তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর কমানোসহ ৬ প্রস্তাব ডিএসইর
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: দেশের পুঁজিবাজারকে আরো বিকশিত ও গতিশীল করতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) করহার কমানোসহ ছয়টি প্রণোদনার দাবি জানিয়েছে। সোমবার দুপুরে ডিএসইর মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনূসুর রহমান এসব দাবি জানান।
ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, এবারের বাজেটে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রন, কৃষি থাত, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ, কর্মসংস্থান ও শিক্ষা খাতসহ বেশ কিছু খাতকে অধিকতর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়াও অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্যে বহুল কাঙ্খিত পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক সম্ভবানাও কাজে লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। যা দেশের সামগ্রীক অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনারই বহিঃপ্রকাশ।
তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রীর বাজেট উপস্থাপনের পর পরই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদের সভায় প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আলোচনা করা হয়। ডিএসই মনে করে যে, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রনের পাশাপাশি, উন্নয়ন ও উৎপাদনমূখী কার্যক্রমের মাধ্যমে অর্থনীতিকে গতিশীল করার কৌশল নিয়ে প্রস্তাবিত বাজেট প্রণয়ণ করা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে উন্নয়ন ও উৎপাদনমূখী যে সু-পরিকল্পিত কর্মপন্থা, ব্যবসাবান্ধব ও ব্যবস্থাপনা কৌশল বাজেটে প্রস্তাব করা হয়েছে, সে জন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বাজেট প্রস্তাবনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছে।
ঢাকা স্টক একচেঞ্জ চেয়ারম্যান বলেন,পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও বিকাশে সরকারের নীতি সহায়তা ও বাজার বান্ধব আইন প্রণয়নের ফলে দেশের পুঁজিবাজার এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের অধিক শেয়ার আইপিও'র মাধ্যমে হস্তান্তরিত হলে সেই তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য করহার ২২.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে দেশের স্বনামধন্য কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হবে। এটি একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বলে মনে করে ডিএসই।
সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান ডিএসইর পক্ষ থেকে ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেটে যে ছয় প্রণোদনার দাবি জানানো হয় যার মধ্যে অন্যতমবন্ডবাজার সম্প্রসারণ। বলা হয় একটি স্বতন্ত্র বন্ড মার্কেট তৈরীর জন্য রেগুলেটরী এবং টেকনোলজিক্যাল কাঠামো সম্পূর্ণরূপে তৈরী করা হয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে কর্পোরেট বন্ড মার্কেটের আকার খুবই ছোট। একটি সময়োপযোগী নীতি সহায়তার মাধ্যমে কার্যকর বন্ড মার্কেট তৈরী করা গেলে দেশের পুঁজিবাজার তথা সমগ্রিক অর্থনীতি উপকৃত হবে বলে ডিএসই মনে করে। সে জন্য জিরো কূপন বন্ডের মতো সকল প্রকার কর্পোরেট বন্ডের হতে উদ্ভুত সুদ বিনিয়োগকারী নির্বিশেষে কর মুক্ত রাখার প্রস্তাব করা হয়।
ডিএসইর আরেকটি প্রস্তাব হচ্ছে কর্পোরেট করহার হ্রাসকরণ। প্রস্তাবিত বাজেটে ১০ শতাংশের অধিক শেয়ার আইপিও'র মাধ্যমে হস্তান্তর হলে ঐ তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য করহার ২২.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যা অত্যন্ত সময়োপযোগী পদক্ষেপ। পুঁজিবাজারের টেকসই সম্প্রসারণের জন্য তালিকাভুক্ত এবং অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারের ব্যবধান নূন্যতম ১০% করার প্রস্তাব করে ডিএসই।
এছাড়া ডিএসই থেকে আহবান করা হয় তালিকাভুক্ত কোম্পানি থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশের করমুক্ত সীমাবৃদ্ধি করা। পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা ৫০,০০০ থেকে নূন্যতম ১০০,০০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়। পাশাপাশি লভ্যাংশ থেকে উৎসে কর চুড়ান্ত করদায় হিসেবে বিবেচনা করার প্রস্তাব করা হয়।
এসএমই বোর্ডে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার হ্রাস করার প্রস্তাব করা হয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে। ২০২১ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এসএমই বোর্ড নামে একটি পৃথক বোর্ড চালু করে। যার উদ্দেশ্য হচ্ছে স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করে দীর্ঘমেয়াদী মূলধন যোগান ও কর্পোরেট গভর্ন্যান্স উন্নতরণ। এই বোর্ডে কোম্পানিগুলোকে আগ্রহী করার জন্য নূন্যতম ৫ বছরের জন্য হ্রাসকৃত ১০% হারে কর ধার্য্য করার দাবি জানানো হয়।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ আয়ের উপর কর হ্রাস করার প্রস্তাব করে ডিএসই। কোম্পানিগুলো কর পরবর্তী মুনাফা থেকে লভ্যাংশ প্রদান করে। লভ্যাংশ আয়ের উপর কর প্রকৃতপক্ষে দ্বৈত কর। এজন্য কর্পোরেট শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ আয়ের উপর কর ২০% থেকে হ্রাস করে ১০% করার প্রস্তাব করছি। একই সাথে কর্পোরেট করদাতাদের ক্ষেত্রে লভ্যাংশ আয়ের উপর চুড়ান্ত করহার ১০% করার দাবি করে ডিএসই।
এছাড়া সর্বশেষ প্রস্তাব করা হয় স্টক এক্সচেঞ্জে ট্রেকহোল্ডারদের উৎসে কর হ্রাসের জন্য। বলা হয় পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে ব্রোকারেজ হাউজকে ন্যয়সগত অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করতে বিদ্যমান অযৌক্তিক করনীতি থেকে অবমুক্তি দিয়ে সিকিউরিটিজ লেনদেনের উপর প্রদত্ত অগ্রিম আয়কর ০.০৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.০১৫ শতাংশ (পূর্বে এটি ০.০১২৫ শতাংশ ছিল) করতে অথবা আয়কর অধ্যাদেশ মোতাবেক নিয়মিত হারে আয়কর প্রদানের আদেশ জারী ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। দীর্ঘমেয়াদী মূলধন সংগ্রহের অন্যতম মাধ্যম হলো দেশের পুঁজিবাজার। তাই “কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন” শীর্ষক প্রস্তাবিত বাজেটকে দেশের পুঁজিবাজারই সরকারের কাঙ্খিত লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে বলে ডিএসই মনে করে।
বাজেটের বিষয়ে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন,ডিএসইর পরিচালক সিদ্দিকুর রহমান,ডিএসইর পরিচালক শরিফ আনোয়ার হোসেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তারিক আমিন ভূঁইয়া, প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) সাইফুর রহমান মজুমদার, উপ-মহাব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান।
(দ্য রিপোর্ট/ মা হা/ ১৩ জুন,২০২২)