‘মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ডিজিটাল সার্টিফিকেট পৌঁছে দেওয়া হবে’
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হক এমপি বলেছেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে সকল মুক্তিযোদ্ধার হাতে ডিজিটাল সার্টিফিকেট ও আইড কার্ড তুলে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যাশিত ডিজিটাল সার্টিফিকেট এবং আইডি কার্ড বিতরণ কার্যক্রম আজ থেকে শুরু করা হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে ১৩টি জেলার ৩৭ হাজার ৯১ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ডিজিটাল সনদ ও কার্ড প্রদান করা হচ্ছে।
আজ রবিবার নিজ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ডিজিটাল সার্টিফিকেট ও আইডি কার্ড প্রদান, চিকিৎসা সেবা প্রদান, সরকারের দেওয়া সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত বুকলেটের মোড়ক উম্মোচন ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন নিয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব রঞ্জিত কুমার দাসসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন।
মোজাম্মেল হক বলেন, প্রথম পর্যায়ে গোপালগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, যশোর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নড়াইল ও গাজীপুর জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের সার্টিফিকেট ও আইডি কার্ড প্রদান করা হবে। তারপর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের এই কার্ড দেয়া হবে।
তিনি বলেন, সারাদেশে ডিজিটাল সার্টিফিকেট ও আইডি কার্ড বিতরণ করতে দু’মাসের বেশি সময় লাগবে না। ইতোমধ্যে অর্ধেকের বেশি সার্টিফিকেট ও কার্ড তৈরি হয়েছে, বাকী সার্টিফিকেট ও কার্ড তৈরির কাজও দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।
মন্ত্রী বলেন, এই সার্টিফিকেট এবং কার্ড উপজেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সেখান থেকেই বিতরণ করা হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে যারা জীবিত আছেন তারা সার্টিফিকেট এবং আইডি কার্ড দুটিই পাবেন, কিন্তু যে সকল মুক্তিযোদ্ধা মারা গেছেন, তাদের জন্য শুধু ডিজিটাল সার্টিফিকেট দেয়া হবে।
তিনি বলেন, ডিজিটাল সার্টিফিকেট ও আইডি কার্ড যাতে কেউ জাল করতে না পারে, সেজন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল সার্টিফিকেটে ১৪ ধরনের এবং ডিজিটাল আইডি কার্ডে ১২ ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার বিষয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় হাসপাতাল এবং ঢাকার ২২টি বিশেষায়িত হাসপাতালে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য ইতোমধ্যে ১৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ওই হাসপাতালগুলোর রিকুইজিশন সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, বিদেশে কোনো মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসার প্রয়োজন হলে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা পর্যন্ত বরাদ্দ দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, এই নির্বাচন অনুষ্ঠনের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কোন কিছু করার নেই। শুধুমাত্র ভোটার তালিকা তৈরি করে দেওয়াই মন্ত্রণালয়ের কাজ। ভোটার তালিকা পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচনে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। আর নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে আদালতের যে বিধি-নিষেধ ছিল, সে বিষয়েও সুরাহা হয়েছে। এখন নির্বাচন অনুষ্ঠানে আর কোন বাধা নেই।
মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় ভুল থাকলে নিজ নিজ উপজেলায় অভিযোগ দেওয়ার বিষয়ে উল্লেখ করে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী বলেন, নিজ নিজ উপজেলায় দেওয়া অভিযোগের শুনানীর ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় ভুল থাকলে তা বাতিল করা হবে। ইতোমধ্যে প্রায় ১১ হাজার নাম বাতিল করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এক বছর আগে মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। কেউ অভিযোগ না করলে মন্ত্রণালয়ের কিছু করার থাকে না। তবে উপজেলা যে সব সময় সঠিক কাজ করে তা বলা যাবে না। তাই কেউ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কাছে ন্যায় বিচার না পেলে জামুকায় আপিল করতে পারবেন।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বীরঙ্গনা এবং প্রবাসীরা ছাড়া মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেটের জন্য দেশে থাকা আর কেউ আবেদন করতে পারবেন না। কারণ যে অনলাইনে আবেদন পত্র গ্রহণ করা হয়ে থাকে, তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
পরে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারবর্গকে দেওয়া বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার তালিকাসংবলিত বুকলেট সকলের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ ২৬জুন, ২০২২)