দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: জাতিসংঘের তত্বাবধানে ইউক্রেনের শস্য রপ্তানির জন্য কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো খুলে দিতে একটি চুক্তি করেছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। আজ শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত আটটার দিকে ঐতিহাসিক এ চুক্তি সম্পন্ন হয়। এর ফলে তিনটি মূল ইউক্রেনীয় বন্দর ওদেসা, চেরনোমর্স্ক ও ইউঝনি থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাণিজ্যিক খাদ্য রপ্তানির পথ খুলে যাবে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। 

এই চুক্তি সইয়ের বিষয়ে তুরস্ক ও জাতিসংঘ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ইউক্রেনে রুশ হামলার পর বিশ্বজুড়ে যে খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে, এ চুক্তির ফলে তা কেটে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিশ্বের বৃহত্তম খাদ্যশস্য রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম রাশিয়া ও ইউক্রেন। ইস্তাম্বুলে গিয়ে রাশিয়ার হয়ে চুক্তিতে সই করেন তাদের প্রতিরক্ষামন্ত্রী শোইগু। ইউক্রেনের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন সে দেশের অবকাঠামো বিষয়ক মন্ত্রী ওলেকসান্দার কুবরাকভ। এ সময় জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান উপস্থিত ছিলেন।

চুক্তি সই নিয়ে এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, চুক্তিটি ইউক্রেন থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে খাদ্য রপ্তানির পথ খুলে দেবে এবং দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে থাকা উন্নয়নশীল দেশগুলো এ থেকে উপকৃত হবে। চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়নের জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলছেন, চুক্তি অনুযায়ী আজ শনিবার থেকেই জাহাজ চলাচল শুরু হবে।

চুক্তিতে যা আছে
কৃষ্ণসাগরের পূর্বপরিকল্পিত পথে পণ্যবাহী জাহাজ যাত্রা করার আগে ইউক্রেনীয় বন্দরগুলোতে শস্য ভর্তির কাজ নিরীক্ষণ করবে তুরস্ক, ইউক্রেন ও জাতিসংঘের কর্মীদের একটি দল। ইউক্রেনের বন্দরগুলোতে পেতে রাখা মাইন এড়াতে ইউক্রেনীয় নাবিকেরা জাহাজ মানচিত্র ব্যবহার করে শস্য পরিবহনকারী বাণিজ্যিক জাহাজগুলো নিয়ে যাবে। জাহাজগুলো কৃষ্ণসাগর অতিক্রম করে তুরস্কের বসফরাস প্রণালির দিকে যাবে। জাতিসংঘ, ইউক্রেন, রাশিয়া ও তুরস্কের প্রতিনিধিরা ইস্তাম্বুলের একটি যৌথ সমন্বয় কেন্দ্র থেকে জাহাজ পর্যবেক্ষণ করবেন। ইউক্রেনে প্রবেশকারী জাহাজগুলোও একইভাবে যৌথ সমন্বয় কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে পরিচালনা করা হবে, যাতে তারা ইউক্রেনে অস্ত্র বহন করতে না পারে। রাশিয়া ও ইউক্রেন অত্যাবশ্যক শস্য পরিবহন নিযুক্ত কোনো বাণিজ্যিক জাহাজ বা বন্দরগুলোতে আক্রমণ করবে না।

কাটবে খাদ্যসংকট
গুতেরেস বলেন, ‘দুটি যুদ্ধরত দেশের মধ্যে এ ধরনের একটি চুক্তি ঐতিহাসিক। এটি বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম স্থিতিশীল করতে সাহায্য করবে। বিশেষত, আমরা যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছি, তা তিনটি মূল ইউক্রেনীয় বন্দর ওদেসা, চেরনোমর্স্ক ও ইউঝনি থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাণিজ্যিক খাদ্য রপ্তানির পথ খুলে দেবে।’

আজ চুক্তি সই করার আগে কিয়েভের পক্ষ থেকে মস্কোর সঙ্গে সরাসরি কোনো চুক্তি সইয়ের সম্ভাবনা নাকচ করে দেওয়া হয়। খাদ্যশস্য রপ্তানি নিয়ে দুই দেশে চুক্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছালেও, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রুশ বাহিনীর হামলা জোরদার হয়েছে। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে শত্রুতা ও অবিশ্বাস এখনো অনেক গভীর। এ পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোলিয়াক বলেন, জাতিসংঘের সঙ্গে শস্য রপ্তানি নিয়ে চুক্তি ছাড়া রাশিয়ার সঙ্গে অন্য কোনো নথিতে তাঁরা সই করবেন না। তিনি বলেন, উসকানির ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক সামরিক জবাব দেবে ইউক্রেন।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রুশ বাহিনী। কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো দিয়ে ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রপ্তানি বন্ধ করেছে রাশিয়া। এতে বৈশ্বিক খাদ্যসরবরাহব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়েছে। এর পাশাপাশি রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা জারির ফলে বিশ্বে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। খাদ্য ও জ্বালানির দাম ব্যাপক বেড়ে গেছে।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাস একটি সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, চুক্তির অধীনে ইউক্রেনের বৃহত্তম রপ্তানি বন্দর ওদেসাসহ তিনটি বন্দর উন্মুক্ত করা হবে। গত সপ্তাহে কূটনীতিকেরা বলেছিলেন, চুক্তির আওতায় পোতাশ্রয়ে শস্যের চালানগুলো যৌথভাবে তল্লাশি করে দেখা হবে। রাশিয়ার উদ্বেগ, ইউক্রেনে অস্ত্র চোরাচালানের জন্য নৌপথ ব্যবহার হতে পারে।

ওদেসা বন্দরে দুই কোটি টন শস্য আটকে রয়েছে। এ ছাড়া রুশ সেনাদের বাধার মুখে বেশ কিছু জাহাজ আটকে রয়েছে। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু বলেছেন, বর্তমান খাদ্যসংকট দূর করতে এটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

দ্য রিপোর্ট/ টিআইএম/