দেশে কোনো বেকারত্ব নেই : সালমান এফ রহমান
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: দেশের কোথাও কোনো বেকারত্ব নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। বরং বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজের জন্য শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না এবং বেকারত্বের চেয়ে শ্রমিকের ঘাটতিই বেশি বলে মনে করেন তিনি।
বুধবার (১১ মে) বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, 'দেশের গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিগুলো এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছে, তারা এখন শ্রমিক পাচ্ছে না। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ জর্ডানের পোশাক কারখানাগুলোতে আমাদের শ্রমিকদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমরা ভরা মৌসুমে ফসল ঘরে তোলার সময় শ্রমিক পাচ্ছি না। এমনকি দেখা দেয় তীব্র শ্রমিক সংকট।
সালমান এফ রহমান তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমি বরাবর একই কথা বলে আসছি, আমি মনে করি বাংলাদেশে দেয়ার ইজ নো আনএমপ্লয়মেন্ট (কোনো বেকারত্ব নেই)। বিজিএমইএ বলছে, পোশাক কারখানায় শ্রমিক পাচ্ছি না, আমরা ফসল ঘরে তোলার সময় শ্রমিক পাচ্ছি না। তাহলে আন-এমপ্লয়মেন্টটা কোথায়?’
গতবার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ মাঠে থেকে কৃষকদের সহায়তা করেছে। দেশের প্রত্যন্ত গ্রামীণ অঞ্চলসমূহ ইউনিয়ন লেভেলে অনেক উন্নত হচ্ছে। আমি মনে করি, দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে আনএমপ্লয়মেন্ট কোথায় আছে?
এ ছাড়াও তিনি আরও বলেন, 'উচ্চশিক্ষিত যারা ইউনিভার্সিটি থেকে ডিগ্রি নিয়ে বের হচ্ছেন, তারা এখন বসে বসে সরকারকে বলছে চাকরি দাও। ঈদের সময়টাতে কাজ না পাওয়ার সমস্যা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনারা ডিগ্রি নেওয়ার আগে চিন্তা করেননি, কোন পেশায় ক্যারিয়ার গড়বেন? ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, অ্যাকাউন্টটেন্ট ডিগ্রি নিয়ে যারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে বের হচ্ছেন, তাদের তো চাকরি নিয়ে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না। দেশের বাহিরে সবাই কিন্তু ডিগ্রি নিতে যায় না, ভোকেশনাল একটা ডিপ্লোমা নিয়ে প্রফেশনে চলে যায়। ডিপ্লোমা ট্রেনিং আছে, এটা নিয়েও কাজ করা যায়।’
আরেকটা সমস্যা আছে। আননেসেসারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়ে অনেকে চাকরি পাচ্ছে না, বেকার হয়ে এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। ইউনিভার্সিটি গ্রাজুয়েট হওয়ার পর অনেকেই অন্য কোনো কাজ করতে চায় না। সবাই ভাবে আমি ইউনিভার্সিটি গ্রাজুয়েট, আমি কেন সব ধরনের কাজ করব। তবে এসব কিছু নিয়েই আমরা অনেক কাজ করছি, কেউ যেন বেকার না থাকে এবং সবাই যেন কাজের সাথেই জড়িত থাকে।
সালমান এফ রহমান বলেন, দেশেই আমরা উপযুক্তভাবে ফ্রিল্যান্সার বান্ধব পরিবেশ তৈরি করছি। ফ্রিল্যান্সারদের সকল সমস্যা সমাধান নিয়ে কাজ করেছি। শুরুর দিকে দেশীয় ফ্রিল্যান্সারদের টাকা আনা-নেওয়ার একটা ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। অনেক সময় বেশির ভাগ ফ্রিল্যান্সাররাই দেশের বাহিরে থাকা তাদের আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে এই কাজ করত। বর্তমানে এটি সরাসরি আসছে বা আন অফিশিয়ালিও আসছে। ফ্রিল্যান্সারদের মাধ্যমে এই মুহূর্তে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হচ্ছে যা ২০৪১ সাল নাগাদ ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌছতে পারে। তবে আমরা বলছি, আমাদেরকে এতটা সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না, আমরা আশাবাদী ২০২৫-২৬ সালেই ১০ বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারব ফ্রিল্যান্সিং ও আইসিটি খাত মিলে। যার মাধ্যমে গার্মেন্টস খাতের পরেই হতে পারে ফ্রিল্যান্সিং খাতের অবস্থান।
অনুষ্ঠানে আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম বলেন, দেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করা হবে। এতে করে বর্তমান ফ্রিল্যান্সারদের আরও দক্ষ করে তৈরি করা এবং নতুন ফ্রিল্যান্সার তৈরির পথ আরও সুগম হবে। এ ছাড়া স্কুল পর্যায় থেকে আইটি ও কোডিং এর দিকেও বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য স্কুলগুলোতে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব তৈরির কাজ চলমান। ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য একটা আলাদা পলিসি বা গাইড লাইন তৈরি করা দরকার বলেও মনে করেন তিনি।’
উক্ত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান ডা. তানজিবা রহমান বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী ফ্রিল্যান্সিংয়ের বাজার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েই চলেছে। এই খাতে বিশবাজারে আমাদের পদচারণা বাড়াতে পারি। ফ্রিল্যান্সারের ৭০ শতাংশ তরুণ ও ৭৫ শতাংশ বেকার তরুণ রয়েছে দেশে। তাদের মধ্যে অর্ধেকও যদি ফ্রিল্যান্সিং খাতের সঙ্গে নিজেদের নিয়োজিত করেন তাহলে দেশ আরও এগিয়ে যাবে।’
সভাপতির বক্তেব্যে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, ‘দেশীয় ফ্রিল্যান্সারদের দক্ষতা উন্নয়নে যেকোনো সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাচ্ছি আমরা। এখন চাইলে ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে সনদের জন্য আবেদন করা যায়। অনেকে এখানে আবেদন করছে এবং সনদ পাচ্ছেন।’
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ ১২ মে, ২০২২)