হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ৬ বছর
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলাটি হয় ২০১৬ সালে রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজানে। ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে জঙ্গি হামলায় ১৭ জন বিদেশিসহ নিহত হন মোট ২২ জন। তাদের মধ্যে দুইজন পুলিশ কর্মকর্তা। জঙ্গিদের গুলি ও বোমায় আহত হন পুলিশের অনেকে।
সেনাবাহিনীর অপারেশন থান্ডারবোল্টে নিহত হয় ৬ হামলাকারী জঙ্গি।
হলি আর্টিসানে নৃশংস জঙ্গি হামলার ছয় বছরেও শেষ হয়নি মামলার বিচার প্রক্রিয়া। ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর এই মামলায় ৭ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে বেকসুর খালাসের রায় দেন আদালত। এরপর আসামিরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে, আর রায়ে খালাস পাওয়া একজনের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর প্রায় দীর্ঘ ১৯ মাস পেরিয়ে গেলেও উচ্চ আদালতে বিচারিক কার্যক্রমের আর তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।
রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- হামলার মূল সমন্বয়ক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা, অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী নব্য জেএমবি নেতা হাদিসুর রহমান সাগর, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী, হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজ, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ।
তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করে বিচারিক আদালত। আর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এ মামলার অপর আসামি মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে খালাস দেওয়া হয়।
হলি আর্টিজানে হামলার পর সিটিটিসির অভিযান
হলি আর্টিজানের পরে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) মোট ৫৫৯ জন জঙ্গি সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। তাদের মধ্যে- জেএমবির- ৯৯ জন, নিউ জেএমবির- ২০৪ জন, আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের- ১৩৬ জন, হরকাতুল জিহাদ- ১০ জন, হিযবুত তাহরীরের ৩৪ জন ও সংগঠন উল্লেখ নেই এমন ৭৬ জনকে গ্রেফতার করে সিটিটিসি।
হলি আর্টিজানে হামলার পর র্যাবের অভিযান
হলি আর্টিজানের পর র্যাব ১৬৭৮ জঙ্গি সদস্যদের গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে ৮৬৪ জন জেএমবি সদস্য, আনসার আল ইসলামের ৪০৬ সদস্য, আল্লাহর দলের ২০১ সদস্য, হিযবুত তাহরীর ৮৮ সদস্য, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ৮৬ জন, হুজির ৩০ সদস্য, শহীদ হামজা ব্রিগেডের এক সদস্য, মানহাজীর এক সদস্য ও গায়েরী এহসারের একজন সদস্য রয়েছে।
হলি আর্টিজানে হামলার পর এটিইউর অভিযান
হলি আর্টিজানের পর ২০১৯ সালে দেশে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে প্রতিষ্ঠিত হয় পুলিশের এন্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ)। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটিইউ ১৬৯ জন জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে। এদের মধ্যে- ২০১৯ সালে ২৭ জন, ২০২০ সালে ৬৩ জন, ২০২১ সালে ৫৬ জন ও ২০২০ সালে এখন পর্যন্ত ২৩ জন জঙ্গি সদস্যকে গ্রেফতার করেছে।
কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বর্তমানে দেশে জঙ্গিদের ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটিস করার কোনো সামর্থ্য নেই। প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সুযোগ তারাও নিয়েছে। সাইবার স্পেসে তাদের প্রচার-প্রচারণা চালানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সিটিটিসির তৎপরতার কারণে তারা ফিজিক্যালি তাদের কার্যক্রম চালাতে পারছে না। ২৪/৭ ঘণ্টা সাইবার স্পেসে আমাদের পেট্রোলিং চলছে। এমন অনেককে আমরা শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছি। তবে বর্তমানে আমাদের তৎপরতার কারণে অনলাইনেও জঙ্গিদের কার্যক্রম অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। এ কারণে অনলাইনেও জঙ্গিরা খুব বেশি সুবিধা করতে পারছে না।
এ বিষয়ে র্যাব’র আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, র্যাব অভিযান চালিয়ে জঙ্গিদের মনোবল ভেঙে দিয়েছে। তাদের নতুন করে হামলা চালানোর সক্ষমতা নেই। এছাড়াও যে সব জঙ্গি ভুল বুঝে সঠিক পথে ফিরে আসতে চায় ।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ ০১ জুলাই, ২০২২)