আটলান্টিকে ফেরিতে অসুস্থ ক্রিকেটাররা
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: সূর্যের আলো ক্যারিবিয়ানে পৌঁছানোর আগেই ফেরিঘাটে টাইগাররা। নতুন এক অভিজ্ঞতার হাতছানি, প্রথমবারের মতো এক দেশে থেকে আরেক দেশে যেতে হচ্ছে ফেরীতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে সিরিজের কথাবার্তা যখন পাকা হয়, তখনই ক্যারিবিয়ান বোর্ডের প্রস্তাব ছিলো, ফেরিতে সেন্ট লুসিয়া থেকে ডমিনিকা যাবে ক্রিকেটাররা। ওই প্রস্তাব কোন যাচাই-বাছাই বা বিবেচনা ছাড়াই মেনে নিয়েছিলো বিসিবি। পাগলাটে আটলান্টিকে কি হতে পারে, কতোটা ভয়ংকর পরিস্থিতিতে পড়তে পারেন ক্রিকেটাররা; সেটা সম্পর্কে নূন্যতম যাচাই পর্যন্ত করেনি বিসিবি ক্রিকেট বোর্ড! বলা যায়, রীতিমতো বাঘের মুখে ফেলে দেয়া হয়েছে ক্রিকেটারদের।
শুরুতে হালকা মেজাজেই ছিলেন ক্রিকেটাররা। নিজেদের মধ্যে খোশগল্প, আড্ডা, ছবি তোলা চলছিলো; বলা যায় সবাই মিলেই উপভোগই করছিলেন ফেরি যাত্রা। আধ ঘন্টা পার হতে না হতেই পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। আটলান্টিকের ঢেউয়ের বিশালতা বাড়তে থাকার সাথে সাথেই, ভয়ের সাথে অস্বুস্থ বোধ করতে শুরু করেন ক্রিকেটাররা। বলা হয় ভয় নাকি দ্রুত ছড়ায়, ওই ফেরিতে ছিলেন; তাদের মধ্যে ভয় কেবল দ্রুত ছড়ায়নি বরং ভয়ের সাথে দ্রুততম সময়ে অস্বুস্থ হয়েছেন ক্রিকেটাররা।
দেড় ঘন্টার যাত্রার পর মার্টিনিক নামের এক দ্বীপে যাত্রা বিরতি, সেখানে কয়েকজন ক্রিকেটার লিজিস্টিক ম্যানেজার নাফিস ইকবালের কাছে ভয় আর শঙ্কা নিয়ে জানিয়ে দেন বাদবাকি পথটুকু তারা আর যাবেন না, তাদের জন্য ভিসার ব্যবস্থা করে সেখানেই থাকার এবং পরে বিমানে যাবার ব্যবস্থা করা হোক।। এমনই পরিস্থিতি দাঁড়ায়, না জেনে, না বুঝে, যাচাই না করে; বিসিবি কিভাবে এমন একটা যাত্রায় ক্রিকেটারদের পাঠিয়ে দিতে পারে, সেটা নিয়ে বোর্ডের প্রতি রীতিমতো রাগে-ক্ষোভে ফুঁসতে থাকেন ক্রিকেটাররা।
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে এ সময় কথা বলতে দেখা যায়। তিনি বলছিলেন, আমরা হয়তো ৪-৫ জন আছি যারা দাঁড়িয়ে আছি, আর কেউ দাঁড়িয়ে থাকার অবস্থায় নেই।‘
টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের কথার সাথে সুর মিলিয়ে বলা যায়, যে কোন সময় ভয়াবহ কিছু হতেই পারতো। আর মাঝ দড়িয়ায় কেউ যদি এর চাইতেও অনেক বেশি অস্বুস্থ হতো, তাহলে উপায় ছিলো কি? সবমিলে জীবন-মৃত্যুর এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতা পেয়েছে জাতীয় ক্রিকেট দল।
ওপরে যিনি আছেন, তিনিই হয়তো ক্রিকেটারদের আঁকুতি আর মিনতি শুনেছেন। পরের পথটুকু সাগর যতোটা উত্তাল থাকার কথা ততোটা ছিলোনা, ক্রিকেটাররাও অনেকেই ততক্ষণে আর কোন উপায় না থাকাতেই হয়তো সাহস পেয়েছেন। আর সেই সাহসের কেন্দ্রে ছিলেন সাকিব আল হাসান। একমাত্র ক্রিকেটার, ফেরি যাত্রার পুরো সময়ে যিনি স্বাভাবিক ছিলেন। হয়তোবা ভেতরে ভেতরে কিছু হলেও, বাইরে সেটার প্রকাশ ছিলোনা।
ভয়াবহ আর সারাজীবন মনে রাখার মতো এক যাত্রা শেষে হয়েছে, সবমিলে ঘন্টা পাঁচেক। এবার বিসিবিকে প্রশ্ন করার পালা, কোন বিবেচনাতে তারা এমন একটা ভ্রমণে সায় দিয়েছিলন? নাকি যারা এসবের দেখভাল করেন, তাদের আসলে এসবে কিছু যায় আসে না।
(দ্য রিপোর্ট/মাহা/ ০১ জুলাই, ২০২২)