পাঁচ মিনিটের কামব্যাকে ইপিএলের চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: শিরোপার জন্য লড়াই করতে থাকা দু’দল ম্যানচেস্টার সিটি ও লিভারপুল প্রথমেই আচমকা গোল খেয়ে বসে। পরে অবশ্য আড়মোড়া ভেঙে নিজ নিজ ম্যাচে জয় তুলে নেয় উভয় দল। তবে আলোচনায় থাকা ম্যানসিটি একটা পর্যায়ে হারই দেখছিল। কিন্তু মাত্র সাড়ে পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে তিন গোল করে সব শঙ্কা উড়িয়ে শিরোপা উৎসবে মেতে উঠে সিটিজেনরা।
রোববার (২২ মে) নিজেদের মাঠ ইতিহাদ স্টেডিয়ামে অ্যাস্টন ভিলাকে ৩-২ গোলে হারিয়ে শিরোপা নিশ্চিত করে পেপ গার্দিওলার দল।
সিটির জন্য সহজ সমীকরণ ছিল জিতলেই মাথায় উঠবে মুকুট। তবে পা হড়কালেই ঘটতে পারে বিপদ। আর তাদের হোঁচটের অপেক্ষাতেই যে বসে ছিল লিভারপুল। একটা সময় সিটি হোঁচট খাওয়ার পথেই ছিল। কিন্তু দোর্দন্ড প্রতাপে ঘুরে দাঁড়িয়ে শিরোপা নিশ্চিত করে গার্দিওলার শিষ্যরা।
স্টিভেন জেরার্ড তার সবটুকু দিয়ে ‘চেষ্টা’ করেছেন সিটিকে আটকাতে। চেষ্টা করেছেন লিভারপুলের সাবেক তারকা ফিলিপ কুতিনহোও। দুই সাবেক লিভারপুলের খেলোয়াড়ের চেষ্টায় সিটির মাঠে ২-০ এগিয়েও গিয়েছিল তারা। কিন্তু ওই যে, ‘চ্যাম্পিয়নস মেন্টালিটি’ বলে একটা কথা থেকেই যায়! চ্যাম্পিয়নদের মানসিকতা। ওই মানসিকতার জোরেই দ্বিতীয়ার্ধের সাড়ে পাঁচ মিনিটে যেন অসুরশক্তি ভর করে সিটির তারকাদের মাঝে। সেই সাড়ে পাঁচ মিনিটে সিটি গোল করে তিনটি। আর তাতেই নিশ্চিত হয় উলভারহ্যাম্পটনকে হারিয়েও লাভ হচ্ছে না লিভারপুলের। লিগ শিরোপা যাচ্ছে ম্যানচেস্টার সিটির ঘরেই।
ম্যাচের ৭৫ মিনিট পর্যন্ত দুই গোলে পিছিয়ে থাকার পর ইলকাই গন্দোয়ানের নৈপুণ্যে ব্যবধান কমায় সিটিজেনরা। পরক্ষণেই সমতা টানেন রদ্রি। এর পরপরই গন্দোয়ানের দ্বিতীয় গোলে শিরোপা ধরে রাখা নিশ্চিত হয় সিটির।
ইতিহাদে শুরু থেকে ম্যানচেস্টার সিটির ভয়ে অ্যাস্টন ভিলা অবশ্য খোলসবন্দী হয়ে থাকেনি। নিজেরাও সময় সুযোগমতো আক্রমণে উঠে। যার সুফল আসে ৩৭ মিনিটে। দুই ফুলব্যাকের যুগলবন্দীতে অসাধারণ এক গোল পেয়ে যায় স্টিভেন জেরার্ডের দল। লেফটব্যাক লুকা দিনিয়ের ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে দলকে এগিয়ে দেন পোলিশ রাইটব্যাক ম্যাটি ক্যাশ। সিটির মাঠ ইতিহাদে তখন কবরের নিস্তব্ধতা! আর হবে না-ই বা কেন লিভারপুল আর এক গোল যদি দিয়ে দেয়, আর সিটি অন্তত আর একটা গোল না দিতে পারে তাহলে যে লিভরাপুল চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে!
মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হলো তখন যখন ফিলিপ কুতিনহোও গোল করে বসলেন। লিভারপুলের সাবেক তারকার এই গোলে সিটি তখন নিজেদের মাঠেই দুই গোলে পিছিয়ে। বিরতির পর টানা কয়েকটি আক্রমণ করা সিটি ৫০তম মিনিটে দারুণ সুযোগ পায়। কিন্তু গোলমুখ থেকে বল উড়িয়ে মারেন গাব্রিয়েল জেসুস। ডাগআউটে গার্দিওলার চোখে-মুখে তখন তীব্র হতাশা।
কোণঠাসা সিটি ৭৫তম মিনিটে দুই বদলি খেলোয়াড়ের নৈপুণ্যে পেয়ে যায় ঘুরে দাঁড়ানোর উপলক্ষ্য। ডান দিক থেকে রাহিম স্টার্লিংয়ের ক্রসে হেডে ব্যবধান কমান ইলকাই গন্দোয়ান। এর দুই মিনিট পরই স্কোরলাইনে সমতা টানে সিটি। জিনচেঙ্কোর বাঁ দিক থেকে বাড়ান বল ডি-বক্সের বাইরে ধরে নিখুঁত শটে ঠিকানা খুঁজে নেন রদ্রি।
নতুন উদ্যমে জেগে ওঠা সিটি তৃতীয় গোলও পেয়ে যায় খানিক বাদেই। কেভিন ডে ব্রুইনের গোলমুখে বাড়ানো বল ছোট্ট এক টোকায় জালে জড়ান গন্দোয়ান। উল্লাসে ফেটে পড়ে ইতিহাদ। আনন্দে লাফিয়ে ওঠেন ডাগআউটে হতাশা ভর করা গার্দিওলা।
লড়াইয়ের তখনও বাকি বেশ খানিকটা। তবে এমন দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর পর দলের আত্মবিশ্বাস যে তুঙ্গে। বাকি কয়েক মিনিটে তখন দেখার বিষয় ছিল অ্যাস্টন আবারও নতুন করে সিটির বুকে আঘাত হানতে পারে কিনা। কিন্তু সিটিজেনরা তাদের নতুন করে আঘাত হানতে দেয়নি। কোনোমতে বল দখলে রেখে শেষের রুদ্ধশ্বাস কয়েকটি মিনিট কাটিয়ে দেয় তারা।
শক্তহাতে রক্ষণ আগলে রেখে পাঁচ বছরে চতুর্থবারের মতো প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জয় করে ম্যানচেস্টার সিটি। ইংল্যান্ডের শীর্ষ লিগের ইতিহাসে এই নিয়ে অষ্টমবার চ্যাম্পিয়ন হলো তারা। এর মধ্যে ২০১১-১২ মৌসুম থেকেই জিতল ৬ বার!
৩৮ ম্যাচে ২৯ জয় ও ৬ ড্রয়ে ৯৩ পয়েন্ট নিয়ে মৌসুম শেষ করল ম্যানচেস্টার সিটি। ২৮ জয় ও আট ড্রয়ে লিভারপুলের পয়েন্ট ৯২।
এরই সঙ্গে অসাধারণ এক কীর্তিতে নাম লেখায় গার্দিওলা ও তার দল। পাঁচ বছরে চারবার জিতল লিগ শিরোপা। দারুণ এই সাফল্য আর আছে কেবল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের কোচিংয়ে ক্লাবটি অবশ্য এই কীর্তি গড়েছিল তিনবার।
সেই সঙ্গে শেষ হয়ে যায় বহুল আলোচিত লিভারপুলের ‘কোয়াড্রপল’ জয়ের স্বপ্ন। তবে লিগ কাপ ও এফএ কাপ জয়ী দলটির সামনে এখনও বেঁচে আছে ‘ট্রেবল’ জয়ের সম্ভাবনা। আগামী শনিবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের মুখোমুখি হবে ক্লপের দল।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ ২৩ মে, ২০২২)