরদীর নুর মহল্লার প্রবাসী মুজাহিদ ইসলাম ও ইয়াসমিন আক্তার নিপা দম্পতির ছেলে ইমরুল কায়েস প্রান্ত। তিনি রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর ভাগনে। অপর দুজন ওমর ফারুক ও হাসান আলী রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর আপন মামাতো ভাই।
ওমর ফারুক পাবনার ঈশ্বরদীর শহরের নুর মহল্লার মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে। হাসান আলী একই এলাকার মৃত আশরাফ আলীর ছেলে। প্রান্থ নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন। বর্তমানে তিনি ইউএলএ নামের এক বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি করেন।
দেশজুড়ে এ ঘটনায় যখন সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়, তখন ওই তিন যাত্রীর আত্মীয় হন অস্বীকার করে গণমাধ্যমের কাছে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করা যাত্রীরা আমার আত্মীয় নয়। ওদের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।
সুজন আরও বলেন, মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে কেউ হয়তো সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেছে। ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে শুনেছি ওই টিটিই বিনা টিকিটের যাত্রীদের সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ আচরণ করেছেন। ফলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
একটি গণমাধ্যমে ইয়াসমিন আক্তার নিপা বলেন, ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরতে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে আমার ছেলে প্রান্ত ঈশ্বরদী রেল স্টেশনে টিকিট কাটতে যায়। কিন্তু সেখানে টিকিট পায় না। এ সময় রেলমন্ত্রীর স্ত্রী মনি স্টেশনমাস্টারকে ফোনে তাদের টিকিট দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু টিকিট না থাকায় স্টেশনমাস্টারও টিকিট দিতে পারেননি। পরে স্টেশনমাস্টার ও মনির কথায় তারা ট্রেনে ওঠে। এ সময় মনির কথামতো স্টেশনমাস্টার ওই ট্রেনের গার্ডকে তাদের নিরাপদে পৌঁছে দেওয়ারও নির্দেশ দেন। পরে পথের মধ্যে টিটিই তাদের সঙ্গে ঝামেলা করেন এবং অতিরিক্ত টাকা দাবি করেন।
প্রান্থর মায়ের দাবি, অতিরিক্ত টাকা দিতে অস্বীকার করায় টিটিই তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। একসময় টিটিই বলেন, ট্রেন কী তোর বাপের? তখন ছেলেরা বলে, বিপদে পড়ে ট্রেনে উঠেছি। আপনার ভাড়াটা নেন। তখন টিটিই বলেন, খুলনা থেকে জরিমানাসহ ভাড়া দিতে হবে। উত্তরে ছেলেরা বলে, আমাদের কাছে অত টাকা নেই। আপনি ৩০০ টাকা করে রাখেন। কিন্তু টিটিই না শুনে বলেন, টাকা না দিলে লাথি মেরে দিয়ে ট্রেন থেকে ফেলে দেব। তারপর তাদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকেন। এরপর তাদের টিকিট করে দেওয়া হয়।
ঘটনার পর রেলমন্ত্রীর সঙ্গে কথাও হয় অভিযুক্ত পরিবারের। ইয়াসমিন আক্তার নিপা বলেন, মন্ত্রী যখন আমাদের অস্বীকার করে মিডিয়ায় বক্তব্য দেন, তখন আমরা ভয় পাই। পরে মন্ত্রী স্যার আমাদের একাধিকবার ফোন করে অভয় দেন। বলেন- আপা, মিডিয়াতে যেগুলো বলেছি, সেগুলো বলতে হয়। আমি জনগণ নিয়ে কাজ করি। জনগণ-আত্মীয় সবাই আমার কাছে সমান। আপনি মন খারাপ কইরেন না। আপনার ছেলে যদি নির্দোষ হয়, তাহলে কিছুই হবে না। কিন্তু যদি আপনার ছেলে দোষী হয়, তাহলে আপনার ছেলের শাস্তি হবে এবং টিটিইরও শাস্তি হবে।
এদিকে, এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে শনিবার (৭ মে) এ কমিটি গঠন করা হয়। পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা (এটিও) সাজেদুল ইসলামকে প্রধান এবং সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী (এইএন) শিপন আলী ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সহকারী কমান্ড্যান্ট (এসিআরএনবি) আবু হেনা মোস্তফা কামালকে সদস্য করা হয়। তাদের আগামী দুই কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ ০৮ মে, ২০২২)