দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিটের জন্য রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে সবচেয়ে বেশি ভিড় জমেছিল গত ৩ জুলাই। সেদিন দেওয়া হয়েছিল ৭ জুলাইয়ের (বৃহস্পতিবার) ট্রেনের আগাম টিকিট। অন্যদিকে বাস কাউন্টারগুলোতেও এই দিনের টিকিট খুঁজেছে সবচেয়ে বেশি মানুষ। একইভাবে অনলাইনেও বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ৭ জুলাইয়ের বাস, ট্রেনের টিকিটের চাহিদা ছিল সবচেয়ে বেশি।

আজ ৭ জুলাই (বৃহস্পতিবার) সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস। এরপর ৮ জুলাই (শুক্রবার) সাপ্তাহিক ছুটির দিন। তারপর ৯, ১০, ১১ জুলাই ঈদুল আজহার ছুটি। ফলে বৃহস্পতিবার অফিস শেষ করে ঈদের ছুটি কাটাতে ছুটবে মানুষ। সেই হিসাবে আজ বেশিরভাগ মানুষ ঢাকা ছেড়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের জন্য চলে যাওয়ার কথা। বিষয়টি এই নির্দিষ্ট দিনের অগ্রিম টিকিট বিক্রির সময়ই আঁচ করা গিয়েছিল।

রাজধানীর একটি আইটি কোম্পানিতে চাকরি করেন হাবিবুর রহমান। বৃহস্পতিবার রাতের রাজশাহীগামী পদ্মা ট্রেনের অগ্রিম টিকিট কাটার জন্য গত ২ জুলাই রাত ১১টায় লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। ৩ জুলাই সকাল ১০টার দিকে কাঙ্ক্ষিত টিকিট হাতে পেয়েছিলেন তিনি। সেই টিকিট দিয়েই আজ রাতে পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে ঢাকা ছাড়বেন।

হাবিবুর রহমান বলেন, নিজ গ্রাম, আপন মানুষদের কাছে যেতে না পারলে ঈদ পূর্ণতা পায় না। তাই শত ভোগান্তি-বিড়ম্বনাকে সঙ্গী করে ঈদে আমাদের বাড়ি ফেরা। খুব ভোগান্তি হয়েছিল টিকিট পেতে, কিন্তু সেই টিকিটে আজ বাড়ি ফেরার দিন, ঈদের আনন্দ শুরু হওয়ার দিন। আজ অধিকাংশ চাকরিজীবীর ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস। আজ অফিস শেষে সবাই বাড়ি ফিরবে, তাই আজকের টিকিটেরই সবচেয়ে বেশি চাহিদা ছিল। কোরবানির ঈদে সবাই একটু আগেভাগেই বাড়ি যেতে চায়, কারণ কোরবানির পশু কেনা থেকে শুরু করে নানা কাজ থাকে।

ঢাকা থেকে রংপুরগামী নাবিল পরিবহনের টিকিট আগেই সংগ্রহ করে রেখেছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী সাজ্জাদ হোসেন। স্ত্রী-সন্তানসহ আজ বাড়ি ফিরবেন তিনি। আলাপকালে তিনি জানান, ঈদের আগে বৃহস্পতিবার শেষ কর্মদিবস হওয়ায় সবচেয়ে বেশি চাহিদা ছিল ৭ জুলাইয়ের টিকিটেরই। কারণ আমাদের মতো মানুষদের বছরে খুব কমই বাড়ি যাওয়া হয়, সেখানে যদি একদিন বাড়িতে বেশি থাকা যায় সেটাই আনন্দের। খুব চেষ্টা করে, দীর্ঘসময় অপেক্ষা করে টিকিট পেয়েছি। আজ শেষ অফিস, কোনোমতে অফিস শেষ করেই বাড়ির উদ্দেশে রওনা হব। চাকরিজীবীদের সিংহভাগই আজ ঢাকা ছাড়বে।

কল্যাণপুরে দেশ ট্র‍্যাভেলসের কাউন্টারে বুধবার কথা হয় কাউন্টারের দায়িত্বে থাকে আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে। তিনি জানান, ঈদযাত্রার টিকিট ছাড়ার শুরু থেকেই ৭ জুলাই বিকেলের ও পরের বাসগুলোর চাহিদা বেশি ছিল। আগেভাগেই ৭ জুলাইয়ের বিকেল থেকে মধ্য রাতের বাসের টিকিটগুলো বিক্রি হয়েছে। এই দিনই সবচেয়ে বেশি মানুষ ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে যাবে।

গাবতলীতে গ্রামীণ ট্র‍্যাভেলসের কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা ফয়সাল আহমেদ বুধবার বলেন, ৭ জুলাইয়ে টিকিট যেমন সশরীরে কাউন্টার থেকে বিক্রি হয়েছে, তেমনি অনলাইন থেকেও বিক্রি হয়েছে। টিকিট কিনতে আসা যাত্রীরা প্রথমেই খুঁজেছে ৭ জুলাইয়ের টিকিট।

কমলাপুরে রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টার থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, যাত্রীদের মধ্যে এই দিনের টিকিটের চাহিদা ছিল সবচেয়ে বেশি। অন্য দিন অগ্রিম টিকিটের লাইনে যত টিকিটপ্রত্যাশী দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেছিল, এর চেয়ে অনেক বেশি মানুষ লাইনে দাঁড়িয়েছিল গত ৩ জুলাই। কারণ সেদিন দেওয়া হয়েছিল বৃহস্পতিবারের (৭ জুলাইয়ের) টিকিট। ওই দিন টিকিটপ্রত্যাশীদের লাইন কাউন্টারের সামনে থেকে বাইরের ফাঁকা জায়গা পূর্ণ হয়ে সিঁড়ি বেয়ে এঁকে বেঁকে অনেক দূর পর্যন্ত চলে গিয়েছিল। সার্বিক বিশ্লেষণ থেকে ধারণা করা যায়, আজ বিকেলের পর থেকে রাত পর্যন্ত যেসব ট্রেন ছেড়ে যাবে সেই ট্রেনগুলোতেই বেশিরভাগ মানুষ ঢাকা ছেড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঈদ করতে যাবেন।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ ০৭ জুলাই, ২০২২)