৪ গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে মিয়ানমারের সামরিক কর্তৃপক্ষ
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মিলিশিয়াদের লড়াইয়ে সহায়তা করার দায়ে এ ৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল, জানুয়ারিতে রুদ্ধদ্বার বিচারে তাদের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়।
সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ চালাতে সহায়তা করার দায়ে অভিযুক্ত চার গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে মিয়ানমারের সামরিক কর্তৃপক্ষ।
সোমবার দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম এ খবর দিয়েছে। এটি কয়েক দশকের মধ্যে মিয়ানমারে প্রথম মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গত বছর এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে বিরোধীদের ওপর নিষ্ঠুর দমনপীড়ন চালানো সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মিলিশিয়াদের লড়াইয়ে সহায়তা করার দায়ে ওই চার জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল, জানুয়ারিতে রুদ্ধদ্বার বিচারে তাদের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়।
ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তা কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত মিয়ানমারের ছায়া প্রশাসন ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) এ মৃত্যুদণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে।
মিয়ানমারে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আন্দোলনকারীদের আপিল খারিজ
মিয়ানমারে ফাঁসির অপেক্ষায় থাকা গণতন্ত্রপন্থি নেতাদের বাঁচানোর আকুতি
জিমি নামে পরিচিত গণতান্ত্রিক আন্দোলনকারী কেয়াও মিন উ।
এনইউজির প্রেসিডেন্ট দপ্তরের মুখপাত্র কিয়াও জ রয়টার্সকে পাঠানো এক বার্তায় বলেছেন, “অত্যন্ত দুঃখিত। ঘটনা এমন হয়ে থাকলে জান্তার নিষ্ঠুরতাকে তীব্র ভাষায় নিন্দা জানাচ্ছি। বিশ্ব সম্প্রদায়কে তাদের নিষ্ঠুরতার শাস্তি দিতে হবে।”
গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার সংবাদপত্র জানিয়েছে, যাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে তাদের মধ্যে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকারী কেয়াও মিন উ, যিনি জিমি নামে বেশি পরিচিত এবং সাবেক আইনপ্রণেতা ও হিপ-হপ শিল্পী ফিও জেয়া থ রয়েছেন।
কেয়াও মিন উ (৫৩) এবং ফিও জেয়া থ (৪১) মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চির ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিলেন। দেশটির এ দুই বিশিষ্ট গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকারী তাদের মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করলেও জুনে তা খারিজ হয়।
অপর যে দুজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে তারা হলেন হ্লা মায়ো অং ও অং থুরা জ।
ফিও জেয়া থ-র স্ত্রী থাজিন নিউন্ত অং জানিয়েছেন, তার স্বামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়ে তাকে কিছু জানানো হয়নি।
গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসবিরোধী আইন ও দণ্ডবিধিতে ওই চার জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল এবং কারাগারের প্রক্রিয়া অনুযায়ী তাদের শাস্তি কার্যকর করা হয়েছে।
তাদের মৃত্যুদণ্ড কীভাবে কার্যকর করা হয়েছে প্রতিবেদনে তা জানানো হয়নি। এর আগে মিয়ানমারে মৃত্যুদণ্ডগুলো ফাঁসির মাধ্যমে কার্যকর করা হয়েছে।
আন্দোলনকারী গোষ্ঠী অ্যাসিট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন অব পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি) জানিয়েছে, এর আগে ১৯৮০ দশকের শেষ দিকে মিয়ানমারে শেষবার বিচারিক মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল।
এবারের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়ে মন্তব্যের জন্য রয়টার্সের করা টেলিফোন কলে একজন সামরিক মুখপাত্র তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেননি।
গত মাসে দেশটির সামরিক মুখপাত্র জ মিন তুন এ মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে কথা বলে এক নায্য ও অনেক দেশেই এট ব্যবহৃত হয় বলে দাবি করেছিলেন।
এক টেলিভিশন সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, “নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বাদে তাদের কারণে অন্তত ৫০ জন নিরপরাধ বেসামরিক প্রাণ হারিয়েছে। কীভাবে আপনারা বলেন, এখানে ন্যায় বিচার হয়নি।”
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের এ খবরে বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া হয়েছে। জাতিসংঘ এর নিন্দা জানিয়ে একে জনগণের মধ্যে ‘ভয় জাগানোর জন্য জঘন্য প্রচেষ্টা’ বলে অভিহিত করেছে