দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ডিজেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন স্থগিত করে আগামীকাল থেকে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ে যাচ্ছে দেশ। দিনে এক থেকে দেড় ঘণ্টা, কোথাও কোথাও দুই ঘণ্টা লোডশেডিং হবে।

সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী, মুখ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সিনিয়র সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকের পর বিভিন্ন এলাকার জন্য লোডশেডিংয়ের শিডিউল প্রকাশ করেছে ঢাকা শহর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)।

কোন এলাকায় কখন লোডশেডিং তার সম্ভাব্য তালিকা দেখতে ক্লিক করুন এখানে।

সভা শেষে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, এখন থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সারাদেশে একদিন পেট্রল পাম্প বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে কীভাবে, কোন পদ্ধতিতে বন্ধ রাখা হবে, সেটা পরে জানানো হবে। বন্দর এলাকায় সপ্তাহে দুই দিন পেট্রল পাম্প বন্ধ রাখার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে।

আগামীকাল থেকে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের বিষয়ে তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, এক থেকে দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি হবে। দিনে এক থেকে দেড় ঘণ্টা, কোথাও কোথাও দুই ঘণ্টা লোডশেডিং হবে।

ওই সভা শেষে আরও জানানো হয়, মসজিদে এসি ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। রাত ৮টার পর বন্ধ থাকবে দোকানপাট, শপিংমল। সরকারি-বেসরকারি সব অফিসের বৈঠক ভার্চুয়ালি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, ‘আগামীকাল থেকে চালু হবে সূচি অনুযায়ী লোডশেডিং। প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং রাখা হয়েছে সূচিতে। ফলে সারা দিনে যেকোনো এক ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকবে আমাদের গ্রাহকরা।’

ঢাকা ও আশপাশের ৩৬টি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ডিপিডিসি। ঢাকার মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি বিদ্যুৎসেবা দিচ্ছে: আদাবর, আজিমপুর, বনশ্রী, বাংলাবাজার, বংশাল, বাসাবো, ডেমরা, ধানমন্ডি, ঝিগাতলা, জুরাইন, কাকরাইল, কামরাঙ্গীরচর, খিলগাঁও, লালবাগ, মানিকনগর, মাতুয়াইল, মগবাজার, মতিঝিল, মুগদাপাড়া, নারিন্দা, পরীবাগ, পোস্তগোলা, রাজারবাগ, রমনা, সাতমসজিদ, শ্যামলী, শেরেবাংলা নগর, শ্যামপুর, স্বামীবাগ ও তেজগাঁও এলাকায়।

আর নারায়ণগঞ্জের মধ্যে আছে: ফতুল্লা, কাজলা, পূর্ব ও পশ্চিম নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ ও শীতলক্ষ্যা।

তবে গ্রাহকরা সাশ্রয়ী হলে লোডশেডিং শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব বলেও মনে করেন ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাই সবাইকে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বিকাশ দেওয়ান বলেন, ‘ভোক্তারা সাশ্রয়ী হলে লোডশেডিং শূন্যে নিয়ে আসা সম্ভব। কোনো ঘরে যদি ১০টি লাইট থাকে, প্রয়োজন ছাড়া সবগুলো যদি ব্যবহার না করে, তাহলেই বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। অপ্রয়োজনে বিদ্যুৎ খরচ না করলেও লোডশেডিং না দিয়েও গ্রাহককে সেবা দেয়া সম্ভব।’

জ্বালানি তেল ও গ্যাসের আমদানি মূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকার রয়েসয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা বিদ্যুতের যাওয়া-আসার স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে।

কয়েক বছর ধরে সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের অভ্যাসের কারণে বিদ্যুতের যাওয়া-আসা মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে, সামাজিকমাধ্যমে অসন্তোষের কথা তুলেও ধরছেন হাজারো মানুষ।

সরকার বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্য, বিশেষ করে এলএনজির দামে লাফ, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কয়লা সরবরাহে বিঘ্নের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমাতে হয়েছে।

পাওয়ার সেলের তথ্যানুযায়ী, দেশে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১৫ হাজার মেগাওয়াট। সেই জায়গায় উৎপাদন হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৩ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ ১৮ জুলাই, ২০২২)