সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণে দমকলকর্মীসহ নিহত ১৬, দগ্ধ-আহত ৪ শতাধিক
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৬ জনে দাঁড়িয়েছে বলে প্রথিমিক তথ্যে জানা গেছে। এ ঘটনায় দগ্ধ ছাড়াও আঘাতে আহত হয়েছেন ৪ শতাধিক। আহতদের মধ্যে ৪০-৫০ জনের অবস্থা গুরুতর। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সহকারী পরিচালক রাজীব পালিত এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহতদের মধ্যে আগুন নেভানোর দায়িত্ব পালন করতে আসা ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মীও রয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়াও বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্যের পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলে সীতাকুণ্ড থানা সূত্র।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সব ইউনিট মিলেও রাতে সাড়ে তিনটা পর্যন্তও তা নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারায় পরিস্থিতি ভয়াবহতর রূপ নেয়। পরে ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা থেকে অগ্নি নির্বাপক গাড়ি পাঠাতে অনুরোধ করা হয়।
চট্টগ্রামে দায়িত্বরত র্যাব-৭ এর প্রধান ইউসুফ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি ডিপোর ভেতর যারা আটকে পরেছিল তাদের বের করতে। অনেক মানুষকে আমরা সবাই মিলে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।
রাত ১২টার পর থেকে হাসপাতালে একের পর এক গুরুতর আহতরা আসতে থাকেন। চমেক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুরুল আলম জানান, হতাহতদের মধ্যে ডিপোর শ্রমিকদের পাশাপাশি পুলিশ ও দমকল কর্মীরাও রয়েছেন।
চট্টগ্রাম নগরী থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরের কদমরসুল এলাকায় অবস্থিত বিএম ডিপো নামের ওই কন্টেইনার টার্মিনালের সামনে ভোর রাত পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা ছিল। যখনি কোনো আহতকে উদ্ধার করা হয়েছে তখনি অ্যাম্বুলেন্স তাদের নিয়ে ছুটে গেছে হাসপাতালের পথে।
যেভাবে শুরু
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা জানায়, শনিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের শীতলপুর এলাকায় অবস্থিত বিএম কন্টেইনার ডিপোতে (সাবেক কাশেম জুট মিল) লোডিং পয়ন্টের ভেতরে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে ১০টার দিকে তা চরম আকার ধারণ করে।
খবর পেয়ে প্রথমে কুমিরা ও সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। পরে রাত পৌনে ১১টার দিকে এক কনটেইনার থেকে অন্য কনটেইনারে আগুন ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এসময় হঠাৎ রাসায়নিক ভর্তি একটি কনটেইনার বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এতে অগ্নিকাণ্ড ঘিরে দায়িত্বে থাকা ফায়ার সার্ভিসের সদস্য, পুলিশ সদস্য, শ্রমিক ও স্থানীয়সহ ৪ শতাধিক মানুষ দগ্ধ ও আহত হন।
রাত ২টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, পুলিশ, দমকল সদস্য ও শ্রমিকসহ ৪০-৫০ জনের বেশি মানুষকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আজ (রবিবার) সকাল সোয়া ৮টা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। বিস্ফোরণে আশপাশের ঘরবাড়ি ও মসজিদের কাচের দরজা-জানালা ভেঙে যায়। আশপাশের এলাকার শিশুরা বিস্ফোরণের বিকট শব্দে চরম আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে কেঁদে ওঠে।
সীতকুণ্ড ফায়ার সার্ভিস ছাড়াও চট্টগ্রাম ও ফেনী থেকে ফায়ার সার্ভিসের মোট ১২টি টিম এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালায়। কিন্তু বারবার কন্টেইনরার ডিপোয় বিস্ফোরণ ঘটতে থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণ দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে।
সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন বণিক জানান, বিস্ফোরণে থানার কনস্টেবল তুহিনের এক পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এছাড়া থানার আরও অন্তত পাঁচ কনস্টেবল, ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) মোতাহার হোসেন ও শিল্প পুলিশের একাধিক সদস্য আহত হয়েছেন।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ ৫ জুন, ২০২২)