পুলিশের তেল বরাদ্দ কমেছে
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক:বাংলাদেশ পুলিশের সব ইউনিটের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ জ্বালানি তেল কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। মূলত জ্বালানি তেল সাশ্রয় করতে সরকারি আদেশ অনুযায়ী এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে পুলিশের নিয়মিত টহল ও আসামি গ্রেফতার অভিযান কমেছে। তবে পুলিশ জানিয়েছে, তারা আভিযানিক গাড়ির তেল সমন্বয় করে বাকি সব ঠিক রাখার চেষ্টা করছে।
পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশ সুপার (এসপি) পদের কর্মকর্তারা পূর্বে ৪০০-৪৫০ লিটার জ্বালানি তেল পেতেন তা কমিয়ে এখন ২০০-২৫০ লিটারে করা হয়েছে। এছাড়া, যেসব গাড়িতে আগে ৩০০-৪০০ লিটার বরাদ্দ ছিল তা কমিয়ে ২০০ লিটার করা হয়েছে। তেল সংকটের কারণে অভিযানও আগের তুলনায় কমেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিভিন্ন থানা এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাড়ির জ্বালানি তেল আগের তুলনায় কোথাও অর্ধেক করে দেওয়া হয়েছে, কোথাও ২০-২৫ বা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হয়েছে।
ওয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির হোসেন হাওলাদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা আগে ৪৫০ লিটারের মতো তেল পেতাম। এখন একটু কমানো হয়েছে। শুধু অফিসিয়াল কাজ নয়, আভিযানিক অনেক কাজও রয়েছে, সেগুলো গাড়ি নিয়ে করতে হয়। আমরা বর্তমান বরাদ্দ দিয়েই সেটা করার চেষ্টা করছি। বরাদ্দের বাইরে তেল নেওয়ার সুযোগ নেই।’
ডিএমপির পরিবহন বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জোবায়েদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ২৫ শতাংশ জ্বালানি হ্রাসের চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে ডিএমপির সব ইউনিটকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একমাস গেলে বলতে পারবো কত শতাংশ সাশ্রয় হয়েছে।’
জ্বালানি তেল কমিয়ে দেওয়ায় পুলিশের আভিযানিক কার্যক্রম কমবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আভিযানিক কার্যক্রম ঠিক রেখে সব সমন্বয় করার চেষ্টা করছি।’
পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জ্বালানি তেলের বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ায় অভিযান পরিচালনায় কিছুটা ছন্দপতন হয়েছে। আসামি গ্রেফতার ও মাদকবিরোধী অভিযানও কিছুটা কমেছে।
গত ২১ জুলাই সরকারি ও আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানকে ২০-২৫ শতাংশ কম জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পরিপত্র জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।
এর আগে ২০ জুলাই পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের কিছু ব্যয় সাশ্রয় করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সিদ্ধান্ত নেয়। তার আলোকেই এই পরিপত্র জারি করা হয়।
পরিপত্রে বলা হয়, সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ, রাষ্ট্রমালিকানাধীন কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের ক্ষেত্রে এই পরিপত্র প্রযোজ্য।
পরিপত্রে আরও বলা হয়, ‘পেট্রল, অয়েল ও লুব্রিকেন্ট এবং গ্যাস ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে।’
বিভিন্ন জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা পুলিশেরও জ্বালানি সাশ্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছে।
জ্বালানি তেল সাশ্রয়ের উদ্যোগ নেওয়ার পর বাংলাদেশ পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এরও অভিযান কমেছে বলে জানা গেছে।
পিবিআইর সদর দফতরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু ইউসুফ বলেন, ‘আমরা আমাদের সব ইউনিটকে জ্বালানি তেল সাশ্রয়ের নির্দেশনা দিয়েছি। সেই অনুযায়ী সবাই কাজ করছেন। সব কার্যক্রম আগের মতোই রয়েছে।’
চলতি অর্থবছরের পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয় পেট্রল, অয়েল ও লুব্রিকেন্টের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা।