দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি আজ মঙ্গলবার তাইওয়ানে যেতে পারেন। তাইওয়ানের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও একজন মার্কিন কর্মকর্তা এ কথা জানিয়েছেন। পেলোসির সফর নিয়ে জো বাইডেন প্রশাসন সতর্ক করলেও তা উপেক্ষা করেই তিনি তাইওয়ান সফরে যাচ্ছেন।

 

এদিকে পেলোসি তাইওয়ান সফর করতে পারেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটির প্রধানমন্ত্রী সু সেং চ্যাং। সাংবাদিকেরা পেলোসির তাইওয়ান সফর নিয়ে জানতে চাইলে আজ তিনি বলেন, বিদেশি অতিথিদের স্বাগত জানায় তাইওয়ান। এমন অতিথি এলে তাঁদের স্বাগত জানানোর সবচেয়ে ভালো আয়োজনই করা হবে।

পেলোসির তাইওয়ান সফরের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে ক্ষুব্ধ চীন কয়েক দফায় যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করেছে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এমনকি চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ‘আগুন নিয়ে না খেলার’ হুমকি দিয়েছেন। সর্বশেষ গতকাল সোমবার ও আজ সামরিক উপায়ে এর জবাব দেওয়ার হুমকিও দিয়েছে বেইজিং।

তাইওয়ানের একজন শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, আজ তাইওয়ানে পৌঁছানোর পর রাতে সেখানে থাকবেন পেলোসি। তবে পেলোসি ঠিক কখন তাইপে পৌঁছাবেন, সে সম্পর্কে স্পষ্ট কিছুই জানা যায়নি। এদিকে বাইডেন প্রশাসনের একজন কর্মকর্তাও পেলোসির আজ তাইওয়ানে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

পেলোসির সম্ভাব্য সফরকে কেন্দ্র করে তাইওয়ান প্রণালিতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়েছে। গতকাল ও আজ তাইওয়ান প্রণালির মধ্যবর্তী অঘোষিত সীমানায় চীনের একাধিক যুদ্ধবিমান উড়তে দেখা গেছে। ওয়াশিংটনও তাইওয়ানের উত্তর উপকূলে চারটি যুদ্ধজাহাজ ও একটি বিমানবাহী জাহাজ পাঠিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

গত রোববার সিঙ্গাপুরে পৌঁছানোর মধ্য দিয়ে পেলোসির এশিয়া সফর শুরু হয়েছে। সিঙ্গাপুর সফর শেষে এখন মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে কংগ্রেসের ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলও রয়েছে। মালয়েশিয়া থেকেই আজ পেলোসি তাইওয়ানে যাবেন বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

সূত্র বলেছে, তাইওয়ান প্রণালিতে চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে একটি অনানুষ্ঠানিক সীমানা রয়েছে। গতকাল থেকে সেই সীমানা ঘেঁষে চীনের একাধিক যুদ্ধবিমানের মহড়া দেখা যাচ্ছে। বিষয়টি পর্যবেক্ষণে তাইওয়ানও যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে। অবশ্য তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এখনো কিছুই জানায়নি।

গতকাল চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। তিনি যদি তাইওয়ান সফর করেন, তাহলে এর রাজনৈতিক পরিণতি হবে গুরুতর। তাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চীনের যেকোনোবারের হুমকির চেয়ে এবারের হুমকি কঠোর।

বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারাও পেলোসির এখন তাইওয়ান সফরে যাওয়া উচিত নয় বলে পরামর্শ দিয়েছিলেন। মূলত পেলোসি তাইওয়ান সফর করলে বেইজিংয়ের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ থেকেই তাঁকে সতর্ক করা হয়। কিন্তু চীনবিরোধী অবস্থান নিয়ে উচ্চকিত পেলোসি সব সতর্কতা উপেক্ষা করেই তাইওয়ানে যাচ্ছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ওই কর্মকর্তা আরও জানিয়েছেন, পেলোসির তাইওয়ান সফর নিরাপদ করতে ২৪ ঘণ্টা কাজ করছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা। তাইওয়ান ও এর আশপাশে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নজরদারি চলছে। সেখানে চীনা সামরিক বাহিনীর যেকোনো ধরনের গতিবিধি ও ততপরতা নিয়ে কাজ করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।

এদিকে পেলোসির তাইওয়ান সফরকে কেন্দ্র করে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করে বলেছে দেশটি পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তুলছে।