পি কে হালদারকে দেশে ফেরানোর উদ্যোগ
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ভারতে গ্রেপ্তার পি কে হালদারকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফেরানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে দেশ থেকে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ এবং ভারত, গ্রেনাডা, কানাডায় পাচারসহ অপরাধের আন্তর্জাতিক ব্যাপ্তির বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হয়েছে।
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) ও তাঁর সহযোগীদের গত শনিবার গ্রেপ্তার করে ভারতের কেন্দ্রীয় আর্থিক গোয়েন্দা শাখা এনফোর্সমেন্ট ডিপার্টমেন্ট (ইডি)। আন্তর্জাতিক বিধিবিধান এবং দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় তাঁদের ফেরত আনার আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইন্টারপোল ও ভারত সরকারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বলে সরকারের সচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল রোববার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘পি কে হালদার বাংলাদেশে ওয়ান্টেড ব্যক্তিত্ব। আমরা ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাঁকে অনেক দিন ধরেই চাচ্ছি। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে আমাদের কাছে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু আসেনি।’
পি কে হালদার ও তাঁর সহযোগীদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারকে আনুষ্ঠানিক অথবা অনানুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে কি না, তা জানতে চাওয়া হলে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, ‘ইডির সঙ্গে দুদকের যোগাযোগ আছে।’
ইডি গত শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গে ১১টি স্থানে একযোগে অভিযান চালায়। অভিযান চলাকালে কলকাতার অদূরে অশোকনগর থেকে প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে শিবশংকর
হালদার, তাঁর ভাই প্রাণেশ কুমার হালদার, স্বপন মৈত্র ওরফে স্বপন মিস্ত্রি, উত্তম মৈত্র ওরফে উত্তম মিস্ত্রি, ইমাম হোসেন ওরফে ইমন হালদার এবং আমানা সুলতানা ওরফে শর্মি হালদারকে আটক করা হয়।
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকসহ কয়েকটি সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তিরা পি কে হালদারের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে দুদকে মোট ৩৭টি মামলা দায়ের করেছেন। এগুলোর মধ্যে একটি মামলায় বিচার চলছে। তিনটি মামলায় তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। ৩৩টি মামলার তদন্ত চলছে।
ইডির তথ্য অনুযায়ী, পি কে হালদার ও তাঁর সহযোগীরা ছদ্মনামে ভারতীয় নাগরিক সেজে অনেক সম্পদ কিনেছিলেন সে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। তাঁরা জালিয়াতির মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিক পরিচয়পত্র, আধার কার্ড ও রেশন কার্ড জোগাড় করেন। পি কে হালদারের ভারতীয় ও গ্রেনাডার পাসপোর্ট ছিল।
ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, দিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। এর পাশাপাশি কলকাতার বাংলাদেশ উপহাইকমিশন পশ্চিমবঙ্গের স্থানীয় সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলোর সঙ্গে এবং ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ রাখছে।
কলকাতার স্থানীয় সূত্রগুলো বলেছে, ইডি আটক করা ছয় ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে শনিবার বাঙ্কশাল কোর্টে উপস্থাপন করে। আদালত প্রশান্ত কুমার হালদার, প্রাণেশ কুমার হালদার, স্বপন মৈত্র, উত্তম মৈত্র ও ইমাম হোসেনকে ১৭ মে পর্যন্ত রিমান্ডে এবং আমানা সুলতানাকে নিরাপত্তা হেফাজতে দেন। পি কে হালদারসহ গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ইডি তদন্ত অব্যাহত রাখবে বলে সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
পি কে হালদারের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি থাকার বিষয়টি ইডি অবহিত বলে সংস্থাটির বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। সরকার ফ্রান্সে ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে যোগাযোগের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে কূটনৈতিক একটি সূত্র জানায়। ভারতের দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকার এক অনলাইন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পি কে হালদারকে ভারতে প্রযোজ্য আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে ইডি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান গতকাল বলেছেন, পি কে হালদার ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি পাচার করেছেন বলে এখন পর্যন্ত ধারণা করা হচ্ছে। তবে এর পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাবে, কারা জড়িত ছিলেন তাঁর সঙ্গে। তখন নিশ্চয় অনেক রাঘববোয়ালও বেরিয়ে আসবে। তাঁকে ফিরিয়ে আনতে তিন থেকে ছয় মাসের বেশি লাগার কথা নয় উল্লেখ করে খুরশীদ আলম খান বলেন, ভারতে তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হলে তখন কত দিন লাগবে, সেটা এখনই বলা যাবে না। বাংলাদেশকে পি কে হালদারের ‘অপরাধের উৎস’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর মূল বিচার হবে বাংলাদেশে।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন রোববার বলেন, পি কে হালদার যে টাকা ভারতে পাচার করেছেন, তা দেশের জনগণের টাকা। এ টাকা ফেরত আনার চেষ্টা করা হবে। এর আগে সিঙ্গাপুর থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পি কে হালদারের পাচার করা অর্থও দ্রুত ফেরত আনা যাবে।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ ১৬ মে, ২০২২)